দু’পায়ে শিকল বাঁধা ক্রান্তির সেই কিশোরীর। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক
কিশোরী মেয়ে নাকি বাউন্ডুলে। আর তাই ষোড়শী মেয়ের পায়ে বছরখানেক ধরে শিকল বেঁধে তাকে আটকে রেখেছেন মা। সহজ সরল হওয়ার সুযোগ নিয়ে মেয়েকে যদি কেউ তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে, এই আতঙ্কই সারা ক্ষণ তাড়া করে জলপাইগুড়ির ক্রান্তির বাসিন্দা লক্ষ্মী বণিককে।
মেয়েকে নিয়ে বাড়িতে একাই থাকেন লক্ষ্মী। অভিযোগ, মেয়ের দু’পায়ে সারাদিন শিকল বেঁধে রাখেন তিনি। জানালেন, কেক-চকলেট খেতে ভালবাসে মেয়ে। খাবারের লোভ দেখিয়ে বা ঘুরতে যাওয়ার টোপ দিয়ে মেয়েকে ভুলিয়ে নিয়ে যেতে পারে যে কেউ। সেই আশঙ্কায় পায়ে বেড়ি পরিয়েছেন তিনি। ক্রান্তি পার্কে তাঁর ছোট একটি দোকান আছে। সেই দোকানে তাঁকে প্রায় সারাদিনই থাকতে হয়। একলা মেয়েকে তখন বাড়িতেও রাখতে সাহস পান না তিনি। শিকল-পরা অবস্থাতেই সঙ্গে করে নিয়ে যান দোকানে। আবার সন্ধেয় বাড়ি ফিরে আসেন মেয়েকে নিয়ে। সন্ধেয় কিছু ক্ষণ শিকল খুলে রাখেন। রাতে শুতে যাওয়ার আগে ফের শিকল পরিয়ে দেন মেয়ের পায়ে।
এ ভাবে কাউকে শিকল পরিয়ে রাখা তো অপরাধ! উত্তরে লক্ষ্মী জানান, তা তিনি বিলক্ষণ জানেন। তা হলে মেয়েকে বেঁধে রাখেন কেন? লক্ষ্মীর জবাব, ধর্ষণ বা যৌন হেনস্থার শিকার হওয়ার ভয়েই তিনি মেয়ে বাড়িতে বেঁধে রাখেন। আরও জানালেন, মেয়ে একটু সহজ-সরল। কিছুটা বোকাও। হুটহাট করে মেয়ে বাইরে চলে গেলে তাঁর ভয় হয়। চারপাশে যে ভাবে রোজ ধর্ষণ আর যৌন নির্যাতনের খবর শুনছেন, তাতে তাঁর আতঙ্ক আরও বাড়ছে। এ ভাবে আর কত দিন মেয়েকে ‘আটকে’ রাখবেন? লক্ষ্মীও সেটা বোঝেন। তাঁর বক্তব্য, মেয়ে বড় হয়ে গেলে তাকে আর এ ভাবে রাখা সম্ভব নয়। আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় মেয়েকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়িয়ে স্কুল থেকে ছাড়িয়ে দিয়েছেন। তাকে হোমে রাখার ব্যবস্থা করা যায় কি না তা-ও খোঁজ করে দেখবেন বলে জানান লক্ষ্মী। জলপাইগুড়ির মনোরোগ বিশেষজ্ঞ আশিস সরকারের কথায়, “বর্তমান সমাজে মেয়েদের উপরে নির্যাতন বেড়ে চলার প্রভাব পড়েছে মেয়েটির মায়ের উপরেও। যাকে পরিভাষায় বলে প্যানিক ডিজ়অর্ডার ।”
মেয়ের অবশ্য ভ্রূক্ষেপ নেই এ সবে। পা বাঁধা অবস্থাতেও চিলতে হাসির ছোঁয়া মেয়েটির মুখে। তাঁর কথায়, “মা বলেছে বড় হলে শিকল খুলে দেবে। তখন ঘুরতে যাব। আমার ডাক্তার হতেও খুব ইচ্ছে করে।”