Recruitment Scam

নিয়মের বাইরেও নিয়োগ, টাকার বিনিময়ে শংসাপত্র

ইডির তদন্তকারীদের দাবি, মানিকের নির্দেশেই রাতারাতি প্রার্থীদের রেজিস্ট্রেশন ও অ্যাডমিট কার্ড পর্ষদ অফিস তৈরি করে।

Advertisement

শুভাশিস ঘটক

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০২২ ০৭:২৬
Share:

প্রতীকী ছবি।

দুর্নীতির জট ছাড়াতে গিয়ে উঠে আসছে চমকপ্রদ তথ্য।

Advertisement

নিয়মমাফিক পরীক্ষার পরে যে নিয়োগ হয়েছিল, সেখানে দুর্নীতির প্রামাণ্য তথ্য ইতিমধ্যেই হাতে এসেছে তদন্তকারীদের। সম্প্রতি এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর হাতে এমন তথ্যও এসেছে, ‘অযোগ্য’ প্রার্থীদের চাকরি দিতে রীতিমতো সরকারি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ৫৫০টি বেসরকারি বিএড কলেজ থেকে আলাদা করেও নাকি পরীক্ষা নেওয়ার কথা বলা হয়েছিল।

যদিও তদন্তকারীদের অনুমান, শেষ পর্যন্ত হয়তো অযোগ্য প্রার্থীদের কোনও পরীক্ষাই নেয়নি বেসরকারি কলেজগুলি। সরকারি বিজ্ঞপ্তির ভিত্তিতে অযোগ্য প্রার্থীদের হাতে টাকার বিনিময়ে শংসাপত্র তুলে দেওয়া হয়েছিল। কারণ হিসাবে তাঁদের দাবি, সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে পরীক্ষার কোনও নির্দিষ্ট দিন ঘোষণা করা হয়নি। এমনকি অ্যাডমিট কার্ডেও পরীক্ষার দিনক্ষণ লেখা ছিল না। এমনকি, ওই সময় শংসাপত্র পাওয়া একাধিক অযোগ্য প্রার্থীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে দাবি করছেন তদন্তকারীরা।

Advertisement

তদন্তকারীদের দাবি, অতি সুকৌশলে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ-এর প্রাক্তন সভাপতি, তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য ও তাঁর ঘনিষ্ঠ মিডলম্যানরা হাজার হাজার পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে মাথা পিছু প্রায় দেড় লক্ষ টাকা নিয়ে ওই শংসাপত্র দেন। মানিক এখন ইডি-র হেফাজতে রয়েছেন। ইডি সূত্রের দাবি, মানিককে জেরা করেই এই তথ্য তাদের হাতে এসেছে। তদন্তকারীদের অভিযোগ, কারচুপির মাধ্যমে নিজের দফতর থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিলেন মানিক। আলাদা করে পরীক্ষা দিয়ে কয়েক হাজার অযোগ্য প্রার্থী যাতে বেসরকারি বিএড ও ডিইএলইডি (ডিপ্লোমা ইন এলিমেন্টারি এডুকেশন) কলেজগুলির প্রাথমিক টেট প্রবেশিকা পরীক্ষার অন্যতম শংসাপত্র পান, তার ব্যবস্থা করেছিলেন বলেও ইডি-র দাবি।

তদন্তকারীদের দাবি, ২০২২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের দফতরের তরফে ওই বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। বলা হয়, ২০১৭-১৯ এবং ২০১৮-২০ বর্ষে ভর্তি হওয়া পড়ুয়াদের ডিইএলইডি পরীক্ষা নিতে হবে বেসরকারি কলেজগুলিকে। ইডির তদন্তকারীদের দাবি, মানিকের নির্দেশেই রাতারাতি প্রার্থীদের রেজিস্ট্রেশন ও অ্যাডমিট কার্ড পর্ষদ অফিস তৈরি করে।

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, সম্প্রতি মানিক-ঘনিষ্ঠ ‘অল বেঙ্গল টিচার্স ট্রেনিং অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভাপতি তাপস মণ্ডলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তদন্তকারীদের দাবি, লক্ষাধিক টাকার বিনিময়ে অযোগ্য প্রার্থীদের ওই শংসাপত্র তৈরি করা হয়েছিল। তার মাস্টারমাইন্ড ছিলেন মানিক। এ ভাবে অযোগ্য প্রার্থীদের ডিইএলইডি শংসাপত্র বিক্রি করে মানিক-ঘনিষ্ঠদের বেসরকারি বিএড কলেজগুলির মাধ্যমে প্রায় হাজার কোটি টাকারও বেশি তোলা হয়েছে বলে ইডি-র প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে।

ইডি-র দাবি, বিভিন্ন মহলের সুপারিশ থেকে শূন্য পদের প্রায় হাজার দেড়েক অযোগ্য প্রার্থীদের তালিকা তৈরি করা হয়। তাঁদের পুরনো বর্ষের পড়ুয়া বলে দেখানো হয়। তাতে সরকারি সিলমোহর বসানোর জন্যই ২০১৭-১৯ এবং ২০১৮-২০ পুরাতন বর্ষের পরীক্ষা নেওয়ার জন্য বেসরকারি কলেজগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে পুরনো বর্ষের পরীক্ষাকে 'সাপ্লিমেন্টারি এগজ়ামিনেশন' বলে সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

তদন্তকারীদের অভিযোগ, বিভিন্ন বেসরকারি কলেজকে পরিষেবামূলক সহায়তা দেওয়ার অছিলায় মানিকের ছেলে সৌভিকের নামে সংস্থা খোলা হয়েছিল। অথচ, ওই সংস্থার তরফে কোনও পরিষেবা দেওয়া হয়নি বলে দাবি ইডি সূত্রের। আর ওই সংস্থায় প্রায় ৫০০টি বেসরকারি বিএড কলেজের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে ৫০ হাজার টাকা করে জমা পড়েছিল। সৌভিককেও একাধিকবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement