প্রতীকী ছবি।
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ১২ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা দামের গাড়ি মাসিক ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকা ভাড়ায় পুলিশকর্তাদের ব্যবহার করার কথা বলে জানাচ্ছেন কয়লা পাচারের তদন্তে নামা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি-র অফিসারেরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, প্রতিদিন পুলিশের এই ধরনের ভাড়ার গাড়ির জন্য আট থেকে দশ লিটার জ্বালানি বরাদ্দ। অথচ রাজ্যের বিভিন্ন কমিশনারেট ও জেলায় এক শ্রেণির পুলিশকর্তা ৪০-৪৫ লক্ষ টাকার গাড়ি যথেচ্ছ ব্যবহার করতেন বলে অভিযোগ। কাগজে-কলমে দেখা গিয়েছে, ওই সব গাড়ি ভাড়া দেওয়া হয়েছে ন্যূনতম দরে।
গরু পাচার কাণ্ডে অভিযুক্ত দোর্দণ্ডপ্রতাপ তৃণমূল নেতা অনুব্রত (কেষ্ট) মণ্ডলের বোলপুরের চালকলে পাওয়া কয়েকটি বহুমূল্য গাড়ি যেমন তদন্তকারীদেরও বিস্মিত করেছে, একই ভাবে ইডি-র প্রশ্ন, রাজ্যের কোনও কোনও পুলিশকর্তা মহার্ঘ গাড়ি চড়তেন কী ভাবে? কয়লা মাফিয়াদের সঙ্গে যোগসূত্রে সেই সব পুলিশকর্তার ব্যবহৃত বিলাসবহুল গাড়ির খোঁজে নেমেছে ইডি।
তদন্তকারী সংস্থা সূত্রের খবর, মাফিয়াদের সঙ্গে যোগাযোগের সবিস্তার তথ্য পেতে ২২ থেকে ৩১ অগস্ট এ রাজ্যের আট পুলিশকর্তাকে দিল্লিতে ইডি-র সদর দফতরে তলব করা হয়েছে। এটা দ্বিতীয় দফা। প্রথম দফায়, ওই পুলিশকর্তাদের সম্পত্তির হিসাব ও আয়করের নথি জমা দিতে বলা হয়েছিল। তখন কয়লা পাচার নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয় সংশ্লিষ্ট পুলিশকর্তাদের। কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্তকারীদের অভিযোগ, ওই সব পুলিশকর্তার জমা দেওয়া হিসাবে নানান গরমিল রয়েছে। সেই জন্য ফের নোটিস দিয়ে হিসাবের আরও নথি-সহ হাজির হতে বলা হয়েছে।
তদন্তকারীরা জানান, কয়লা পাচার কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত অনুপ মাজি ওরফে লালা-সহ বিভিন্ন কয়লা মাফিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বীরভূম, আসানসোল এবং পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান জেলায় ইস্টার্ন কোলফিল্ড লিমিটেড (ইসিএল) ও রাজ্য পুলিশের কর্তাদের একাংশের যোগসাজশের বেশ কিছু তথ্যপ্রমাণ তাঁদের হাতে এসেছে। সম্প্রতি কয়লা পাচারের অভিযোগে ইসিএলের কয়েক জন প্রাক্তন ও বর্তমান আধিকারিককে গ্রেফতারও করেছে সিবিআই।
ইডি-র দাবি, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বীরভূম, আসানসোল, দুর্গাপুর এবং পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান এলাকার কমিশনারেট ও জেলা পুলিশের কিছু কর্তা বিলাসবহুল গাড়ি ব্যবহার করতেন। এমনকি বদলি হয়ে যাওয়ার পরেও কোনও কোনও পুলিশকর্তা এখনও সেই সব বিলাসবহুল গাড়ি ব্যবহার করছেন ব্যক্তিগত ভাবে। তদন্তকারীদের দাবি, কয়েক মাস আগে লালা-ঘনিষ্ঠ গুরুপদ মাজি-সহ তিন কয়লা মাফিয়াকে গ্রেফতার করা হয়। তার পরেই কিছু পুলিশকর্তার বিলাসবহুল গাড়ির ব্যবহারের বিষয়টি সামনে আসে। ইডি জানাচ্ছে, কোথাও কোথাও সেই সব বিলাসবহুল গাড়ি রয়েছে পুলিশকর্তাদের চালক বা আত্মীয়দের নামে। কম ভাড়ায় কোন ব্যবসায়ী বহুমূল্য গাড়ি পুলিশকর্তাদের ভাড়া দিয়েছিলেন অথবা গাড়িচালক কী ভাবে অত দামি বিলাসবহুল গাড়ি কিনেছিলেন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তদন্তকারীদের অনুমান, কর্তাদের ‘খুশি’ রাখতে কয়লা মাফিয়ারাই এই ধরনের গাড়ি বাজারদরের থেকে অনেক কম ভাড়ায় পুলিশকর্তাদের ব্যবহার করতে দিত। অভিযোগ, কয়লা পাচারের লভ্যাংশের টাকায় কোথাও কোথাও বিলাসবহুল গাড়ি কিনে দেওয়া হত পুলিশকর্তাদের গাড়িচালক বা আত্মীয়দের নামে। সংশ্লিষ্ট কর্তাদের সম্পত্তির হিসাবের নথি যাচাইয়ের সঙ্গে সঙ্গে এ বার মহার্ঘ গাড়ির বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। প্রয়োজনে তদন্তকারী সংস্থার তরফে ওই সব গাড়ির মালিকানা এবং ভাড়া নেওয়ার নথি রাজ্য সরকারের কাছে চাওয়া হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর।
তদন্তকারী সংস্থার এক কর্তা বলেন, ‘‘কয়লা পাচারে ‘প্রিভেনশন অব মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট’ বা পিএমএলএ-র ধারায় মামলা করা হয়েছে। সে-ক্ষেত্রে আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন সম্পত্তি এবং বেআইনি লেনদেনের বিষয়টি তদন্তের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাই তা যাচাই করা হচ্ছে।’’