(বাঁ দিকে) এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-র অভিজ্ঞান। তৃণমূলের যুবনেত্রী সায়নী ঘোষ (ডান দিকে)। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
বুধবার ইডির দ্বিতীয় বারের তলবে সিজিও কমপ্লেক্সে না গিয়ে আইনজীবী মারফত ‘প্রয়োজনীয়’ নথিপত্র পাঠিয়ে দিয়েছিলেন অভিনেত্রী তথা যুব তৃণমূল সভানেত্রী সায়নী ঘোষ। তিনি জানিয়েছিলেন, ভোটের ব্যস্ততার কারণে সশরীরে হাজিরা দিতে পারেননি। ভোটপ্রক্রিয়া (অর্থাৎ, ভোটগ্রহণ থেকে শুরু করে ফলপ্রকাশ) মিটে গেলে যে কোনও দিন ইডি দফতরে যেতে রাজি আছেন। কিন্তু ইডির একটি সূত্রের খবর, সায়নীর আইনজীবী বুধবার সিজিওতে যে নথি দিয়ে এসেছেন, তাতে ‘সন্তুষ্ট’ নয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। সায়নীর আয় এবং ব্যয় সঙ্গতিপূর্ণ কি না, আপাতত তা-ই খতিয়ে দেখছে তারা।
গল্ফগ্রিন এলাকায় সায়নীদের দু’টি ফ্ল্যাট রয়েছে। একটি তাঁর মায়ের নামে এবং অন্যটি নিজের নামে। ইডি সূত্রে জানা গিয়েছিল, এর মধ্যে একটি ফ্ল্যাটের দাম প্রায় ৮০ লক্ষ টাকা। ফ্ল্যাটটি কেনার জন্য সায়নী ২০ লক্ষ টাকা নগদ দিয়েছিলেন। বাকি ৬০ লক্ষ টাকার জন্য একটি বেসরকারি ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নেওয়া হয়েছিল। ওই ফ্ল্যাট সংক্রান্ত নথিই বুধবার ইডি চেয়ে পাঠিয়েছিল। এ ছাড়া, সায়নী যে গাড়িটি ব্যবহার করেন, তা-ও ছিল ইডির আতশকাচের নীচে। যদিও সায়নী দাবি করেছিলেন, গাড়িটি তাঁরই।
বুধবার যে নথিপত্র সায়নীর আইনজীবী ইডির কাছে দিয়ে এসেছেন, তাতে গল্ফগ্রিনের ফ্ল্যাট সংক্রান্ত নথি ছিল বলেই মনে করা হচ্ছে। কিন্তু বৃহস্পতিবার জানা যাচ্ছে, তাতে ‘সন্তুষ্ট’ হতে পারেনি কেন্দ্রীয় সংস্থা। সায়নীর আয়ের সঙ্গে ওই সম্পত্তি ‘সঙ্গতিপূর্ণ’ কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাঁর আয়ের উৎস কী, কী ভাবে তিনি ঋণের টাকা মেটান, তা-ও খতিয়ে দেখছে ইডি। ইডি সূত্রের খবর, নথিপত্র সংক্রান্ত স্পষ্ট ব্যাখ্যা চাইতে সায়নীকে আবার ডেকে পাঠানো হতে পারে।
এখনও পর্যন্ত সায়নী সংক্রান্ত বিষয়ে যা জানা গিয়েছে, তা বলছে— রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগ মামলায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হাতে ধৃত তথা তৃণমূলের বহিষ্কৃত যুবনেতা কুন্তল ঘোষের সূত্র ধরে উঠে এসেছে সায়নীর নাম। কুন্তলের সঙ্গে তাঁর কোনও আর্থিক লেনদেন হয়েছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গত শুক্রবার সায়নীকে তলব করা হয়েছিল ইডি দফতরে। সে দিন টানা প্রায় ১১ ঘণ্টা তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। রাতে