Duare Sarkar

কৃষক-বন্ধুর টাকা বিলিতে আইনি প্রশ্ন 

প্রশ্ন, কাদের পরচা-খতিয়ানের রেকর্ড ভূমি দফতরের পোর্টালে থাকে? মিউটেশন না হলেও কি কারও নামে পরচা-খতিয়ান তৈরি করে দেওয়া সম্ভব? 

Advertisement

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০২০ ০৩:১৬
Share:

—ফাইল চিত্র।

জমির মালিকানার কাগজ না থাকায় কয়েক লক্ষ চাষি রাজ্য সরকারের কৃষক বন্ধু প্রকল্পের টাকা পাচ্ছেন না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে এমনই অভিযোগ জমা পড়েছিল। সমাধানও করে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী নিজেই। জানিয়েছিলেন, কোনও চাষি জমির মালিকানা সম্পর্কিত স্বেচ্ছা ঘোষণা করলেই তাঁকেই কৃষক বন্ধুর টাকা দিয়ে দিতে হবে। মালিকানার কাগজ বা পরচা-মিউটেশন না থাকলেও চলবে।

Advertisement

এ নিয়ে ফাঁপড়ে পড়েছিল ভূমি দফতর। কারণ, জমির মালিকানার পাকা কাগজ না থাকা সত্ত্বেও যদি কাউকে স্রেফ স্বঘোষণা বা দাবি অনুযায়ী সরকারি সুবিধা পাইয়ে দেওয়া হয় তা হলে ভবিষ্যতে জমি বিবাদ সংক্রান্ত বহু মামলা হতে পারে। সরকারি সাহায্যের দাবি কাগজ দেখিয়ে অনেকে জমির মালিকানাও দাবি করতে পারেন। সেই সমস্যা কী ভাবে এড়ানো যাবে তা নিয়ে শলা পরামর্শ করে নতুন নির্দেশ জারি করেছে ভূমি দফতর। তবে দাবি করলেই জমির মালিকানা দেওয়ার কোনও নির্দেশ দেওয়া হয়নি।

গত ৩ ডিসেম্বর রাজ্যের ভূমি অধিকর্তা এক নির্দেশে জানিয়েছেন, দুয়ারে সরকার কর্মসূচিতে কৃষক বন্ধু প্রকল্পের সুবিধা নিতে অনেকেই আসবেন। সে ক্ষেত্রে দ্রুত পরিষেবা দিতে শিবিরেই ভূমি দফতর কম্পিউটার-প্রিন্টার রাখবে। সেখানে কোনও চাষি জমির মালিকানা দাবি করলে তা ভূমি দফতরের পোর্টাল থেকে তৎক্ষণাৎ দেখে নিতে হবে। তাতে সংশ্লিষ্ট চাষির নামে আরওআর বা পরচা-খতিয়ান হয়ে থাকলে তার স্ক্রিন শট নিয়ে আবেদনের সঙ্গে জুড়ে দিতে হবে। তার ভিত্তিতেই কৃষক বন্ধু সুবিধা পেয়ে যাবেন চাষিরা।

Advertisement

প্রশ্ন, কাদের পরচা-খতিয়ানের রেকর্ড ভূমি দফতরের পোর্টালে থাকে? মিউটেশন না হলেও কি কারও নামে পরচা-খতিয়ান তৈরি করে দেওয়া সম্ভব?

ভূমি কর্তারা জানাচ্ছেন, জমির মালিকানা সংক্রান্ত সংবেদনশীল বিষয়ে তা কোনওভাবেই সম্ভব নয়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, সংশ্লিষ্ট চাষির নামে জমির খতিয়ান থাকলেও তিনি কখনও তা ভূমি দফতর থেকে সংগ্রহ করেননি। তাঁদের দ্রুত কাজটি করে দেওয়া হচ্ছে মাত্র। নতুন ব্যবস্থায় জমির রেজিস্ট্রেশনের সঙ্গে সঙ্গে খসড়া খতিয়ান রেজিস্ট্রি অফিস থেকে ভূমি দফতরে চলে আসে। সেগুলিও দ্রুত করে দেওয়া সম্ভব। কৃষক বন্ধুর সুবিধা পেতে চাষিরা কাগজপত্রসহ আবেদন করলে পরচা-খতিয়ান দ্রুত দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু কোনওভাবেই

কারও দাবি বা স্বেচ্ছা ঘোষণার ভিত্তিতে জমির মিউটেশন করে দেওয়া সম্ভব নয়।

এক ভূমি কর্তার কৌতুকভরা মন্তব্য,‘‘তেমন করতে হলে তো কেউ যদি এসে গড়ের মাঠের মালিকানা চেয়ে স্বেচ্ছা দাবি করেন, তাঁকেও মিউটেশন করে দিতে হবে।’’

তা হলে মুখ্যমন্ত্রীর এত উদ্বেগ কেন? কর্তাদের দাবি, ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী রাজ্যে চাষির সংখ্যা ৭৩ লক্ষ। কিন্তু তিন বছর ধরে কৃষক বন্ধু প্রকল্প চালানোর পরেও দেখা যাচ্ছে ৪০ লক্ষের

কিছু বেশি চাষি এই সুবিধা পাচ্ছেন। বহু জেলা থেকে অভিযোগ এসেছে, ভূমি দফতর থেকে মিউটেশন করে দেওয়া হচ্ছে না বলেই প্রায় ২৫ লক্ষ চাষি কৃষক বন্ধুর সুবিধা পাচ্ছেন না। মালিক-বর্গাদারের আকাচাআকচিতেও অনেকে কৃষক বন্ধুর সুবিধা পাচ্ছেন না। এ দিকে বিরোধী দল বিজেপি ছোট-বড় সব নেতাই পিএম কিষান প্রকল্পে ৭৩ লক্ষ চাষির অ্যাকাউন্টে বছরে ৬ হাজার টাকা দেওয়ার জন্য চাপ বাড়াচ্ছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement