যুব তৃণমূলের রাজ্য সভানেত্রী তথা অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ। —ফাইল চিত্র।
নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ইডির নজরে এ বার যুব তৃণমূলের রাজ্য সভানেত্রী তথা অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ। মঙ্গলবার তাঁকে ইডির তরফে নোটিস পাঠানো হয়। সেখানে বলা হয়েছে, আগামী শুক্রবার কলকাতায় ইডির সদর দফতর সিজিও কমপ্লেক্সে সকাল ১১টার মধ্যে হাজির হতে হবে সায়নীকে। যদিও সায়নী ওই দিন ইডি দফতরে যাবেন কি না সে বিষয়ে এখনও কিছু জানা যায়নি। বুধবার সারা দিন পেরিয়ে গেলেও এই বিষয়ে নীরবই রইলেন তৃণমূল যুবনেত্রী। আনন্দবাজার অনলাইনের তরফেও সায়নীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়া পর্যন্ত তিনি ফোন ধরেননি।
রাজ্যের শিক্ষক নিয়োগ মামলায় ইডির নজরে কী ভাবে এলেন যুব তৃণমূলের রাজ্য সভানেত্রী সায়নী? ইডি সূত্রে খবর, রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হাতে ধৃত তথা তৃণমূলের বহিষ্কৃত যুবনেতা কুন্তল ঘোষের সূত্র ধরেই উঠে এসেছে সায়নীর নাম। কুন্তলের সম্পত্তি সংক্রান্ত বিষয়ে তদন্ত করার সময় সায়নীর নাম উঠে এসেছে বলে ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে। ইডির ওই সূত্রের দাবি, বিভিন্ন সম্পত্তি কেনাবেচা সংক্রান্ত নথির সঙ্গেও নাম জড়িয়েছে সায়নীর। আর সেই বিষয়েই যুব তৃণমূলের সভানেত্রীকে ইডি জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাইছে বলে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে খবর।
পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে ইদানীং ব্যস্ত রয়েছেন যুব তৃণমূল সভানেত্রী। তৃণমূল সূত্রে খবর, জোরকদমে প্রচারের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। এরই মধ্যে বুধবার সকালে অভিনেত্রীকে ইডির সমন পাঠানোর কথা প্রকাশ্যে আসে। সায়নীকে ইডি দফতরে হাজিরা দেওয়া প্রসঙ্গে আপাতত মুখে কুলুপ এঁটেছেন শাসক দল। তদন্তের মূল বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষও। তবে পঞ্চায়েত ভোটের ঠিক আগে সায়নীকে তলব করা নিয়ে সওয়াল করেছেন তিনি। বড় তারকা হওয়ার কারণেই সায়নী নজরে পড়েছেন বলে মন্তব্য কুণালের।
সায়নীর বাড়ি দক্ষিণ কলকাতার বিক্রমগড়ে। বুধবার সকালে ইডির নোটিস নিয়ে যুব তৃণমূল নেত্রীর বক্তব্য জানতে সেখানে পৌঁছন সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা। তবে তাঁর দেখা পাওয়া যায়নি। সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন অভিনেত্রীর বাবা। সায়নীর বাবা প্রশ্নের জবাবও দেন।
ইডির তরফে এই প্রথম সায়নীকে তলব করা হলেও নিয়োগ কাণ্ডের তদন্ত চলাকালীন এর আগেও তাঁর নাম উঠে এসেছে। পরে নিয়োগ মামলার শুনানিতে এক অভিনেত্রীর উল্লেখ শুনতে পাওয়া গিয়েছিল কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের মুখেও। যদিও সেই অভিনেত্রী সায়নী কি না, তা স্পষ্ট করেননি বিচারপতি। কিন্তু ইডির সমনে বুধবার প্রথম নিয়োগ দুর্নীতি তদন্তে নাম জুড়ল সায়নীর।
কোন সূত্র ধরে তলব
নিয়োগ মামলায় ধৃত কুন্তলের সঙ্গে একই মঞ্চে দেখা গিয়েছিল সায়নীকে। তখনও নিয়োগ মামলা নিয়ে জট পাকতে শুরু করেনি। কুন্তলও ইডির নজরে আসেননি। কুন্তলের সঙ্গে সায়নীর ছবিও প্রকাশ্যে আসে (সেই ছবির সত্যতা যাচাই করে দেখেনি আনন্দবাজার অনলাইন)। যদিও সেই প্রসঙ্গ উঠে আসার পর সায়নী জানিয়েছিলেন, তাঁরা দু’জনেই একই দলের সদস্য (বর্তমানে শুধু তিনিই শাসক দলের সদস্য। কুন্তলকে তৃণমূল থেকে বহিষ্কৃত করা হয়েছে)। তাই এক মঞ্চে থাকতেই পারেন। উল্টে কুন্তলকে বহিষ্কার করতে চেয়ে সায়নী তৃণমূল নেতৃত্বকে চিঠি দিয়েছিলেন বলেও জল্পনা তৈরি হয়েছিল। যদিও তাঁর ঘনিষ্ঠ একটি সূত্রের দাবি, এমন কোনও চিঠি সায়নী দেননি। সবটাই ‘উড়ো খবর’ এবং ‘গুজব’। যুব সভানেত্রীও প্রকাশ্যে এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। ইডি সূত্রে খবর, সেই কুন্তলের যোগসূত্র ধরেই নিয়োগকাণ্ডে সায়নীর নাম জড়িয়েছে। কুন্তলের সম্পত্তি সংক্রান্ত তদন্ত করার সময়ই নাকি ইডির নাম উঠে এনেছে। সম্পত্তি কেনাবেচা সংক্রান্ত নথির সঙ্গেও নাকি নাম জড়িয়েছে তাঁর। আর সে প্রসঙ্গেই তদন্তকারী আধিকারিকরা যুব তৃণমূল নেত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাইছেন বলে ইডি সূত্রে খবর।
কী বললেন কুণাল
সায়নীকে ইডির তলব প্রসঙ্গে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষের সঙ্গে যোগাযোগ করে আনন্দবাজার অনলাইন। তাঁর কথায়, ‘‘তদন্তের মূল বিষয়ে আমি কোনও মন্তব্য করতে চাই না। কিন্তু ভোটের আগে সময় দেখলে সন্দেহটা হয়। ডাকার উদ্দেশ্যটা কী? যখন পুরোদস্তুর ভোটের প্রক্রিয়া চলছে, সায়নী নিজেও ভোটপ্রচারে ব্যস্ত তখন তৃণমূলের ভোটটাকে বিঘ্নিত করার জন্য এই ধরনের ডাকাডাকি।’’ কুণাল আরও বলেন, ‘‘পূর্ব মেদিনীপুর-সহ একাধিক জায়গায় সিবিআই এবং এনআইএ একের পর এক এলাকায় তৃণমূলের ব্লক, বুথ এবং পঞ্চায়েত পদাধিকারীদের ভায়োলেন্সের নামে মামলায় ডেকে প্রভাবিত করছে, এলাকা ছেড়ে যেতে বলছে এবং ভোট করতে বারণ করছে।’’
কী বললেন সায়নীর বাবা
ইডির বক্তব্য নিয়ে সায়নীর বক্তব্য জানতে তাঁর বিক্রমগড়ের বাড়িতে পৌঁছেছিলেন সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা। কিন্তু বেল বাজানোর পরও দরজা খোলা হয়নি। পরে অবশ্য সদর দরজায় না এসে বাড়ির বারান্দায় হাজির হন সায়নীর বাবা। পেশায় প্রোমোটার যুব তৃণমূল নেত্রীর বাবা সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের জানান, সায়নী বাড়িতে নেই। তিনি কোথায় গিয়েছেন জিজ্ঞাসা করা হলে, উত্তরে অভিনেত্রীর বাবা জানান, সায়নী সকাল সাড়ে ৮টায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছেন। মেয়েকে ইডি কেন তলব করেছে জানতে চাওয়া হলেও যুব তৃণমূল নেত্রীর বাবা জানান, এ ব্যাপারে তাঁর কিছু বলার নেই। এর পর অবশ্য ভিতরে চলে যান তিনি। সায়নী কোথায় গিয়েছেন সেই বিষয়েও শেষ পর্যন্ত তিনি কিছু বলেননি।