বাকিবুর রহমান। — ফাইল চিত্র।
রেশন বণ্টন দুর্নীতির তদন্তে এ বার খাদ্য দফতরের কাছে তথ্য তলব করল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। ইডি সূত্রে খবর, ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া (এফসিআই) থেকে বাকিবুর রহমানের মিলে কত গম, চাল এসেছে এবং কত আটা, চাল বিলি করা হয়েছে, সেই তথ্য চাওয়া হয়েছে। বাকিবুরের মিল যত দিন ধরে এই কাজ করছে, সেই সময় থেকেই তথ্য চাওয়া হয়েছে।
রেশন বণ্টন দুর্নীতিকাণ্ডে অক্টোবর মাসে গ্রেফতার করা হয়েছে অভিযুক্ত বাকিবুরকে। ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, এফসিআই থেকে বাকিবুরের মিলে আসত চাল, গম। সেখান থেকে গম ভাঙিয়ে আটা এবং চাল বিলি করা হত। কত গম এসেছে এবং কত আটা দেওয়া হয়েছে, খাদ্য দফতরের থেকে সেই তথ্যই চাইল ইডি।
বাংলায় রেশন দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত করতে এসে রাজ্যের ‘মন্ত্রী ঘনিষ্ঠ’ ব্যবসায়ী বাকিবুরকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে শুরু করেছিলেন ইডির তদন্তকারীরা। পরে তাঁর কাছ থেকেই নদিয়ার আটা এবং চালকল ‘মেসার্স এনপিজি রাইস মিল প্রাইভেট লিমিটেড’-এর খোঁজ মেলে। ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই চাল এবং আটাকল সংস্থার ডিরেক্টর বাকিবুরই। এর পরে ওই সংস্থার ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলে দুর্নীতির রকমফের জানতে পারে ইডি। কিন্তু এই একই তথ্য বাকিবুরের কাছ থেকে যাচাই করতে গিয়ে ইডি কর্তারা দেখেন সরকারি রেশন সরানো নিয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন তথ্য দিচ্ছেন বাকিবুর। তবে আটা যে সরানো হত, তা স্বীকার করে নিয়েছেন রাজ্যের ‘মন্ত্রী-ঘনিষ্ঠ’ ওই ব্যবসায়ীও। এমনটাই জানা গিয়েছে ইডি সূত্রে।
কী ভাবে চলত দুর্নীতি? ইডির নথিতে বলা হয়েছে, মিল মালিকেরা সরকারি অর্থ মিলিয়ে নিতেন কড়ায়গণ্ডায়। কিন্তু তার বিনিময়ে সরবরাহকৃত রেশনের হিসাব মিলত না। প্রতি ১ কেজি আটার দামে অন্তত ২০০ গ্রাম কম আটা দিতেন আটা কলের মালিকেরা। বাংলার রেশন দুর্নীতির তদন্তে নেমে এমন তথ্যই উঠে এসেছে ইডির হাতে। এমনটাই জানা গিয়েছে তদন্তকারীদের সূত্রে। তদন্তকারীদের ওই অংশের দাবি, চাল এবং আটা কলের মালিকদের জিজ্ঞাসাবাদ করেই জানা গিয়েছে এই তথ্য। তাঁরাই জানিয়েছেন কমিয়ে নেওয়া আটার পরিমাণ কখনও কখনও ৪০০ গ্রামও হত। অর্থাৎ ১ কেজি আটার মূল্যে সরকারি সরবরাহকারীরা হাতে পেতেন ৬০০ গ্রাম আটা। তবে এই গরমিলের কথা জানত দু’পক্ষই। পুরোটাই চলত মিল মালিক এবং সরকারি সরবরাহকারীদের বোঝাপড়ায়। সঠিক দামে কম আটা বুঝে নেওয়ার ভাল দাম পেতেন রেশনের সরকারি সরবরাহকারীরা। এই বাকিবুরকে জেরা করার পরেই তল্লাশি শুরু হয় রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সল্টলেকের দুই বাড়ি এবং পৈতৃক বাড়িতে। তার পরেই গ্রেফতার হন জ্যোতিপ্রিয়। ইডির দাবি, বাকিবুরের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল মন্ত্রীর।