মেনকা গম্ভীরের বিরুদ্ধে আদালতে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগ। —ফাইল ছবি
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্যালিকা মেনকা গম্ভীরের বিরুদ্ধে আদালতে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগ তুলল ইডি। বুধবার কয়লা পাচার মামলায় মেনকার রক্ষাকবচ খারিজ চেয়ে কেন্দ্রীয় সরকার এবং ইডি-র তরফে দাবি করা হয়, মেনকা হাই কোর্টে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বলেছেন তিনি ভারতীয় নাগরিক। কিন্তু তা মিথ্যা। তিনি আসলে তাইল্যান্ডের নাগরিক।
কয়লা পাচার মামলায় ইডি-র ভূমিকা নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন মেনকা। তিনি রক্ষাকবচের অধিকারের কথা আদালতের সামনে তুলে ধরেছেন।
গত অগস্ট মাসে কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি মৌসুমী ভট্টাচার্যের একক বেঞ্চ অন্তর্বর্তী নির্দেশে জানিয়েছিল, মেনকাকে গ্রেফতার করা বা তাঁর বিরুদ্ধে কোনও কড়া পদক্ষেপ করা যাবে না। একই সঙ্গে আদালত জানিয়েছিল, অভিষেক-শ্যালিকাকে কলকাতার আঞ্চলিক দফতরে জিজ্ঞাসাবাদ করবে ইডি। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দিল্লিতে তলব করতে পারবে না।
একক বেঞ্চের এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে যায় ইডি। বুধবার হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এবং বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চে মামলাটি শুনানির জন্য ওঠে। সেখানে ইডি-র তরফে কেন্দ্রের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল (এএসজি) অশোককুমার চক্রবর্তী সওয়াল করেন। দাবি, মেনকা যে ভারতীয় নাগরিক নন, সেই তথ্য তিনি একক বেঞ্চে লুকিয়ে গিয়েছেন। মেনকা আসলে তাইল্যান্ডের নাগরিক। কিন্তু তাঁকে ভারতীয় নাগরিক ভেবেই তাঁর মামলাটি গ্রহণ করা হয়। একে এক ধরনের প্রতারণা বলেও দাবি করেছে ইডি। তাদের যুক্তি, মেনকার রক্ষাকবচের আবেদনটি বাতিল হওয়া উচিত।
কেন্দ্রের তরফে আইনজীবী বিল্বদল ভট্টাচার্য আদালতে বলেন, ‘‘মেনকার মামলাগুলি খতিয়ে দেখলেই বোঝা যাবে নাগরিকত্ব নিয়ে তাঁর দু’টি অবস্থান রয়েছে। তিনি কখনও বলেছেন তিনি ভারতের নাগরিক। আবার কখনও বলেছেন নাগরিক নন, তিনি ভারতের বাসিন্দা। আবার মেনকার পাসপোর্ট অনুযায়ী তিনি তাইল্যান্ডের নাগরিক।’’
আইনজীবী আরও বলেন, ‘‘এই মামলার তদন্ত চলছে। মেনকার বিরুদ্ধে লুক আউট নোটিস জারি করা হয়েছে।’’ মেনকার আইনজীবী জিষ্ণু সাহা বলেন, ‘‘এখানে অধিকারের প্রশ্ন রয়েছে। নাগরিক না হলে মামলার ওই অংশটি পরিবর্তনের আবেদন করতে পারত ইডি। কিন্তু তারা তা করেনি। ইডির এই পদক্ষেপের নেপথ্যে কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে। কারণ, রাজ্যের শাসকদলের গুরুত্বপূর্ণ নেতার শ্যালিকা মেনকা।’’
মেনকার আইনজীবীর সওয়াল, নাগরিক না হলেও এ দেশে মেনকা দীর্ঘ দিন রয়েছেন। নিজেকে ভারতের বাসিন্দা হিসাবে পরিচয় দিয়েছেন। ফলে আদালতের দরবারে আর্জি জানানোর অধিকার তাঁর রয়েছে। অভিযুক্ত না হয়েও মেনকা তদন্তে বার বার সহযোগিতা করেছেন বলে দাবি আইনজীবীর। এমনকি মেনকা যে রাত ১২টায় তদন্তকারী সংস্থার অফিসে হাজিরা দিয়েছেন, সে কথাও তুলে ধরা হয় শুনানিতে। অভিযোগ, তার পরেও লুক আউট নোটিসের কথা বলে হেনস্থা করা হয়েছে তাঁর মক্কেলকে।
অন্য দিকে, এই মামলায় একক বেঞ্চের এক্তিয়ার নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কেন্দ্রের আইনজীবীরা। এএসজি অশোককুমার চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘মেনকা পুলিশি অতি সক্রিয়তা এবং নিষ্ক্রিয়তার মামলা করেছিলেন। সিবিআই বা ইডির মতো কেন্দ্রীয় সংস্থার বিরুদ্ধে এই ধরনের মামলা করা যায় না। ফলে বিচারপতি ভট্টাচার্যের এই মামলায় কোনও নির্দেশ দেওয়ার এক্তিয়ার নেই। মামলাটি আপনা থেকেই খারিজ হওয়া উচিত।’’ বুধবার সময়ের অভাবে এই মামলার শুনানি শেষ হয়নি। বৃহস্পতিবার ফের হাই কোর্টে মামলাটির শুনানি হবে।