সিজিও থেকে বেরিয়ে যুবনেত্রী জানিয়েছিলেন, তদন্তের স্বার্থে তিনি ১০০ বার ইডির সামনে হাজির হতে রাজি আছেন। তিনিই জানিয়েছিলেন, বুধবার তাঁকে আবার ডাকা হয়েছে। তিনি যাবেন। কিন্তু যাবেন বলেও বুধবার সিজিও-তে যাননি সায়নী। তিনি গিয়েছিলেন বর্ধমানের গলসিতে পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারে। বস্তুত, বৃহস্পতিবারও তিনি বর্ধমানের কাটোয়ায় পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারে থাকবেন বলে তৃমমূল সূত্রের খবর। ঘটনাচক্রে, বৃহস্পতিবার বিকেলেই পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারপর্ব শেষ হচ্ছে। ভোট শনিবার। ফলগণনা তার পরের মঙ্গলবার। তবে পঞ্চায়েত ভোট ব্যালটে হয় বলে গণনায় সময় লাগবে।
এর আগে কুন্তলের সঙ্গে সায়নীর একটি ছবি প্রকাশ্যে এসেছিল (সেই ছবির সত্যতা আনন্দবাজার অনলাইন যাচাই করেনি)। সে প্রসঙ্গে যুবনেত্রীর যুক্তি ছিল, তাঁরা দু’জন একই দলের সদস্য। তাই এক মঞ্চে থাকতেই পারেন। আবার ইডি সূত্রে জানা গিয়েছিল, কুন্তলের সম্পত্তি সংক্রান্ত বিষয়ে তদন্ত করার সময়েই সায়নীর নাম উঠে আসে। গত শুক্রবার তাঁকে আয়কর জমা দেওয়ার ফাইল এবং সম্পত্তির হিসাব নিয়ে যেতে বলা হয়েছিল। তাঁর সমস্ত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য এবং লেনদেনের নথিও নাকি আনতে বলা হয়েছিল। তার পর বুধবার সায়নীর ফ্ল্যাটের নথি চেয়ে পাঠায় ইডি। ওই নথিতে ‘সন্তুষ্ট’ না হওয়ায় তাঁকে আবার তলব করা হতে পারে।
যাবেন বলে বুধবার কেন ইডির দফতরে হাজির হননি তৃণমূলের যুবনেত্রী সায়নী? তাঁর এবং তাঁর দলের তরফে ‘আনুষ্ঠানিক’ জবাব ছিল, পঞ্চায়েতের প্রচারে ব্যস্ত থাকার জন্য। কিন্তু তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের যুগপৎ আশঙ্কা এবং উদ্বেগ ছিল, বুধবার সিজিওতে গেলে সায়নী যদি আর না বেরিয়ে আসেন! অর্থাৎ, যদি তাঁকে গ্রেফতার করে বসে ইডি! সে তদন্তের কারণেই হোক বা পঞ্চায়েত ভোটের তিন দিন আগে ‘রাজনৈতিক কারণে’। সূত্রের খবর, দলীয় নেতাদের পরামর্শেই সায়নী বুধবার ইডির মুখোমুখি হননি। তাঁদের এবং আইনজীবীর পরামর্শে মঙ্গলবার রাতে তদন্তকারী সংস্থাকে ইমেল করে জানিয়েছিলেন, বুধবার তিনি হাজিরা দিতে পারছেন না। পঞ্চায়েত ভোট এবং ফলপ্রকাশের পর যে কোনও দিন ডাকলে তিনি সশরীরে হাজিরা দেবেন। এর মধ্যে প্রয়োজনে তাঁর সঙ্গে ‘ভার্চুয়ালি’ও কথা বলতে পারে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। ইডি এর মধ্যে সায়নীর সঙ্গে ‘ভার্চুয়ালি’ কথা বলবে কি না, তা জানা যায়নি। তবে একটি সূত্রের দাবি, ‘ভার্চুয়ালি’ নয়, ইডি সায়নীর সঙ্গে মুখোমুখিই কথা বলতে চাইবে।