ক্ষমাতেও বরফ গলল না, ইস্তফায় অনড় চিকিৎসক

মঙ্গলবার এই ক্ষমা প্রার্থনার পরেও অবশ্য খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসক অনিরুদ্ধ ঘোড়ই নিজের সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, “ক্ষমা তো মহানের ধর্ম। আমি মহান নই। আমার মানসিক অবস্থাও ঠিক নেই। পরে এ নিয়ে ভাবনাচিন্তা করব।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৮ ০৪:১৪
Share:

জোড়হস্ত: ক্ষমাপ্রার্থী প্রিয়াঙ্কা শী। মঙ্গলবার। ছবি: দেবরাজ ঘোষ

‘নিগৃহীত’ চিকিৎসকের চেম্বারে এসে ক্ষমা চাইলেন অভিযুক্ত মহিলা তৃণমূল কর্মী। হাত জোড় করে বললেন, ‘হয়তো আমার ব্যবহারে আঘাত পেয়ে ডাক্তারবাবু ইস্তফা দিয়েছেন। তাই ক্ষমা চেয়ে অনুরোধ করছি যাতে উনি কাজে যোগ দেন।’ পাশে তখন তৃণমূলের জেলা সভাপতি, শহর সভাপতি, পুরপ্রধানরা। মঙ্গলবার এই ক্ষমা প্রার্থনার পরেও অবশ্য খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসক অনিরুদ্ধ ঘোড়ই নিজের সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, “ক্ষমা তো মহানের ধর্ম। আমি মহান নই। আমার মানসিক অবস্থাও ঠিক নেই। পরে এ নিয়ে ভাবনাচিন্তা করব।’’

Advertisement

মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অনিরুদ্ধকে হেনস্থার অভিযোগ উঠেছিল খড়্গপুরের তৃণমূল কর্মী প্রিয়াঙ্কা শী-র বিরুদ্ধে। প্রিয়াঙ্কার ঠাকুমা ট্রমা ইউনিটে ভর্তি ছিলেন। তাঁকে মেডিসিনের মহিলা বিভাগে স্থানান্তরের পরামর্শ দিয়েছিলেন ওই চিকিৎসক। তখনই তাঁকে গালিগালাজ, হেনস্থা করা হয় বলে অভিযোগ। সোমবার তৃণমূল নেতারা হাসপাতালে এসে চিকিৎসক অনিরুদ্ধকে ইস্তফা প্রত্যাহারের কথা বলেন। তারপর এ দিন ছোট ট্যাংরায় চিকিৎসকের নিজস্ব ক্লিনিকে আসেন তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি অজিত মাইতি, শহর সভাপতি রবিশঙ্কর পাণ্ডে, খড়্গপুরের পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার, জেলা নেতা দেবাশিস চৌধুরীরা। তাঁদের সামনেই ক্ষমা চান প্রিয়াঙ্কা। পরে প্রিয়াঙ্কা বলেন, ‘‘দল ক্ষমা চাইতে বলেছিল। সেই মতো কাজ করেছি।” তৃণমূল সূত্রে খবর, দলের চিকিৎসক নেতা শান্তনু সেন এ নিয়ে জেলা নেতৃত্বকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছিলেন।

দুই চিকিৎসকের একজন না থাকায় হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। মঙ্গলবার বন্ধ ছিল মেডিসিনের বহির্বিভাগ। অন্তর্বিভাগে মহিলা মেডিক্যাল, পুরুষ মেডিক্যাল ও আইসোলেশন ইউনিটেও সমস্যা তৈরি হয়েছে। দু’দিন আগে কিডনির সমস্যা ভর্তি হয়েছেন বড় আয়মার তুলসিরাম সাকরে। তাঁর ছেলে সীতেশকুমার সাকরে বলেন, “বাবার চিকিৎসা অনিরুদ্ধ ঘোড়ই করছিলেন। তিনি ইস্তফা দেওয়ায় স্যালাইন দেওয়া ছাড়া আর কিছুই হয়নি।” হাসপাতাল সুপার কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় মানছেন, “মেডিসিন বিভাগে এমনিতেই দু’জন মাত্র চিকিৎসক। একজন না এলে মেডিসিন বিভাগে সমস্যা স্বাভাবিক। কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।”

Advertisement

জেলা স্বাস্থ্য দফতরের আবার দাবি, অনিরুদ্ধর ইস্তফা জমায় পদ্ধতিগত ত্রুটি রয়েছে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরিশচন্দ্র বেরা বলেন, “ওই চিকিৎসকের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে তাতে নিন্দার ভাষা নেই। তবে উনি যে পদ্ধতিতে ইস্তফা দিয়েছেন তা ঠিক নয়। অন্তত তিনমাস আগে ইস্তফা দিতে হয়। তাই ওঁর কাজে আসা উচিত।” অনিরুদ্ধের অবশ্য যুক্তি, “আমার যে মানসিক অবস্থা তাতে চিকিৎসায় ভুল হতে পারে। আর এমন পরিস্থিতি যে হবে তা তিন মাস আগে জানব কী ভাবে!” তবে তিনি বলেন, ‘‘হাসপাতালের প্রয়োজন হলে আমি স্বেচ্ছায় গিয়ে রোগীদের চিকিৎসা করব।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement