যা আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, তা পাওয়া গেল কি! পাওয়া গেলে কতটা পাওয়া গেল? কতটাই বা মিলল না?
আন্দোলন প্রত্যাহারের এক মাসের মাথায় জুনিয়র চিকিৎসকদের অন্দরমহলে ঘুরপাক খাচ্ছে এই প্রশ্ন। এই সব প্রশ্নের উত্তর পেতে লালবাজার অভিযানের পরিকল্পনাও ছিল। কিন্তু অনুমতির গেরোয় জুনিয়র চিকিৎসকদের দাবিদাওয়া নিয়ে আপাতত টানাপড়েন চলছে।
রোগী-মৃত্যুর অভিযোগের প্রেক্ষিতে চিকিৎসক-নিগ্রহের ঘটনায় ১০ জুন নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আন্দোলন শুরু হয়। সে-দিনের গন্ডগোলে গুরুতর আহত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন ছিলেন এনআরএসের জুনিয়র চিকিৎসক পরিবহ মুখোপাধ্যায়। সুস্থ হয়ে আপাতত কাজে যোগ দিয়েছেন তিনি। কিন্তু নবান্নের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেওয়া যে-সব প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে আন্দোলন তুলে নেওয়া হয়েছিল, সেগুলো সামগ্রিক ভাবে বাস্তবায়িত হয়নি বলে জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশের অভিযোগ।
নবান্নের সেই বৈঠকে উপস্থিত একাধিক জুনিয়র চিকিৎসক শুক্রবার বলেন, ‘‘চিকিৎসক-নিগ্রহের ঘটনায় ধৃত পাঁচ জন পরে জামিনে ছাড়া পেয়ে গেল। যাদের ধরা হল, তারা আদৌ দোষী কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন আছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বা ঘটনার ভিডিয়ো ক্লিপিংস দেখে কাউকে গ্রেফতার করা হল না কেন? মুখ্যমন্ত্রী ওই ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু সেটাই তো হল না!’’
স্বাস্থ্যে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি
যৌথ পরিদর্শন
• কলকাতার পাঁচটি মেডিক্যালে হয়েছে। অপেক্ষার তালিকায় সাগর দত্ত-সহ জেলার হাসপাতাল।
আদর্শ আচরণবিধি
• খসড়া এখনও চূড়ান্ত রূপ পায়নি।
• ওয়ার্ডে পরিজনদের যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ সন্তোষজনক।
রক্ষী বৃদ্ধির প্রস্তাব
• টেন্ডারের গেরোয় আটকে আছে।
অ্যালার্ম
• এনআরএস, ন্যাশনাল, আরজি করে রয়েছে।
তার পরিকাঠামো উন্নয়নের প্রক্রিয়া চলছে। চালু করতে সময় লাগবে, বলছে কলকাতা মেডিক্যাল।
জনসংযোগ কেন্দ্র
• চালু হয়েছে। তবে পরিষেবা নিয়ে কোথাও কোথাও বেশ কিছু অসন্তোষও রয়েছে।
গন্ডগোলে কী করবেন
• প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা ছিল চিকিৎসক ও রক্ষীদের। তেমন কিছু হয়েছে বলে জানাতে পারেননি চিকিৎসকেরা।
এই প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার এনআরএস থেকে লালবাজার পর্যন্ত মিছিলের অনুমতি চেয়ে প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছিল জুনিয়র ডাক্তারদের মঞ্চ। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, মিছিলে সায় ছিল না প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তরের। তাই কর্মসূচি ঠেকাতে বৃহস্পতিবার জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধির সঙ্গে স্বাস্থ্য ভবনে একটি বৈঠক হয়। তাঁদের বক্তব্য জানাতে আজ, শনিবার ভবানী ভবনে পুলিশকর্তার সঙ্গে জুনিয়র ডাক্তারদের বৈঠকে বসার কথা। এরই মধ্যে মিছিলের জন্য আবেদন জানাতে জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধিরা লালবাজারে গেলে তাঁদের খালি হাতে ফিরতে হয়। প্রতিনিধিরা জানান, পুলিশের তরফে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য ভবন থেকে ‘নো অবজেকশন’ ছাড়া অনুমতি দেওয়া সম্ভব নয়!
দোষীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা তো নেওয়াই হয়নি। অন্যান্য প্রতিশ্রুতি পূরণ নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। যৌথ পরিদর্শনের পরে নিরাপত্তা সংক্রান্ত যে-আদর্শ আচরণবিধি তৈরি করার কথা ছিল, তা খসড়া আকারেই পড়ে আছে। নিরাপত্তারক্ষীর সংখ্যা বৃদ্ধি, প্রস্তাবিত জনসংযোগ কেন্দ্র গড়ার আশ্বাসের অবস্থাও তথৈবচ।
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে অস্থি বিভাগের পাশে জনসংযোগ কেন্দ্রের জন্য ঘর বরাদ্দ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে সেখানে এক রোগীর আত্মীয়েরা গিয়ে দেখেন, ঘর বন্ধ। এসএসকেএমে সুপারের ঘরের বাইরে গ্লোসাইন বোর্ড টাঙানো হলেও জনসংযোগ আধিকারিক কে, তা জানাতে পারেননি সেখানকার কর্মীরা। আরজি কর, ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে সেই সমস্যা নেই। তবে অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারদের জনসংযোগ আধিকারিকের দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছে। ফলে কর্মী-ঘাটতি হলে কী হবে, তার কোনও উত্তর নেই!
স্বাস্থ্য ভবনের এক কর্তা এ দিন বলেন, ‘‘নতুন রক্ষী নিয়োগের জন্য অর্থ দফতরের অনুমতি লাগবে। জনসংযোগ কেন্দ্রের জন্য ৫৬টি নতুন পদ তৈরি হয়েছে। আচরণবিধিও খুব শীঘ্রই তৈরি হয়ে যাবে।’’ মিছিলের অনুমতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘পুলিশি পদক্ষেপ বলতে কী বোঝায়, সেটা জুনিয়র ডাক্তারদের বুঝতে হবে। আর নীলরতনে চিকিৎসক-নিগ্রহের ঘটনায় ৩০৭ ধারা (খুনের চেষ্টা) যোগ করার পাশাপাশি সবই করা হয়েছে।’’