প্রতীকী ছবি।
বাড়ির ছাদে বসে সযত্নে রাইস কুকারটা ঝাড়পোঁছ করছিলেন তিনি। চারপাশে ছড়ানো সুটকেস, ট্রলিব্যাগ।ফি বছর পুজোর দিন সাতেক আগে নবদ্বীপের শান্তিরঞ্জন দেব ভারী ব্যস্ত হয়ে পড়েন এ সব নিয়ে। শুধু তিনি নন, বছরভর খাটের তলায় রাখা বেড়ানোর সরঞ্জাম নিয়ে এমন ব্যস্ততা বেড়ে যায় অনেকেরই। কিন্তু করোনাকালে এ বার অনেক বাড়িতেই সেই ব্যস্ততা নেই।
অন্য বার পুজোর চতুর্থী কী পঞ্চমীর দিন বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন নবদ্বীপ পুরাতত্ত্ব পরিষদের সম্পাদক শান্তিরঞ্জন দেব। বাড়ি ফিরতে লক্ষ্মীপুজো পার। গত বার গিয়েছিলেন কুমায়ুন হিমালয়। কিন্তু করোনাকালে যাত্রা নাস্তি। তাই ১৯৯০ সালের পর হয়তো এ বারই প্রথম তাঁর পুজোয় ভারতভ্রমণ হল না।
তা বলে পুজোর দিনগুলো সকলে ঘরে বসেই কাটাবেন, এমনটা ভাবারও কোনও কারণ নেই। শান্তিরঞ্জনই যেমন বলছেন, “যদি এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট পাওয়া যায় তা হলে পুজোর ক’টা দিন মালদহে কাটাব। ওখানে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘে এই প্রথম বার দুর্গাপুজো হচ্ছে। পুজোর ক’টা দিন কাটিয়ে আসব ভেবেছি।”
আরও পড়ুন: উৎসবে বেপরোয়া মনোভাব ও ভিড়ে বিপদ হতে দেরি হবে না
পুজোয় ঘরে বসে থাকতে মোটেও রাজি নন শান্তিপুরের বাসিন্দা, রাজ্য জলসম্পদ দফতরের ইঞ্জিনিয়র শুক্তি বিশ্বাস দাশগুপ্তও। চতুর্থীর সকালেই তিনি স্বামী-পুত্র, শ্বশুর-শাশুড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ছেন। তাঁর কথায়,“প্রতি বার পুজোয় আমরা স্বল্প দূরত্বে বেড়াতে যাই। বাঁকুড়া, পুরুলিয়া এসব জায়গায়। এবার যাচ্ছি মুকুটমণিপুর। সপ্তমীতে ফেরা।” তবে অন্য বারের মতো বাঁধনহারা প্রাণ হয়ে বেড়াতে পারবেন কি? শুক্তি বলেন, “এ বারের পরিস্থিতি সবটাই আলাদা। একটা রিসর্ট বুক করা হয়েছে। নিজেদের গাড়িতেই যাচ্ছি।”
আরও পড়ুন: অসচেতন জনতা, ১৫ জেলায় ‘বিপদসঙ্কেত’ দেখছে স্বাস্থ্য দফতর
প্রায় ছাব্বিশ বছরের পুজো ভ্রমণে এ বার ছেদ পড়ল মোহন রায়ের। প্রতি বছর পুজোর সময়ে লম্বা সফরে বেরিয়ে পড়েন নাট্যকর্মী মোহন। গত বার চেন্নাই গিয়েছিলেন। এ বার বেড়ানো স্থগিত। তাঁর কথায়, “দু’এক দিনের বেড়ানোয় আমার মন ভরে না। তাই কাছাকাছি কোথাও বেড়ানোর পরিকল্পনা করছি না। পুজোবার্ষিকী আর বই পড়েই পুজোর দিনগুলো কাটাবো। পরিস্থিতি ঠিক হলে শীতে কোথাও যাওয়ার ইচ্ছা আছে।”
ফি বছর লক্ষ্মীপুজোর পরেই বেরিয়ে পড়তেন নদিয়া ডিস্ট্রিক্ট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ়ের যুগ্ম সম্পাদক তারক দাস। কিন্তু এ বছর বাইরে যাওয়ার ঝুঁকি নিতে রাজি নন তিনি। তাঁর কথায়, “আমার ব্যক্তিগত অভিমত হল, এই অতিমারির কালে নিয়ন্ত্রণ রাখা চাই। এখন বেড়াতে যাওয়া আদৌ কতটা সঙ্গত তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। আমি আপাতত কোথাও যাওয়ার কথা ভাবছি না।” এক সময়ে এই পুজো ভ্রমণেই দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ দেখে ফেলেছেন নবেন্দু সাহা। তিনিও এ বার যাচ্ছেন না কোথাও। নবেন্দু বলেন, “ট্রেন চললে উত্তরবঙ্গ যেতে পারি। তবে গাড়ি ভাড়া করে সড়ক পথে যাওয়ার পরিকল্পনা নেই।” হাতে রইল বেড়ানোর স্মৃতি বা অলস দুপুরে মানসভ্রমণ!