‘সিকন্দর’ বাজিমাত করবে? ছবি: সংগৃহীত।
২০২৩-এর পুনরাবৃত্তি ২০২৫-এও! সলমন খানের শেষ ইদমুক্তি দু’বছর আগে। ২০২৩-এ মুক্তি পেয়েছিল ফরহাদ শামজি পরিচালিত ছবি ‘কিসি কা ভাই কিসি কি জান’। সলমন খানের বিপরীতে পূজা হেগড়ে। ছবির প্রথম দিনের ব্যবসা ছিল ১৫. ৮১ কোটি। প্রথম দিন থেকেই প্রেক্ষাগৃহ শুনশান। সে বছরেও অনুরাগীদের মন ভরাতে পারেননি ভাইজান। পরের বছর ইদে তাঁর কোনও ছবি নেই। স্বাভাবিক ভাবেই ২০২৪-এ যখন ‘সিকন্দর’-এর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হল, ভক্তদের দিনগোনা শুরু। ২০২৫-এ আবারও হয়তো ‘বজরঙ্গি ভাইজান’ ফিরবেন, এই আশায়।
ভক্তদের সেই আশা কি পূরণ হল? ২০২৫-এর ইদ কি ‘মুবারক’ বলল সলমনকে? কলকাতা-সহ সারা বিশ্বে কী পরিমাণ বাণিজ্য করল ছবিটি?
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত, সারা দেশে প্রথম দিন ‘সিকন্দর’ ৩০.৬ কোটি টাকা ব্যবসা করেছে। যা বছর দুয়েক আগের ছবির দ্বিগুণ। সারা বিশ্বে সেই ব্যবসার পরিমাণ ২৫৪ কোটি। এমনটাই কি আশা ছিল বাণিজ্য বিশ্লেষকদের? তরণ আদর্শ, কোমল নাহাতার মতো জাতীয় স্তরের বাণিজ্য বিশ্লেষকেরা জানিয়েছেন, অনুরাগীদের আশা পূরণে ব্যর্থ ভাইজান। ফলে, পরিবেশকেরা যে ব্যবসা আশা করেছিলেন সেটা তাঁরা পাননি। জাতীয় স্তরের সমস্ত সংবাদমাধ্যম ‘সিকন্দর’-এর সমালোচনায় মুখর। দাবি, ছবিতে সলমন থাকলেও অভিনেতার উপস্থিতি ঘিরে সেই মুগ্ধতা নেই!
এ রকম পরিস্থিতিতে কলকাতাকে কি পাশে পেলেন ভাইজান? কোন প্রেক্ষাগৃহে কেমন ভিড় ছিল? প্রথম দিনের ব্যবসা কত? জানতে আনন্দবাজার ডট কম যোগাযোগ করেছিল ছবির পরিবেশক, প্রেক্ষাগৃহ কর্ণধার, বাণিজ্য বিশ্লেষকদের সঙ্গে। উত্তর কলকাতার নটী বিনোদিনী প্রেক্ষাগৃহে (পূর্বের স্টার থিয়েটার) প্রথম শো-এর দর্শকসংখ্যা সাকুল্যে ৪৫ জন! দুপুরে সেই সংখ্যা কিছুটা বাড়ে। ম্যাটিনি শো প্রায় হাউসফুল। দর্শকসংখ্যা ৫০০ জনের উপর। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাণিজ্য বিশ্লেষকের মতে, ওই প্রেক্ষাগৃহে দিনে সাড়ে তিন লক্ষেরও বেশি আয়ের সুযোগ রয়েছে। সেখানে ‘সিকন্দর’ থেকে প্রথম দিনের আয় ১ লক্ষ ১০ হাজারের কিছু বেশি। সলমনের ইদমুক্তি বলে ভাল বাণিজ্যের আশা নিয়ে পাঁচটি শো-এর মধ্যে চারটি শো ছেড়ে দেওয়া হয়েছে এই প্রেক্ষাগৃহে। প্রথম দিনের ফলাফল দেখে তাই খুশির হাসি ফোটেনি হলমালিক জয়দীপ মুখোপাধ্যায়ের মুখে। খবর, এক মাত্র এই প্রেক্ষাগৃহে সন্ধ্যার শো-তে এখনও রুক্মিণী মৈত্রের বাংলা ছবি ‘বিনোদিনী’ চলছে। ৬৭ দিনের পরেও সেই ছবি ‘সিকন্দর’-এর থেকে বেশি ব্যবসা দিচ্ছে!
