(বাঁ দিকে) অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বিচারপতি অমৃতা সিংহ। — ফাইল চিত্র।
নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, তাঁর স্ত্রী রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ‘লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডস’ সংস্থার ডিরেক্টর নথি জমা দিয়েছেন। কলকাতা হাই কোর্টে এমনটাই জানাল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। এর পরেই বিচারপতি অমৃতা সিংহ অভিষেকের নাম না নিয়েই প্রশ্ন তুললেন, তাঁর আয়ের উৎস কী? আদালতের পর্যবেক্ষণ, ২০১৪ সালের পর থেকে সম্পত্তির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে অভিষেকের।
মঙ্গলবার ইডি আদালতে জানিয়েছে, লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডস কোম্পানির সিইও ৫,৫০০ পাতার নথি জমা দিয়েছেন। তারা তা খতিয়ে দেখছে। রুজিরাও এসেছিলেন। সেকশন ৫০ অনুযায়ী ইডি তাঁর বয়ান রেকর্ড করেছে। ইডির আইনজীবী বলেন, ‘‘যে নথি এসেছে তা থেকে নিশ্চিত করে বলতে পারি, কোনও কিছুই গোপন না করে তদন্তের আরও অগ্রগতি হবে।’’ এ কথা জানার পরেই বিচারপতি সিংহের প্রশ্ন, ‘‘আপনাদের কথা মতো যে পরিমাণ নথি জমা পড়েছে, তা ইঙ্গিত দিচ্ছে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির। যদি সম্পত্তির পরিমাণ কম হত, তা হলে এই নথি আসত না। এটা ঠিক তো?’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘ওই নথি অনুযায়ী যে সম্পত্তি কেনা বা লেনদেন যা হয়েছে তাতে করে আপনারা কি খুঁজে দেখেছেন এর আয়ের উৎস কী? আয়ের উৎস কী? ’’
ইডির আইনজীবী জবাবে জানিয়েছেন, প্রচুর নথি জমা পড়েছে। আমি বিস্তারিত বলছি না। কিন্তু অনেক নথি বলছে টাকা এসেছে। ওই কোম্পানির কত উৎপাদন হয়েছে? বিচারপতি বলেন, ‘‘আদালত যা জানতে চাইছে, তা কি খুঁজে দেখেছেন? আয়ের উৎস কী? আইন আপনাদের সেই ক্ষমতা দিয়েছে। বলা ভাল, এটাই আপনাদের তদন্তের মুখ্য বিষয় হওয়া উচিত।’’ তার পরেই আইনজীবী জানান, আয়ের উৎস নিয়ে তাঁরা অপরাধ উদ্ঘাটনের চেষ্টা করছেন।
তদন্ত নিয়ে ইডিকে কটাক্ষও করেছেন বিচারপতি। তিনি বলেন, ‘‘আপনাদের তদন্তে আমি কিছুই দেখতে পাচ্ছি না।’’ এর পরেই তাঁর পর্যবেক্ষণ, ‘‘একটা জিনিস লক্ষ করার মতো, বেশির ভাগ সম্পত্তি ২০১৪ সালের পর থেকে বৃদ্ধি হয়েছে। আবার এই সময়ের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া হয়েছে। দুটোর মধ্যে কোনও যোগসূত্র রয়েছে কি না, খতিয়ে দেখেছেন?’’ ইডি জানিয়েছে, তাদের কাছে অনেক তথ্যই রয়েছে। তারা আদালতে রিপোর্ট জমা দিয়ে জানাবে। বিচারপতির মন্তব্য, ‘‘পাঁচ হাজার পৃষ্ঠা নিয়ে আবার হাজির হবেন না। প্রয়োজনীয় অংশটি আদালতে জমা দিন।’’ ১৪ ডিসেম্বর ইডিকে মুখবন্ধ খামে রিপোর্ট দিতে হবে। ২০ ডিসেম্বর রিপোর্ট জমা দেবে সিবিআই।
একই মামলায় আদালতে সিবিআই জানায়, ওএমআর শিট (উত্তরপত্র) মূল্যায়নের জন্য কোনও টেন্ডার ডাকা হয়নি। কোনও টেন্ডার ছাড়াই এস বসু রায় অ্যান্ড কোম্পানিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তখন পর্ষদ ইচ্ছে করেই এটা করেছিল। যাতে সত্যি প্রকাশ্যে না আসে। বিভিন্ন অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। সিবিআইকে বিচারপতি সিংহ জানান, তদন্ত দ্রুত শেষ করুন। অনির্দিষ্ট কালের জন্য কাউকে গ্রেফতার করে রাখা যায় না।
অভিষেককে ইডির কাছে নথি জমা করার নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। সেই মতো ১০ অক্টোবর ইডির কাছে নথি জমা করেন অভিষেক।