দুর্গাপুর শহর জুড়ে ট্যাঙ্কারে করে জল সরবরাহ করা হচ্ছে। —নিজস্ব চিত্র।
দুর্গাপুর ব্যারেজে বিপর্যয়ের জেরে ওই শিল্পাঞ্চল জুড়ে তীব্র জলকষ্ট দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতি সামলাতে সাহায্য করছে কলকাতা পুরসভা। স্থানীয় প্রশাসনের তরফে দুর্গাপুরবাসীর কাছে পানীয় জল সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রশাসনের আশ্বাস, বৃহস্পতিবার সকালের মধ্যে আসানসোল এবং দুর্গাপুরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
মঙ্গলবার দুর্গাপুর ব্যারেজে লকগেট ভাঙার জেরে জলসঙ্কটের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে দুর্গাপুর শহরে। যদিও দুর্গাপুর শহরে তেমন পানীয় জলের সমস্যা হচ্ছে না বলে দাবি করেছেন পুরনিগমের মেয়র পারিষদ (জল) পবিত্র চট্টোপাধ্যায়। তবে স্থানীয় সূত্রে খবর, ডিপিএল টাউনশিপ, সেপকো টাউনশিপে, বিধাননগর, সুকুমারনগর, সগড়ভাঙা, মহানন্দা কলোনি-সহ শহরের বেশ কিছু জায়গায় জলসঙ্কট দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কলকাতা পুরসভা থেকে এ দিন ট্যাঙ্কারে করে দুর্গাপুরে জল সরবরাহ করা হয়। পানীয় জলের সমস্যা মেটাতে উদ্যোগী হয়েছে স্থানীয় প্রশাসনও।
প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, দুর্গাপুর শহর জুড়ে ৮৫টি ট্যাঙ্কারে করে জল সরবরাহ করা হচ্ছে। এলাকাবাসীর চাহিদার কথা জেনে স্থানীয় কাউন্সিলরা এক একটি ওয়ার্ডে ৫ থেকে ৬টি ট্যাঙ্কারে করে জল নিয়ে যাচ্ছেন। সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করা হলেও গাড়ি ধোয়া বা দৈনন্দিন অন্যান্য কাজের জন্য জলের দাহিদা রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে সে সমস্যার কথা মাথায় রেখে শহরের ১১টি জায়গায় মাটির তলা থেকে পাম্প বসিয়ে জল তোলার ব্যবস্থা করেছে দুর্গাপুর পুরনিগম। এর পর তা বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: মাথাব্যথা ভিড় নিয়েই, কোন রুটে কত লোকাল দরকার, বৈঠকে রেল-রাজ্য
দুর্গাপুর শহর ছাড়াও আসানসোলের জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর এবং ইসিএলের তরফে জলের ট্যাঙ্কারে করে জল নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এলাকায়। পুলিশের তরফেও যথাসাধ্য সাহায্য করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রশাসনিক কর্তারা।
২০১৭ সালের ২৪ নভেম্বর দুর্গাপুর ব্যারাজে লকগেট ভাঙার ঘটনা ঘটেছিল। সে সময় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলে শহরবাসীর কাছে অন্তত পানীয় জলটুকু যেন পৌঁছে দিতে পারে পুরনিগম, তা খেয়াল রাখা হবে। তবে গত কয়েক দিন ধরে জলসঙ্কটের পরিস্থিতি দেখা দেওয়ায় সে সিদ্ধান্তের রূপায়ণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
আরও পড়ুন: পুলিশি অভিযান, ক্রেতাদের অনিচ্ছা, জোড়া ফলায় শব্দ জব্দ উত্তর ২৪ পরগনায়
পানীয় জল সরবরাহের পাশাপাশি দুর্গাপুর ব্যারাজের লকগেট মেরামতের কাজও শুরু করেছে প্রশাসন। মেরামতির কাজ শুরু হওয়ায় কিছুটা হলেও আশ্বস্ত দুর্গাপুরবাসী। এ দিন প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, বাঁধের ভিতরে জমে থাকা জল পাম্প দিয়ে বার করে লকগেট মেরামতির কাজ শুরু করা হয়। বৃহস্পতিবার মেরামতির কাজ সম্পন্ন করবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন সেচ দফতরের আধিকারিকেরা। তাঁরা জানিয়েছেন, সব কাজ ঠিকঠাক এগোলে দুর্গাপুর তথা বাঁকুড়ার বিস্তীর্ণ এলাকায় শুক্রবার থেকেই পানীয় জল সরবরাহ শুরু করা হবে। এ দিন সেচ দফতরের সচিব গৌতম চট্টোপাধ্যায় এবং পশ্চিম বর্ধমানের জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি জোর গলায় আশ্বাস দেন, ‘‘বৃহস্পতিবার রাত ১০টার মধ্যে জল সরবরাহ শুরু হয়ে যাবে।’’