প্রতীকী ছবি।
পথ দেখাচ্ছে পূর্ব মেদিনীপুর।
করোনার টিকা নিয়ে অসাধু চক্রের কাজকর্মের অভিযোগে প্রশাসনের শীর্ষ মহল যারপরনাই বিরক্ত। তাই তারা টিকাকরণের পুরো প্রক্রিয়াটাই সরকারি হাতে রাখতে বদ্ধপরিকর। সেই জন্য ভোটার তালিকা ধরে টিকাকরণের কাজ শুরু করেছে পূর্ব মেদিনীপুর প্রশাসন। কলকাতা পুরসভাও একই পদক্ষেপের প্রস্তুতি চালাচ্ছে। আগামী দিনে সব জেলাতেই এই পদ্ধতিতে টিকাকরণ চলবে বলে প্রশাসনিক সূত্রের অনুমান।
চালু পদ্ধতিতে এমন বদল কেন?
প্রশাসনিক সূত্রের বক্তব্য, টিকার কুপন বিলি নিয়ে বিভিন্ন জেলা থেকে নানা ধরনের অভিযোগ পাচ্ছে রাজ্য সরকার। কুপন বিলি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে অসন্তোষের খবরও আসছে নবান্নে। এমনকি কোথাও কোথাও কুপন বিলির পিছনে আর্থিক লেনদেনেরও অভিযোগ উঠছে। এই অবস্থায় টিকাদান কেন্দ্র থেকে কুপন বিলি— সবটাই সরকারি হাতে রাখতে চাইছে রাজ্য। জেলা প্রশাসনগুলির সঙ্গে মুখ্যসচিব মঙ্গলবার যে-বৈঠক করেছিলেন, সেখানেও টিকার পুরো প্রক্রিয়াকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি।
ভোটার তালিকা সংশোধন হয়েছে জানুয়ারিতে। তার ভিত্তিতে গত বিধানসভার ভোট হয়েছে। তাই দুর্নীতিমুক্ত টিকাকরণের জন্য সেই ভোটার তালিকাকেই অবলম্বন করেছে পূর্ব মেদিনীপুর। ‘পার্ট’ ও ‘সিরিয়াল’ নম্বর অনুযায়ী মহিলা টিকাপ্রাপককে বেছে নিচ্ছে সেখানকার জেলা প্রশাসন। তালিকাভুক্ত কারও আগেই টিকা হয়ে গিয়ে থাকলে পরের নাম চলে আসছে অগ্রাধিকারের তালিকায়। সেই অনুযায়ী টিকাদানের দু’দিন আগেই কুপন বিলি করছেন স্বাস্থ্যকর্মী, আশা ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা।
প্রশাসনিক সূত্র জানাচ্ছে, আগের তুলনায় প্রতিষেধকের জোগান বাড়ছে রাজ্যে। শহুরে এবং পুর এলাকা, অগ্রাধিকারের তালিকাভুক্তদের টিকাকরণ অনেকটাই হয়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় টিকাদানের পরিধি বাড়ানো জরুরি। ধীরে ধীরে গ্রামীণ এলাকাকেও টিকাকরণের আওতায় আনার বার্তা দেওয়া হচ্ছে জেলাকে।
করোনার বিরুদ্ধে অগ্রবর্তী যোদ্ধা, সুপারস্প্রেডার, শিক্ষক-শিক্ষিকা, ১২ বছর পর্যন্ত শিশু-কিশোরদের মা, পুর-ঘিঞ্জি-বস্তি এলাকায় টিকাকরণে জোর দিয়েছিল রাজ্য। ওই সব ক্ষেত্রে টিকা দেওয়ার কাজ অনেকটাই সেরে ফেলা গিয়েছে। তাই এ বার জোগানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে টিকাদানের পরিধি বাড়াতে হবে সরকারকে। এক প্রশাসনিক কর্তার বক্তব্য, দ্বিতীয় ডোজ় টিকাপ্রাপকের অধিকার। তাঁদের পাশাপাশি, অন্তঃসত্ত্বা, নবজাতক এবং ১২ বছর পর্যন্ত শিশু-কিশোরদের মায়েদের পাশাপাশি টিকাপ্রাপকের তালিকা তৈরি হচ্ছে ভোটার তালিকার মাধ্যমেই। ‘‘মহিলাদের আগেভাগে টিকা দিতে পারলে সব পরিবারকেই বাড়তি সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব। বিশেষত যখন কোভিডের তৃতীয় তরঙ্গ শিশুস্বাস্থ্যের উপরে প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে,’’ বলেন ওই প্রশাসনিক কর্তা।