ছবির ফলাফল ভাল হবে না, এই খবর নাকি আগাম ছিল প্রিয়া প্রেক্ষাগৃহের কর্ণধার অরিজিৎ দত্তের কাছে। অরিজিৎ জানিয়েছেন, তাই তিনি তাঁর হলে ‘সিকন্দর’ নেননি। ছবি না নেওয়ার বিষয়ে নবীনা প্রেক্ষাগৃহের মালিক নবীন চৌখানি অবশ্য কোনও মন্তব্য করেননি। উত্তরের নটী বিনোদিনী হলের মতোই সলমনের এ বছরের ইদের ছবি আশানুরূপ ব্যবসা করেনি মধ্য কলকাতার প্রাচী প্রেক্ষাগৃহেও। হলমালিক বিদিশা বসুর কথাতেও আশাভঙ্গের ছাপ স্পষ্ট। তিনিও চারটি শো সলমনের ছবির জন্য ছেড়ে দিয়েছেন। প্রথম দিনের ব্যবসা তাঁর আশা পূরণ করতে পারেনি। তবে ইদ এবং তার পরের দিন কিছুটা ব্যবসা দেবে— এই বিষয়ে কোনও দ্বিধা নেই তাঁর। যেমন, ইদের সন্ধ্যাতেই প্রাচী প্রায় হাউসফুল।
‘টিউবলাইট’, ‘কিসি কা ভাই কিসি কি জান’-এর পর ‘সিকন্দর’ সলমনের তৃতীয় ব্যর্থ ইদমুক্তি। অথচ ছবিতে উপাদান অনেক। রশ্মিকা মন্দানা নায়িকা, পরিচালক দক্ষিণের বিখ্যাত মুরগোদাস, খলনায়ক চরিত্রে ‘বাহুবলী’-খ্যাত ‘কাটাপ্পা’ সত্যরাজ, মারকাটারি অ্যাকশন, জনপ্রিয় সংলাপ— আরও অনেক কিছু। কেন তার পরেও সলমনের থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছে এই প্রজন্ম। প্রশ্ন ছিল সিনে বিশ্লেষক শ্যামল দত্তের কাছে। তাঁর উপলব্ধি, “সম্ভবত মৃত্যুভয়ে কাবু সলমন। যার ছাপ স্পষ্ট ছবিতে। দেখে বোঝাই গিয়েছে, জোর করে অভিনয় করছেন তিনি। কাজে মন নেই! ফলে, জোরালো সংলাপ থাকলেও অভিনেতার উপস্থিতিতে সেই জোশ নেই।” পাশাপাশি তাঁর মতে, কিছু দৃশ্যে ভিএফএক্সের কাজ দুর্বল। সলমনের ছবি মানেই জমজমাট গান। এই ছবিতে সেটাও অনুপস্থিত। এ ছাড়া, বেশ কিছু দৃশ্যে তাঁকে যথেষ্ট বয়স্ক দেখিয়েছে। সব মিলিয়ে তাই শ্যামলের আশঙ্কা, “এ ভাবে একের পর এক ছবি ব্যর্থ হলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে অভিনয় দুনিয়া থেকে সলমন খান নামটাই হয়তো মুছে যাবে।”
সলমন-অনুরাগীরা যখন তাঁদের প্রিয় অভিনেতার ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত তখনই আশার কথা শুনিয়েছেন রাজ্যের ছবি পরিবেশক শতদীপ সাহা। তাঁর কথায়, “সারা দেশে ছবি নিয়ে যে ভাবে নিন্দার ঝড় বইছে ততটাও খারাপ ছবি নয়। আগের ছবির তুলনায় এই ছবি ভাল ফল করছে। এখনই উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো কিছুই ঘটেনি।” তিনি আরও বলেছেন, “মোট ২০০টি প্রেক্ষাগৃহে ছবি মুক্তি পেয়েছে। ২০০০ হাজারেরও বেশি স্ক্রিনে দেখানো হচ্ছে ‘সিকন্দর’। দর্শক কিন্তু হইহই করে ছবি দেখছেন। অজন্তা, রূপসী-সহ একাধিক প্রেক্ষাগৃহে প্রথম দিনেই হাউসফুল বোর্ড ঝুলেছে।” তাঁর মতে, সলমনের শেষ ইদমুক্তি ১৫ কোটির ব্যবসা করেছিল। এই ছবিটি দু’দিনে ৬০ কোটির বেশি ব্যবসা করে ফেলেছে। দর্শক সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। শহর থেকে শহরতলি ‘সিকন্দর’-এ বুঁদ। এই ফলাফলকে কোনও ভাবেই তাই ‘খারাপ’ তকমা দিতে রাজি নন শতদীপ।