নিজের বোতল থেকেই তৃষ্ণার্ত বালককে জল। সোমবার পার্ক স্ট্রিটে এক ট্যাক্সিচালক। ছবি: সুমন বল্লভ
গ্রীষ্মের মেজাজমর্জির যেন খেই পাচ্ছে না আবহবিজ্ঞান। যে-গাঙ্গেয় বঙ্গের পদতল নিত্য ধুয়ে দিচ্ছে সমুদ্র, এ বার তাপমাত্রার দৌড়ে সে-ই পিছনে ফেলে দিচ্ছে দেশের মরু অঞ্চলকে! দিল্লির মৌসম ভবনের তথ্য বলছে, সোমবার রাজস্থানের জয়সলমেরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর কলকাতার উপকণ্ঠে দমদমের তাপমাত্রা পৌঁছেছে ৪১.৬ ডিগ্রিতে। রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে গরমের দাপট আরও বেশি। শুধু সোমবার নয়, কয়েক দিন ধরেই গরমে মরুভূমিকে পিছনে ফেলে চলেছে বঙ্গ। টানা তাপপ্রবাহ চলছে। তার কবলে পড়েছে উত্তরবঙ্গের মালদহ এবং দক্ষিণ দিনাজপুরও। এমনকি হিমালয়ের পাদদেশে থাকার সুবাদে যে-ডুয়ার্স সর্বদাই মনোরম, তীব্র গরমে হাঁসফাঁস করছে সে-ও।
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস, আরও অন্তত চার দিন (২১ এপ্রিল পর্যন্ত) তাপপ্রবাহ চলবে দক্ষিণবঙ্গে। তীব্র গরম চলবে উত্তরের জেলাগুলিতেও। ২২ এপ্রিল থেকে তাপমাত্রা নামতে পারে। আবহবিদেরা জানান, বঙ্গোপসাগর থেকে জোলো হাওয়া ঢুকছে না। তার ফলে গরমে বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি হয়ে ঝড়বৃষ্টি তো হচ্ছেই না। উপরন্তু দখিনা বাতাসের প্রাকৃতিক বাধার অভাবে পশ্চিম থেকে গরম হাওয়া বঙ্গে ঢুকছে অনায়াসে। অনেকটা পশ্চিমের সেই বর্গি-হানার মতো। হুহু করে বাড়ছে তাপমাত্রা। অনেক জায়গায় স্বাভাবিকের থেকে ৫-৭ ডিগ্রি উপরে উঠে যাচ্ছে।
হাওয়া অফিসের খবর, এ দিন পশ্চিম বর্ধমানের পানাগড়ে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি ছুঁয়েছে। বীরভূমের শ্রীনিকেতনে ৪৩.২ ডিগ্রি। সকলকে ছাপিয়ে গিয়েছে বাঁকুড়া, ৪৩.৭ ডিগ্রি। হাওড়ার উলুবেড়িয়ায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছুঁয়েছে, স্বাভাবিকের থেকে প্রায় ছয় ডিগ্রি বেশি। কলকাতা এবং সল্টলেকে এ দিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ ডিগ্রি। ক্যানিং, কাঁথি, ঝাড়গ্রামেও তীব্র গরমে ভাজাপোড়া হতে হয়েছে মানুষকে। হাওড়ার বাগনান, হুগলির গোঘাট, কামারপুকুর-সহ বেশ কিছু এলাকায় জলস্তর নেমে সঙ্কট দেখা দিয়েছে। মালদহ ও বালুরঘাটে তাপপ্রবাহ বয়েছে। ওই দুই জায়গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এ দিন স্বাভাবিকের থেকে যথাক্রমে ছয় ও ৬.৭ ডিগ্রি বেশি ছিল।
নাভিশ্বাস ওঠা গরমে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। পূর্ব মেদিনীপুরে জেলাশাসকের অফিসে এ দিন বৈঠক চলাকালীন তীব্র গরমে অজ্ঞান হয়ে যান নন্দকুমারের মহিলা বিডিও শানু বক্সী। তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তাঁর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। গরমে বীরভূম, পশ্চিম বর্ধমানের বহু এলাকায় রেললাইনেও বিশেষ নজরদারি চলছে। কয়েক দিনের তাপপ্রবাহের জেরে ডায়মন্ড হারবারের গ্রামীণ এলাকার বহু পুকুর-খাল-বিল শুকিয়ে গিয়েছে। জলস্তর নেমে যাওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় নলকূপ অকেজো। উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গা ও আমডাঙা ব্লকের চাষিরা জানান, চড়া রোদে ধান, পাট, ঝিঙে, পটল, টোম্যাটো-সহ বিভিন্ন গ্রীষ্মকালীন আনাজের ক্ষতি হচ্ছে।
উত্তরবঙ্গে মালদহ এবং দক্ষিণ দিনাজপুরে তাপপ্রবাহের পাশাপাশি বাকি জেলাতেও তীব্র দহন চলছে। এ দিন আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, জলপাইগুড়িতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬-৩৭ ডিগ্রিতে পৌঁছয়। বাগডোগরার তাপমাত্রা ছিল ৩৮.৯ ডিগ্রি। এই পরিস্থিতিতেও রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি চলছে। নবী মুম্বইয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সভায় উপস্থিত ১১ জনের মৃত্যুর পরেও। এ দিন উত্তরবঙ্গে বিজেপি, তৃণমূল ও বামেদের কর্মসূচি ছিল। কোচবিহার উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রে দু’টি বুথ-সভা ছিল বিজেপির। প্রতিটি দলই দাবি করছে, প্রখর রোদে তারা সভা-মিছিল করছে না। দুপুরে কোনও সভা হলে তা হচ্ছে ঘরের ভিতরে।