মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল ছবি।
মেঘভাঙা বৃষ্টির জেরে প্রাকৃতিক হ্রদ ফেটে জল নেমে এসে সম্প্রতি সিকিমে যে বিপর্যয় ঘটেছে, তার আঁচ বাংলার পাহাড়েও পড়েছে। প্রভাব পড়েছে আলিপুরদুয়ার, কালিম্পং ও জলপাইগুড়ির তিস্তাপারেও। সেখানকার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির জন্য দুয়ারে সরকার শিবির খুলতে চলেছে রাজ্য সরকার। বৃহস্পতিবার এ কথা ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এক্স (পূর্বতন টুইটার) হ্যান্ডলে মুখ্যমন্ত্রী জানান, সিকিমের বন্যা-বিপর্যয়ের জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাংলার পাহাড় ও ডুয়ার্সও। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির কাছে সাহায্য পৌঁছে দিতেই এই সিদ্ধান্ত। কোথায় কবে দুয়ারে সরকারের শিবির বসবে, তা সংশ্লিষ্ট জেলার জেলাশাসকেরা জানিয়ে দেবেন। এ প্রসঙ্গে কালিম্পঙের জেলাশাসক শুভ্রমনিয়াম পি বলেন, ‘‘কালিম্পং জেলায় মূলত তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েতে দুয়ারে সরকারের বিশেষ শিবির হবে৷ তিস্তা, তিস্তা ও সামথার এবং সামসে গ্রাম পঞ্চায়েতে ৬, ৭ ও ৮ তারিখ শিবির হবে। মূলত দরকারি নথি, যেগুলো তিস্তার জলে ভেসে গিয়েছে, সেই সব নথি ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে তুলে দেওয়াই এই শিবিরের মূল লক্ষ্য।’’ জলপাইগুড়ির জেলাশাসক সামা পারভিনও বলেন, ‘‘জেলায় মোট ১৫টি শিবিরের প্রস্তুতি চলছে। মালবাজার, ক্রান্তি ও ময়নাগুড়ি ব্লকে আয়োজিত হবে। জলপাইগুড়ি জেলায় ৭ ও ৮ নভেম্বর শিবির হবে এবং পরিষেবা প্রদান করা হবে ১৭ ও ১৮ নভেম্বর।’’
গত ৪ অক্টোবর উত্তর সিকিমের লোনাক হ্রদের জল উপচে তা ধাক্কা দেয় চুংথাং জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জলাধারে। তার চাপে জলাধারের একাংশ ভেঙে প্রবল গতিতে নেমে আসে নীচে। তিস্তার তাণ্ডবে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় সিকিমের সঙ্গে সংযোগ রক্ষাকারী ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের একাংশ। প্রবল ক্ষতিগ্রস্ত সিকিমের রাজধানী গ্যাংটক-সহ রংপো, দিকচু, সিংটাম। মৃত্যু হয় অনেকের। এর প্রভাব প়ড়েছিল এ রাজ্যের তিস্তা নদী সংলগ্ন এলাকাগুলিতে। মমতার নির্দেশে সেই সময় কালিম্পঙের বিপর্যস্ত এলাকা ঘুরে দেখে এসেছেন রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। নদীপারের ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের ত্রাণ শিবিরে রাখা হয়েছে। সেই শিবির সরেজমিনে ঘুরে দেখেছিলেন মন্ত্রী। তিনি জানিয়েছিলেন, উত্তরবঙ্গের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জিটিএ-কে রাজ্যের কোষাগার থেকে ২৪ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। পরে মন্ত্রিসভার বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্ত মতো আরও চার মন্ত্রী ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে কালিম্পং যান।
সিকিম বিপর্যয়কে কেন্দ্র করেও ‘কেন্দ্রীয় বঞ্চনা’র অভিযোগ করেছিল শাসকদল তৃণমূল। অরূপের অভিযোগ ছিল, ‘‘সিকিমকে কেন্দ্র সাহায্য করছে। আমাদের তাতে কোনও আপত্তি নেই। ভয়ঙ্কর অবস্থা সিকিমের। আমরা চাই, আরও বেশি করে ওদের সাহায্য করা হোক। কিন্তু কালিম্পংও ভারতের মধ্যে পড়ে। কেন কালিম্পংকে বঞ্চিত করা হচ্ছে? এক টাকাও কালিম্পঙের জন্য বরাদ্দ করা হল না। সব সময়েই বাংলার প্রতি বিমাতৃসুলভ আচরণ করা হয়। ১০০ দিনের কাজ, আবাস যোজনার টাকা সব রাজ্য পাবে। শুধু বাংলা পাবে না। দুর্যোগ হলে ক্ষতিপূরণ পায় সব রাজ্য। বাংলা পায় না।’’
অরূপের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে দার্জিলিঙের বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তা বলেছিলেন, ‘‘ঘটনার চার দিন পর ছবি তোলার জন্য উনি মাঠে নেমেছেন। অন্য দিকে, ঘটনার দিন থেকেই সিকিমের মুখ্যমন্ত্রীকে দেখুন। রাত দিন এক করে কাজ করছেন। অরূপ বিশ্বাসের কাছে আমি জানতে চাই, ২০২১ সালে যখন ভূমিধস হয়েছিল, ৪৭৫ কোটি টাকা কেন্দ্রের থেকে আমি এনেছিলাম। অরূপদা বলুন, দার্জিলিং, কালিম্পঙের লোকেরা কত টাকা পেয়েছেন? আমাদের প্রশ্ন করার আগে নিজেদের প্রশ্ন করুন। দার্জিলিং ও কালিম্পঙের মানুষের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের যা করা দরকার, সেটা করবে। কেন্দ্রের ফান্ডের জন্য রিপোর্ট পাঠাতে হয়। যেটা সিকিম প্রথম দিন থেকেই করছে। আমি চিঠি লিখেছি কেন্দ্রের কাছে। অবশ্যই টাকা বরাদ্দ হবে।’’