ফাইল চিত্র
কোথাও কৃত্রিম জলাশয় তৈরি করে প্রতিমা বিসর্জন। কলকাতায় গঙ্গার ঘাটগুলি কড়া নিরাপত্তায় মুড়ে গার্ডরেলের বেষ্টনী পেরোতে দেওয়া হল না প্রতিমা বিসর্জন দিতে আসা সকলকে। অতিমারি আবহে এ-হেন সতর্কতার ছবি দেখে শুক্রবার একটা প্রশ্নই উঠে আসে, দেবীপক্ষের শেষ দিনে এসে তবেই কি বোধোদয় ঘটল?
চিকিৎসকরা অবশ্য বলছেন, আর বোধোদয় ঘটেও লাভ নেই। বিপদের যে ছাইচাপা আগুন ছিল, করোনা বিধি উড়িয়ে পুজো দেখতে রাস্তায় ভিড় করা লোকজন সেটিকে একশো শতাংশ উস্কে দিয়েছেন। এক সংক্রমণ বিশেষজ্ঞ বলেন, “পুজোর উদ্যোক্তা ও প্রশাসনের সকলে নিজের দায়িত্ব পালন করেননি, মেনে নিলাম। কিন্তু মানুষ কী করে এতটা দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ করলেন, সেটাও তো প্রশ্ন। মানুষজন কি পুরনো স্মৃতি সব ভুলে গিয়েছেন!” কলকাতার এক করোনা চিকিৎসার হাসপাতালের প্রবীণ চিকিৎসক জানাচ্ছেন, এখন সময়ের অপেক্ষা। এত দিনের দাপাদাপির ফলাফল প্রকাশ পাবে খুব তাড়াতাড়ি। তাতে শতাংশের হিসেবে পাশ ও ফেলের মধ্যে কোনটা বেশি হবে, তা এখন বলা যাচ্ছে না। ওই চিকিৎসক বলেন, “ভিড়ে ঠাসাঠাসি করা লোকজনের ক’জন আক্রান্ত হবেন, আর ক’জন হবেন না, তা এখনই বলা সম্ভব নয়। তবে গতিক ভাল নয়। মৃদু উপসর্গ থাকা সত্ত্বেও বহু মানুষই এখন করোনা পরীক্ষা করাচ্ছেন না।”
এই প্রবণতা আরও বড় রকমের বিপদ ডেকে আনবে বলে অনেক চিকিৎসকের আশঙ্কা। কারণ, শরীরে কোভিড নিয়ে অবাধে রাস্তায় ঘুরে ওই রোগী অন্যদের মধ্যে ভাইরাস ছড়াবেন। কোমর্বিডিটি থাকা কিংবা বয়স্ক ব্যক্তি তাতে আক্রান্ত হলে বিপদ কয়েক গুণ বাড়বে। এমনকি প্রাণসংশয়ও হতে পারে। স্বাস্থ্য শিবিরের বক্তব্য, অতিমারির তৃতীয ঢেউয়ের আশঙ্কা এখনও বঙ্গের পরিমণ্ডলে ঘুরপাক খাচ্ছে। তাই এ বছর অন্তত পুজোর ভিড় কড়া হাতে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত ছিল। শহরের এক প্রবীণ চিকিৎসকের কথায়, “পুজো বন্ধের কথা কিন্তু কখনওই কেউ বলেননি। শুধু বলা হয়েছিল, পুজোর উচ্ছ্বাসে রাশ টানা হোক। রাস্তায় ভিড় ঠেলে প্যান্ডেল হপিং বন্ধ রাখা হোক। করোনা বিধি মেনে নিজের বাড়ি বা পাড়ার মণ্ডপে থাকতে তো কাউকে বারণ করা হয়নি। কিন্তু কে আর কথা শুনলেন!” অতএব এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা করছেন চিকিৎসকদের একাংশ। তাঁরা জানাচ্ছেন, করোনা পরীক্ষা অত্যন্ত কম হওয়ার ফলেই আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা জানা যাচ্ছে না। শুক্রবার স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন অনুযায়ী রাজ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪৫১ জন।
আক্রান্তের সংখ্যা ৭০০ থেকে ৪০০-র ঘরে নেমে এলেও জনগণের আত্মতুষ্টির কোনও জায়গা নেই বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। টিকার জোড়া ডোজ়ের পরেও অনেকেই সংক্রমিত হয়েছেন। অনেকের অবস্থা হয়তো সঙ্কটজনক হয়নি। সকলের ক্ষেত্রে ধাক্কা কম হবে, এমনটা ভেবে নেওয়ারও কারণ নেই বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসক ও সংক্রমণ বিশেষজ্ঞেরা। তাঁরা বলেন, “অতিমারির বাঘ কাকে পুরো কামড়াবে আর কাকে থাবা মারবে, সেটা আগাম বলা সম্ভব নয়।”