ধর্নামঞ্চের দৃশ্য। —নিজস্ব চিত্র।
বুধবার রাত থেকে স্বাস্থ্য ভবনের সামনে জুনিয়র ডাক্তারদের অবস্থান মঞ্চ থেকে প্যান্ডেলের বাঁশ এবং পেডেস্টাল ফ্যান খুলে নিয়ে যেতে দেখা যায় ডেকরেটরের লোকেদের। বৃহস্পতিবার সকালেও সেই ছবি দেখা গিয়েছে। যা থেকে গুজব ছড়ায়, তা হলে কি অবস্থান তুলে দেওয়ার জন্য কারও কাছ থেকে কোনও ‘চাপ’ আসছে? এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে আন্দোলনরত এক জুনিয়র ডাক্তার বলেন, ‘‘বুধবার রাত থেকেই আমরা দেখছি বাঁশ, ত্রিপল ইত্যাদি খুলে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এ নিয়ে নানা কথা রটছে। এগুলি তো সবই জনগণের দেওয়া। এখন কেউ যদি মনে করেন তিনি আর এ বাবদ অর্থ দেবেন না, তা হলে ধর্নাস্থল থেকে নিশ্চয়ই ফ্যান, ত্রিপল খুলে নিয়ে যাওয়া হবে। এ নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই। কিন্তু পুলিশ এখনও সম্পূর্ণ সহযোগিতা করছে আমাদের সঙ্গে। তাঁদের তরফ থেকে কোনও চাপ আসেনি। আমাদের আন্দোলন চলছে।’’
বৃহস্পতিবার জুনিয়র ডক্টর্স ফোরামের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘‘বুধবার রাত থেকে একটি বিভ্রান্তি ছড়ায়, ডেকরেটার্সদের উপর পুলিশি চাপেরও খবর আসে। কথা বলে আপাতত এই সমস্যাগুলি মেটানো গিয়েছে।’’ পুলিশের পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে, এই গুজব সম্পূর্ণ মিথ্যা। পুলিশের তরফে বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি অনীশ সরকার বলেন, ‘‘সমাজমাধ্যমে এমন নানা অভিযোগ উঠে আসছে। কিন্তু পুলিশের তরফে এমন কোনও নির্দেশ দেওয়া হয়নি। আমরা চিকিৎসকদের বলেছি কোনও রকম অভিযোগ থাকলে আমাদের জানাতে। আমরা যথাযথ পদক্ষেপ করব।’’
এরই মধ্যে আবার প্রশ্ন উঠছে, বৃহস্পতিবার জুনিয়র ডাক্তারেরা ফের নিজেদের দাবিগুলি খসড়া আকারে কখন ইমেল মারফত মুখ্যসচিবকে পাঠাবেন? কী কী থাকবে সেই ইমেলে? এখন সেই দিকে তাকিয়েই প্রহর গুনছে সারা রাজ্য।
বুধবার রাতে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পর নবান্ন থেকে বেরিয়ে ডাক্তারেরা জানান, বুধবারের আলোচনা অত্যন্ত হতাশাজনক। সব বিষয়ে শুধুই মৌখিক আশ্বাস মিলেছে। মুখে বলা হলেও দেওয়া হয়নি লিখিত আশ্বাস। বরং চিকিৎসকদের দাবিগুলিকে লিখিত আকারে মেল করতে বলেছেন মুখ্যসচিব। বৃহস্পতিবারই ওই ইমেল পাঠাবেন চিকিৎসকেরা। প্রশাসনের তরফে পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন তাঁরা।
বুধবার বৈঠক থেকে ফিরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে আন্দোলনকারী চিকিৎসক অনিকেত মাহাতো সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “আন্দোলনের ৪০ দিনের মাথায় এসে স্বাস্থ্য সচিবের অপসারণ ও বাকি দুই দাবিতে মুখ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলাম। হাসপাতালগুলিতে নিরাপত্তা, থ্রেট কালচার, ছাত্র সংসদ নির্বাচন, কলেজে কলেজে টাস্ক ফোর্স তৈরি— এই সব দাবি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কার্যবিবরণী নিয়ে মুখ্যসচিবের সঙ্গে কিছু জায়গায় সহমত তৈরি হয়নি। বৈঠকের ‘মিনিট্স’ দেননি মুখ্যসচিব, শুধু মৌখিক আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি আমাদের সব দাবিগুলিকে ফের খসড়া আকারে বৃহস্পতিবার ইমেল মারফত পাঠাতে বলেছেন। আমরা কাজে ফিরতে চাই। কিন্তু কিছু বিষয়ে সমাধানসূত্র বেরোয়নি। যত ক্ষণ না দাবি পূরণ হচ্ছে আমরা কর্মবিরতি চালিয়ে যাব।” আর এক আন্দোলনকারী চিকিৎসক রুমেলিকা কুমার বলেন, “দীর্ঘ বৈঠকে আমাদের সব দাবি মুখ্যসচিব মেনে নিলেও তিনি ‘মিনিট্স’-এ সই করতে রাজি হননি। তিনি জানান, নির্দেশ জারি করতে দু’-এক দিন সময় লাগবে। আমাদের সব দাবি লিখিত আকারে মেল করে জানাতে বলেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর আমরা লিখিত ‘মিনিট্স’ পেয়েছিলাম। কিন্তু আজ বার বার অনুরোধ করা সত্ত্বেও তিনি সই করলেন না। আমাদের যে লাইভ স্ট্রিমিংয়ের দাবি ছিল সেটা যে সঠিক তা বোঝা গেল। আমরা হতাশ। দু’পক্ষ সহমত হতে পারলাম না।”
নবান্নের কাছে কী কী দাবি ছিল আন্দোলনকারীদের? তাঁদের প্রথম দাবি— প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজে জুনিয়র ডাক্তারদের জন্য আলাদা রেস্ট রুম, শৌচাগার, সিসিটিভি, যথাযথ নিরাপত্তাকর্মী, প্রতিটি অন কল রুমে প্যানিক বাটন বসানো, কলেজগুলিতে যৌন হেনস্থা প্রতিরোধে আইসিসি এবং কলেজভিত্তিক টাস্ক ফোর্স গঠন। দ্বিতীয় দাবি, একটি কেন্দ্রীয় ‘রেফারাল সিস্টেম’ গড়ে তোলা, যাতে প্রতিটি হাসপাতালে কোন বিভাগে কোন সময়ে ক’টি বেড খালি আছে, সেই তথ্য সকলে জানতে পারেন। এতে নির্মূল হবে হাসপাতালে ভর্তি নিয়ে গড়ে ওঠা দালালচক্র। এ ছাড়া তাঁদের দাবি, প্রতিটি কলেজে ভয়ের রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। প্রতিটি কলেজে এই ধরনের ঘটনা যাঁরা ঘটিয়েছেন, ঘটিয়ে চলেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গড়তে হবে। এই সব দাবি নিয়েই বৃহস্পতিবার ফের মুখ্যসচিবকে ইমেল করতে চলেছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। এখন কী হয়, সেই দিকেই তাকিয়ে গোটা রাজ্য।