যুব তৃণমূলের রাজ্য সভানেত্রী তথা অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ। ছবি: ফেসবুক।
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় যুব তৃণমূলের রাজ্য সভানেত্রী তথা অভিনেত্রী সায়নী ঘোষকে তলব করল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। শুক্রবার তাঁকে সিজিও কমপ্লেক্সে (কলকাতায় যেখানে ইডির দফতর রয়েছে) হাজিরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার তাঁকে ইডির তরফে নোটিস পাঠানো হয়েছে।
ইডি সূত্রে খবর, রাজ্যে শিক্ষা নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত তৃণমূলের বহিষ্কৃত যুবনেতা কুন্তল ঘোষের সম্পত্তি সংক্রান্ত বিষয়ের তদন্তে উঠে আসে সায়নীর নাম। সম্পত্তি কেনাবেচাতেও নাম জড়িয়েছে সায়নীর বলে ইডির দাবি। সেই প্রসঙ্গেই তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভানেত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় ইডি। এই বিষয়ে আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে সায়নীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাঁকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
এই প্রসঙ্গে আনন্দবাজার অনলাইনকে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘তদন্তের মূল বিষয়ে আমি কোনও মন্তব্য করতে চাই না। কিন্তু ভোটের আগে সময় দেখলে সন্দেহটা হয়। ডাকার উদ্দেশ্যটা কী? যখন পুরোদস্তুর ভোটের প্রক্রিয়া চলছে, সায়নী নিজেও ভোটপ্রচারে ব্যস্ত তখন তৃণমূলের ভোটটাকে বিঘ্নিত করার জন্য এই ধরনের ডাকাডাকি।’’ বড় তারকা বলে সায়নী নজরে পড়ছেন বলেও জানান তিনি। কুণালের মন্তব্য, ‘‘পূর্ব মেদিনীপুর-সহ একাধিক জায়গায় সিবিআই এবং এনআইএ একের পর এক এলাকায় তৃণমূলের ব্লক, বুথ এবং পঞ্চায়েত পদাধিকারীদের ভায়োলেন্সের নামে মামলায় ডেকে ডেকে প্রভাবিত করছে, এলাকা ছেড়ে যেতে বলছে এবং ভোট করতে বারণ করছে।’’
চলতি বছরের মার্চ মাসে কুন্তলের সঙ্গে পরিচিতি থাকায় ইডির নজরে এসেছিলেন বনি সেনগুপ্ত। কুন্তলের টাকায় গাড়ি কিনেছিলেন তিনি। তা নিয়ে তদন্তকারীদের প্রশ্নের মুখেও পড়তে হয়েছিল তাঁকে। ইডির হাতে কুন্তলের গ্রেফতারির পর তাঁর এক ঘনিষ্ঠের সঙ্গে যোগসূত্র মেলে বনির প্রেমিকা অভিনেত্রী কৌশানী মুখোপাধ্যায়ের। কুন্তল ‘ঘনিষ্ঠ’ সোমা চক্রবর্তীর নেল পার্লারে মডেলিংয়ের কাজ করেছিলেন অভিনেত্রী। এর পর নাম আসে বনিরও। কুন্তল জেরার মুখে ইডি আধিকারিকদের কাছে দাবি করেছিলেন, নিয়োগ দুর্নীতিতে বাজার থেকে তোলা টাকার মধ্যে তিনি বনিকে ৪০ লক্ষ দিয়েছিলেন গাড়ি কিনতে।
এর পরই সিজিও কমপ্লেক্সে ডাক পেয়েছিলেন বনি। দু’দফায় জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছিল তাঁকে। প্রশ্ন করা হয়েছিল বনির বিদেশযাত্রার অর্থের উৎস নিয়েও। এর পর বনি ইডিকে জানিয়েছিলেন, কুন্তলের দেওয়া ৪০ লক্ষ টাকায় তিনি গাড়ি কিনেছিলেন। ইডি সূত্রের খবর, বনি দাবি করেছিলেন, ২০১৭ সালে কুন্তলের দেওয়া সেই টাকা তিনি সরাসরি নেননি। পরিবর্তে সেই টাকা পাঠানো হয়েছিল গাড়ির শো-রুমে। অভিনেতা এ-ও দাবি করেন, তিনি গাড়ি কেনার জন্য টাকা নিলেও পরে কুন্তল আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে এবং তার জন্য কোনও পারিশ্রমিক না নিয়ে তিনি ওই টাকা ধৃত যুবনেতাকে শোধ করে দিয়েছিলেন। পরে অবশ্য ৪৪ লক্ষ টাকা কুন্তলের অ্যাকাউন্টে ফেরত দিয়ে রেহাই পেয়েছিলেন অভিনেতা।