আরজি কর হাসপাতাল চত্বরে বিক্ষোভরত জুনিয়র চিকিৎসকেরা। —ফাইল চিত্র।
সুপ্রিম কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত পদক্ষেপ করে আরজি করের মামলা শুনছে। প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চে বৃহস্পতিবারও সেই মামলার শুনানি ছিল। হাসপাতালের জুনিয়র চিকিৎসকদের কাজে ফেরার অনুরোধ করেছে শীর্ষ আদালত। সেই অনুরোধের পর শুক্রবার থেকে ছবিটা বদলাবে বলে আশা করেছিলেন অনেকেই। মনে করা হয়েছিল, আন্দোলনরত চিকিৎসকেরা কাজে ফিরবেন। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে ছবিটা বদলাচ্ছে না। কর্মবিরতি এখনই তুলে নেওয়া হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। রাজ্যের সব সরকারি হাসপাতালেই কর্মবিরতি চলবে। বৃহস্পতিবার রাতে জেনারেল বডি (জিবি) বৈঠকের পর আন্দোলনকারীদের তরফ থেকে জানানো হয়, ঘটনার সঙ্গে যুক্তদের সকলে গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত সুবিচার হবে না। শুক্রবার সিবিআই দফতরে গিয়ে তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে জানার পর কর্মবিরতি নিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সুপ্রিম কোর্টের আশ্বাসের পর বৃহস্পতিবার থেকে কর্মবিরতি তুলে নিয়েছে দিল্লি এমস হাসপাতাল। সেখানকার চিকিৎসক পড়ুয়ারা গত ১১ দিন ধরে কলকাতার আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে কর্মবিরতি পালন করছিলেন। বৃহস্পতিবার তাঁরা জানিয়েছেন, কর্মবিরতি তুলে নেওয়া হচ্ছে। আপাতত শীর্ষ আদালতের আশ্বাসে তাঁরা ভরসা রাখছেন।
শুধু দিল্লি এমস নয়, মুম্বই থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন চিকিৎসক সংগঠন বৃহস্পতিবার কর্মবিরতি তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে চিকিৎসকদের আন্দোলন চলবে। আপাতত আন্দোলনের চরিত্র বদলের কোনও সম্ভাবনাও নেই বলে জানিয়েছেন তাঁরা। আরজি কর হাসপাতালে আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকেরা এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন বৃহস্পতিবার রাতে।
আরজি করে মৃত চিকিৎসকের সুবিচার এবং দেশ জুড়ে বিভিন্ন স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসক এবং কর্মচারীদের সুরক্ষার দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়েছিল ৯ অগস্ট থেকে। আরজি কর হাসপাতালের গণ্ডি ছাড়িয়ে ক্রমে তা ছড়িয়ে পড়ে রাজ্যে রাজ্যে। এই মামলাটি গ্রহণ করে সুপ্রিম কোর্ট শুরুতেই পদক্ষেপ করেছে। দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বিশেষ টাস্ক ফোর্স গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রককে একটি পোর্টাল খুলে এই সংক্রান্ত অভিযোগ গ্রহণের কথাও বলেছে শীর্ষ আদালত। বৃহস্পতিবার আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের উদ্দেশে অনুরোধ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘দয়া করে আমাদের উপর ভরসা রাখুন এবং কাজে ফিরুন।’’ এর পরেই একাধিক চিকিৎসক সংগঠন কর্মবিরতি তুলে নেওয়ার কথা ঘোষণা করে।
কলকাতায় আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের অনেক দাবিই মেনে নেওয়া হয়েছে। আরজি করের শীর্ষ আধিকারিকদের অপসারণ চেয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা। বুধবার রাতেই অধ্যক্ষ, পালমোনারি মেডিসিনের বিভাগীয় প্রধান, সুপার এবং সহকারী সুপারকে সরিয়ে দেয় স্বাস্থ্য ভবন। প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকেও পদ থেকে সরানো হয়। কিন্তু এখনও তার পরেও কর্মবিরতি ওঠেনি। আন্দোলনকারীদের দাবি, সুবিচার চেয়ে তাঁরা পথে নেমেছিলেন। দোষীদের শাস্তি না হলে কাজে ফিরবেন না।