বালির বস্তা ফেলে চলছে ‘ব্লক’ তৈরির কাজ। (ইনসেটে ক্ষতিগ্রস্ত ৩১ নম্বর লকগেট)। ছবি: বিকাশ মশান
রাজ্য প্রশাসন দুর্গাপুর ব্যারাজের ভেঙে যাওয়া লকগেটটি দ্রুত সারাই করার কথা বলেছিল। কিন্তু শনিবার ভোর সাড়ে ৫টায় বিপত্তির পরে প্রায় দু’দিন কেটে গেলেও, রবিবার রাত পর্যন্ত মেরামতের কাজ শুরুই করা যায়নি। সেচ দফতর জানিয়েছে, ব্যারাজের জল পুরোপুরি না বেরনোয় গেটের সামনে বালির বস্তা দিয়ে ‘ব্লক’ তৈরি করাযায়নি। রবিবার ব্যারাজ পরিদর্শনের পরে সেচ দফতরের সচিব নবীন প্রকাশ বলেন, ‘‘সোমবারের মধ্যে ৩১ নম্বর গেটের সংস্কারের কাজ হয়ে যাবে বলে আশা করছি।’’
সেচ দফতর জানায়, পাঁচটি লকগেট খুলে জল বার করা হচ্ছে। শনিবার রাতেই জল বেরিয়ে যাবে ও কাজ শুরু হবে বলে আশা ছিল। সেই মতো, শনিবারই দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টের (ডিএসপি) ইঞ্জিনিয়ারেরা ঘটনাস্থলে আসেন। কিন্তু রবিবার দেখা যায়, ক্ষতিগ্রস্ত ৩১ নম্বর ও আশপাশের গেটগুলি থেকে জল বেরোচ্ছে। তা দেখে দুর্গাপুর পুরসভার মেয়র দিলীপ অগস্তি অভিযোগ করেন, ‘‘কখন মেরামত শুরু হবে, সে নিয়ে সেচ দফতর তথ্য দিচ্ছে না।’’
সেচ দফতরের ইঞ্জিনিয়ার জয়ন্ত দাস অবশ্য তা অস্বীকার করে জানান, জল পুরোপুরি নামলেই কাজ শুরু হবে। দফতরের ব্যাখ্যা, বালির বস্তা ফেলে ক্ষতিগ্রস্ত গেটের কাছে পৌঁছনো ও জলের গতি বন্ধের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কিন্তু জলের গভীরতা (রবিবার রাত ১০টা পর্যন্ত আনুমানিক সাত ফুট) ও জলস্রোতের কারণে বালির বস্তা ফেলে কাজ হয়নি। রবিবার দিনভর জলের প্রবাহ অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিতে বালির বস্তা ফেলা হয়। কিন্তু রাত ১০টা পর্যন্ত তাতেও লাভ হয়নি।
আরও পড়ুন: বাজি বিক্রি নয়, সিদ্ধান্তে কালিকাপুর বাজিবাজার
আরও পড়ুন: এ বার যাত্রী প্রত্যাখ্যানের রোগ বাইক ট্যাক্সিতেও
এক সেচ-কর্তা জানান, আপাতত ক্ষতিগ্রস্ত গেটটি ‘সিল’ করা হয়েছে। জল পুরোপুরি নামলে গেটের বাঁকা অংশে ঝালাই করে পুরু ইস্পাতের চাদর জোড়া হবে। সেচ দফতরের ইঞ্জিনিয়ার সঞ্জয় সিংহ বলেন, ‘‘ব্যারাজ ফের জলপূর্ণ হলে ‘ফ্লোটিং গেট’ এনে ক্ষতিগ্রস্ত গেটটির সামনে লাগানো হবে। তার পরে পুরনো গেটটি পাল্টানো হবে।’’ সেচ-কর্তাদের আশা, মঙ্গলবারের মধ্যে ব্যারাজে জল ভরার প্রক্রিয়া শুরু হবে। ব্যারাজের সব গেটগুলিই ফের এক বার পরীক্ষা করা হবে।
এই ঘটনার জেরে রবিবার দুর্গাপুরের ডিপিএল কলোনি-সহ কয়েকটি এলাকায় জল মেলেনি বলে অভিযোগ। তবে জেলাশাসক (পশ্চিম বর্ধমান) পূর্ণেন্দু মাজির আশ্বাস, ‘‘পানীয় জলের সমস্যা হবে না। পুরসভা, ডিএসপি, ইসিএল-সহ বিভিন্ন সংস্থা জল সরবরাহের ব্যবস্থা করছে। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর ইতিমধ্যে পাঁচ লক্ষ জলের পাউচ দিয়েছে।’’ যদিও আজ, সোমবার পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে, তা নিয়ে উদ্বেগে আছেন বাসিন্দারা। বাঁকুড়ার জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতর জানিয়েছে, শনিবার রাতেই ৩৫০ মিলিলিটার জলের ৪০ হাজার পাউচ তৈরি করে বড়জোড়া, বাঁকুড়া ১ ও ২ ব্লকে পাঠানো হয়েছে।
এরই মধ্যে করোনা পরিস্থিতিতেও ব্যারাজের শুকনো অংশে রবিবার দিনভর জনতার ভিড় দেখা যায়। চলে নিজস্বী তোলা, মাছ কেনা, ঝালমুড়ি বিক্রি। পরিস্থিতির সামাল দিতে বাঁকুড়ার বড়জোড়া ও দুর্গাপুরের কোকআভেন থানার পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।