ফাইল চিত্র।
প্রকল্প ঘিরে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে বহু টানাপড়েন হয়েছে। বৈঠকের পর বৈঠক হয়েছে। সমাধানসূত্র বেরোয়নি। এ বার কি তবে পুনর্বাসন প্যাকেজ এবং জমির দাম ঘোষণা হবে?
সেই উত্তর পেতে আজ, সোমবারের দিকে তাকিয়ে লোবার বাসিন্দারা। কারণ, আজ সিউড়িতে প্রশাসনিক ভবনে আবার বৈঠক হবে লোবার জট কাটাতে।
অগস্টের ১৯ তারিখের শেষ বৈঠক ফলপ্রসূ হয়নি। সেই কারণে লোবায় প্রস্তাবিত খোলামুখ কয়লাখনির গড়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশনকে (ডিভিসি) কড়া বার্তা দেওয়া হয়েছিল প্রশাসনের তরফ। বীরভূমের জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছিলেন, কয়লাখনি গড়ায় আন্তরিক হলে, এক মাসের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য খসড়া পুনর্বাসন প্যাকেজ তৈরি এবং জমির দাম নির্ধারণ করতে হবে ডিভিসি কর্তৃপক্ষকে। প্রশাসন সূত্রে খবর, ওই বৈঠকেই লোবায় কয়লাখনির জন্য জমিদাতা ও ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য খসড়া পুনর্বাসন প্যাকেজ ঘোষণা করার কথা ছিল ডিভিসি-র। কিন্তু, প্যাকেজ বা জমির দাম, কোনওটাই চূড়ান্ত করতে পারেনি ডিভিসি।
আজ, সোমবার ফের সিউড়ি প্রশাসন ভবনের কনফারেন্স হলে কয়লাখনি সংক্রান্ত উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক রয়েছে। দুর্গাপুজোর আগে পুনর্বাসন ও দাম সংক্রান্ত বার্তা ডিভিসি-র কাছ থেকে আসে কিনা, তা জানতে অধীর আগ্রহে লোবার মানুষ এবং প্রশাসন। প্রশাসনের কর্তাদের কথায়, পুনর্বাসন প্যাকেজ ঘোষণা ও জমির দাম না জানালে, আলোচনা এগোনোর জায়গা নেই।
অতীতে লোবায় খোলামুখ কয়লাখনি গড়ার কাজ যৌথ ভাবে দায়িত্ব পেয়েছিল ডিভিসি এবং বেসরকারি সংস্থা এমটা। কিন্তু, জমিজটে সে কাজ এগোয়নি। কৃষিজমি রক্ষা কমিটির আন্দোলনের জেরে ২০১২ সালে থমকে যায় কয়লাখনি গড়ার কাজ। আপত্তি তোলা হয়েছিল জমি কেনার পদ্ধতি নিয়েও। ফলে প্রকল্প থেকে হাত গুটিয়ে নেয় ডিভিসি-এমটা। পরে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ওই কোল ব্লক বণ্টন অবৈধ ঘোষিত হয়। পরবর্তীতে এমনটাকে বাদ দিয়ে লোবায় মাটির নীচের কয়লা তোলার বরাত পায় ডিভিসি।
প্রশাসন সূত্রে খবর, কয়লাখনির জন্য এলাকার কোনও মানুষ যাতে বঞ্চিত না হন, সেটা দেখাই প্রাধান্য পাচ্ছে। তাই সবচেয়ে জরুরি ছিল, যে সাড়ে তিন হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে, সেই জমির প্রকৃত মালিকদের চিহ্নিত করা। প্রশাসনিক তৎপরতায় ইতিমধ্যেই জরিপের কাজ শেষ। জমির রেকর্ড মেলানোর কাজও প্রায় শেষের মুখে। এমনকি যে যে অংশে মালিকানা নিয়ে সমস্যা ছিল, এমন জমি মালিক, বর্গাদার, পাট্টাদারদের জন্য শিবির করে দ্রুত রেকর্ড ঠিক করার ব্যবস্থা প্রশাসন করেছে। খুঁজে দেওয়া হয়েছে বাসিন্দাদের পুনর্বাসনের জন্য জমি।
তার পরেও কিছু কাজ বাকি। এখানেই ডিভিসি-র তরফ থেকেও তৎপরতা আশা করছে জেলা প্রশাসন। আজকের বৈঠকে ডিভিসি কোনও ঘোষণা করে কিনা, সে জানতে চান প্রশাসনিক কর্তারা। লোবা কৃষিজমি রক্ষা কমিটির সম্পাদক জয়দীপ মজুমদার বলেন, ‘‘এলাকার সবাই চান কয়লা খনি হোক। কিন্তু যে শর্তে এলাকার মানুষ জমি দেবেন, তার জন্য কত টাকা তিনি পাবেন বা পুনর্বাসন প্যাকেজই বা কী হবে, তা জানতে এই দিনটার জন্যই সবাই তাকিয়ে রয়েছেন। দেখি কী হয়।’’