রাজ্যে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে এক ধাপ এগোল সরকার। সব কিছু ঠিক ভাবে চললে ২০২৪-এর শিক্ষাবর্ষ থেকেই রাজ্যে ৪ বছরের স্নাতক পাঠক্রম চালু হয়ে যাবে। চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকেই এই নিয়ে আগাম প্রস্তুতি শুরু করে দিতে চলেছে রাজ্যের শিক্ষা দফতর। সোমবারই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ কলেজগুলির অধ্যক্ষদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য আশিস চট্টোপাধ্যায়। এই বৈঠক শুরু হওয়ার পর তাতে যোগ দেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসও, যিনি পদাধিকারবলে রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্যও বটে। বৈঠক থেকে বেরিয়ে বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষরা জানান, পরের শিক্ষাবর্ষ থেকেই ৩ বছরের পরিবর্তে ৪ বছরের স্নাতক পাঠক্রম চালু করা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তরফে নয়া বিধির প্রয়োগ কার্যকর করার কথা বলা হলে অধ্যক্ষদের একাংশ পরিকাঠামোর অভাবের কথা জানান। নতুন ব্যবস্থা চালু করার আগে বেশ কিছু কর্মশালা আয়োজন করার প্রস্তাব দেন কেউ কেউ। সূত্রের খবর, বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আশ্বাস মিলেছে। রাজ্যের শিক্ষা দফতরও এই বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছে।
৩ বছরের পরিবর্তে ৪ বছরের স্নাতক পাঠক্রম চালু করা নিয়ে এর আগে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেছিলেন, ‘‘এই নিয়ে কোনও কথা বলব না। চার বছরের স্নাতক কোর্সের বিষয়ে রাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের নিয়ে কমিটি গঠন করব। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে এই নিয়ম কী ভাবে কার্যকর করা হতে পারে, তা নিয়ে সেই কমিটি মত দেবে। তার পর এই বিষয় নিয়ে বলতে পারি।’’ সেই মোতাবেক জাতীয় শিক্ষানীতি (এনইপি)-র প্রয়োগ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়ার জন্য কমিটি গঠন করে রাজ্যের শিক্ষা দফতর। ৬ সদস্যের এই কমিটির প্রধান করা হয় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাসকে। এ ছাড়াও কমিটিতে রাখা হয় বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দেবনারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়, উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ওমপ্রকাশ মিশ্র, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নির্মাল্য নারায়ণ চক্রবর্তী, রাজ্যের উচ্চ শিক্ষা কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান কৌশিকী দাশগুপ্ত এবং কাউন্সিলের যুগ্ম সম্পাদক (শিক্ষা) মৌমিতা ভট্টাচার্যকে। স্থির হয়, ৪ সপ্তাহ পর এই বিশেষজ্ঞ কমিটি তাদের মতামত জানিয়ে উচ্চ শিক্ষা দফতরকে রিপোর্ট পেশ করবে। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতেই জাতীয় শিক্ষানীতি নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ করার কথা রাজ্যের। ওই কমিটির রিপোর্ট প্রকাশের আগেই ৪ বছরের পাঠক্রম নিয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্তে আসতে চলেছে রাজ্য।
৪ বছরের স্নাতক পাঠক্রম নিয়ে পড়ুয়া, অভিভাবক এবং শিক্ষক মহলে নানা বিভ্রান্তি রয়ে গিয়েছে। এই আবহে সোমবারও রাজ্যপাল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকার সময় জাতীয় শিক্ষানীতি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ দেখায় ছাত্র সংগঠন ডিএসও। কিছু সময়ের জন্য আটকে যায় রাজ্যপালের গাড়ি। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতর ঢোকেন তিনি। এই আবহে ৪ বছরের স্নাতক পাঠক্রম নিয়ে রাজ্য প্রশাসন কীভাবে এগোয়, তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের কৌতূহল।