তদন্তকারীদের মতে, বিদেশভ্রমণে প্রায় ৫ কোটি টাকা খরচ করেছে মানিক (মাঝে) এবং তাঁর পরিবার। ছবিতে ডান দিকে শতরূপা ভট্টাচার্য। বাঁ দিকে ছেলে শৌভিক। — ফাইল ছবি।
বিদেশে ঘুরেছেন মানিক ভট্টাচার্যের স্ত্রী শতরূপা ভট্টাচার্য। সেই টাকার উৎস পাওয়া যাচ্ছে না। কোথা থেকে এল সেই টাকা? মঙ্গলবার নগর দায়রা আদালতে সেই প্রশ্নই তুলেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। তদন্তকারীদের একাংশের ধারণা, দুর্নীতির টাকাতেই বিদেশ গিয়েছিলেন শতরূপা।
অনেক দিন ধরেই ইডির নজরে রয়েছে মানিক এবং তাঁর পরিবারের বিদেশভ্রমণ। তদন্তকারীদের মতে, বিদেশভ্রমণে প্রায় ৫ কোটি টাকা খরচ করেছে মানিকের পরিবার। যার অধিকাংশ খরচ করা হয়েছে নগদেই। কারণ, ব্যাঙ্ক থেকে বড়সড় কোনও লেনদেনের প্রমাণ পায়নি ইডি। ইডি সূত্রে খবর, ২০১২ সালের পর থেকে মানিকের পরিবারের সদস্যেরা বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করেছেন। মানিকের পুত্র শৌভিক ভট্টাচার্য ইংল্যান্ড, আমেরিকা, মলদ্বীপ, মালয়েশিয়া-সহ একাধিক দেশে গিয়েছেন। কখনও শৌভিক একাই বিদেশে গিয়েছেন, কখনও গিয়েছেন সপরিবার। তাঁদের ভ্রমণের তালিকায় রয়েছে সুইৎজ়ারল্যান্ড,জামার্নির মতো ইউরোপের একাধিক দেশ। নাইজেরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা এমনকি, চিনও রয়েছে তালিকায়। প্রায় প্রতিটি দেশেই দীর্ঘ দিন থেকেছেন তাঁরা। ইডি আধিকারিকদের একাংশের দাবি, তাঁদের কাচে এই সব ভ্রমণের উদ্দেশ্য স্পষ্ট নয়।
নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন পলাশিপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক মানিক। এর পর গত ২২ ফেব্রুয়ারি নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলায় গ্রেফতার করা হয় তাঁর স্ত্রী শতরূপা এবং পুত্র শৌভিককে। আদালতে চত্বরে গিয়েছিলেন তাঁরা। সেখান থেকে তাঁদের গ্রেফতার করা হয়। শতরূপাকে আলিপুরের মহিলা সংশোধনাগার এবং শৌভিককে প্রেসিডেন্সি জেলে রাখা হয়েছিল, যেখানে তাঁর বাবা মানিকও রয়েছেন।
১৪ দিন পর ফের মামলার শুনানি ছিল। সেখানে শতরূপা এবং শৌভিকের আইনজীবী জানিয়েছিলেন, তাঁর মক্কেলরা জামিন চান না। জামিনের আবেদন না করলেও শতরূপা-শৌভিক কলকাতা হাই কোর্টে তাঁদের বিরুদ্ধে ইডির আনা অভিযোগকে চ্যালেঞ্জ করে একটি মামলা করেন।
নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় মানিকের স্ত্রী শতরূপা এবং পুত্র শৌভিকের বিরুদ্ধে ইডি অভিযোগ করেছিল, তাঁরা এই দুর্নীতির বহু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানেন। নিয়োগ মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিকের বিরুদ্ধে যে সমস্ত অভিযোগ রয়েছে, সে বিষয়ে ওঁরা দু’জনেই অনেক কিছু জানেন বলে দাবি ইডির। মৃত এক ব্যক্তির সঙ্গে মানিকের স্ত্রীর জয়েন্ট অ্যাকাউন্টের হদিস মিলেছিল তদন্তে। ইডি মনে করছে, ওই অ্যাকাউন্টে দুর্নীতির টাকা থাকতে পারে।
পাশাপাশি, মানিক-পুত্র শৌভিকের বিরুদ্ধে স্বজনপোষণ এবং দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ইডির আরও দাবি, শৌভিক পড়াশোনার সূত্রে দীর্ঘ দিন ইংল্যান্ডে ছিলেন। রেসিডেন্স ভিসায় তিনি ইংল্যান্ডে গিয়েছিলেন। সম্পত্তি কেনাবেচার বিষয়েই এই ভ্রমণ বলে অনুমান তদন্তকারীদের। অভিযোগ, ইংল্যান্ডে সম্পত্তি সংক্রান্ত তথ্য গোপন করছে মানিকের পরিবার।