Dhapa

ধাপায় যেতে চায় না আবর্জনার ডাম্পার, বিপাকে হাওড়া পুরসভা

ধাপায় আবর্জনা ফেলা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে পুরসভার অন্দরে। কারণ, হাওড়া থেকে আবর্জনা তুলে বিদ্যাসাগর সেতু হয়ে ধাপায় যেতে বেঁকে বসেছে পুরসভার ডাম্পার সরবরাহকারী সংস্থাগুলি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২৫ ০৯:১৬
Share:
লিলুয়ায় উপচে পড়েছে ভ্যাট। বৃহস্পতিবার।

লিলুয়ায় উপচে পড়েছে ভ্যাট। বৃহস্পতিবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

হাওড়ার বেলগাছিয়া ভাগাড়ের বিকল্প হিসাবে সাময়িক ভাবে আড়ুপাড়ায় অস্থায়ী ভাগাড় তৈরি করতে গিয়ে বুধবারই হোঁচট খেয়েছিল হাওড়া পুরসভা। স্থানীয়দের আপত্তিতে সব ক’টি আবর্জনার গাড়ি সেখান থেকে নিয়ে যেতে হয়েছিল কলকাতা পুরসভার ধাপায়। এ বার ধাপায় আবর্জনা ফেলা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে পুরসভার অন্দরে। কারণ, হাওড়া থেকে আবর্জনা তুলে বিদ্যাসাগর সেতু হয়ে ধাপায় যেতে বেঁকে বসেছে পুরসভার ডাম্পার সরবরাহকারী সংস্থাগুলি। তাদের বক্তব্য, দীর্ঘদিন ধরে আবর্জনা বহন করে পুরনো ডাম্পারগুলি প্রায় ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছে। বিদ্যাসাগর সেতুর যা উচ্চ্তা, তাতে আবর্জনা-সহ ওই সেতুতে ওঠার ক্ষমতা গাড়িগুলির নেই। তাই বৃহস্পতিবার ওই গাড়িগুলি আবর্জনা সংগ্রহ না করায় হাওড়ার ১৫-১৬টি ওয়ার্ডে ফের আবর্জনার পাহাড় জমে যায়।

Advertisement

হাওড়ায় দৈনিক আবর্জনা জমে প্রায় ৬৫০ টন। কয়েক দিন ধরে এত পরিমাণ ময়লা না তোলায় শহরের বিভিন্ন ভ্যাট উপচে পড়ছিল। বুধবার সেই আবর্জনার কিছুটা তুলে শেষ পর্যন্ত ধাপায় নিয়ে গিয়ে ফেলা হলেও বৃহস্পতিবার ফের আবর্জনা জমতে থাকায় পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে ওঠে। পুরসভা সূত্রের খবর, এ দিনই ডাম্পার সরবরাহকারী সংস্থাগুলি ধাপায় যেতে না চেয়ে আবর্জনা তোলা বন্ধ করে দেয়। তাদের বক্তব্য, গাড়িগুলি হাওড়ার আবর্জনা তুলে বেলগাছিয়া ভাগাড় পর্যন্ত যেতে পারলেও বিদ্যাসাগর সেতুতে উঠতে পারবে না।

এ দিন সকাল থেকে পরিস্থিতি ঘোরালো হতেই ছুটে আসেন পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের পদস্থ আধিকারিকেরা। তাঁরা পুর চেয়ারপার্সন সুজয় চক্রবর্তী, পুর কমিশনার বন্দনা পোখরিওয়াল-সহ পুরসভার সাফাই বিভাগের ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেন। পরে পুর চেয়ারপার্সন বলেন, ‘‘ডাম্পার বিপর্যয়ের জেরে ১৫-১৬টি ওয়ার্ডে আবর্জনা তোলা যায়নি। বৈঠকে ঠিক হয়েছে, যে সব সংস্থার ডাম্পার মজবুত আছে, সেগুলি নিজেদের দায়িত্বপ্রাপ্ত ওয়ার্ডগুলি ছাড়াও ওই ১৫-১৬টি ওয়ার্ডের আবর্জনা শুক্রবার থেকে তুলবে।’’ কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, হাওড়া থেকে আবর্জনা সংগ্রহ করে ইস্টার্ন বাইপাসের ধাপায় যেতে সময় লাগবে কমপক্ষে দেড়-দু’ঘণ্টা। তাতে একটি গাড়ির পক্ষে দিনে কত বার যাওয়া-আসা করা সম্ভব? সকাল ১০টার পরে অফিসের ব্যস্ত সময়ে আবর্জনা-বোঝাই গাড়িগুলিকে কি কলকাতার রাজপথ দিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে? এর উত্তর অবশ্য মেলেনি।

Advertisement

তবে, পুর চেয়ারপার্সন জানিয়েছেন, এ দিনের বৈঠকে রাজ্য সরকার হাওড়া পুরসভার জন্য কিছু প্রাপ্তির কথা ঘোষণা করেছে। জানানো হয়েছে, কিছু দিনের মধ্যে আবর্জনার জন্য ২০টি কম্প্যাক্টর যন্ত্র পাঠানো হবে। আবর্জনা বহনের জন্য পাঠানো হবে ৩৪টি নতুন টিপার ভ্যান। এ ছাড়া, বেলিলিয়াস রোড, ইস্টার্ন বাইপাসের মতো কিছু রাস্তার সম্প্রসারণ ও মেরামতির কাজ করবে কেএমডিএ।

এ দিন পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, বেলগাছিয়ার সুরেন্দ্রনাথ ঘোষ মেমোরিয়াল হাইস্কুলে ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে চেক তুলে দেন জেলাশাসক পি দীপাপ প্রিয়া। ছিলেন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী তথা শিবপুরের বিধায়ক মনোজ তিওয়ারি ও হাওড়া সিটি পুলিশের পদস্থ কর্তারা। মনোজ নিজের বিধায়ক তহবিল থেকে ১০ লক্ষ টাকা এফ রোড সংলগ্ন এলাকার সংস্কারের জন্য বরাদ্দ করেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভূমি-ধসে সম্পূর্ণ বাড়ি ভেঙে গিয়েছে, এমন ৬০টি পরিবারের হাতে ১৫ হাজার টাকা করে এবং আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত ৫৩টি পরিবারের হাতে ১০ হাজার টাকা করে তুলে দেওয়া হয়। জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, এ পর্যন্ত ২৬০টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তার মধ্যে ১১৩টি পরিবারকে আর্থিক অনুদান দেওয়া হল এ দিন। আর্থিক অনুদানের চেক ছাড়াও শিশুদের খাবার, ফার্স্ট এড কিট-সহ বিভিন্ন উপকরণ তুলে দেওয়া হয়।

জেলাশাসক বলেন, ‘‘পরিবারগুলি ভাগাড়ের পাশের ওই জায়গা ছেড়ে অন্যত্র যেতে চাইছে না। আমরা অনুরোধ করেছি, আপাতত মাটি পরীক্ষার রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত এক সপ্তাহের জন্য এই স্কুলে এসে থাকতে। পাশে একটি ক্লাব ভবন ও স্কুল সংলগ্ন একটি বাড়িকে সংস্কার করে ওঁদের থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement