(বাঁ দিকে) ভি সলোমন নিশা কুমার। অভিজিৎ মণ্ডল (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।
সোমবার দুপুরে টালা থানার প্রাক্তন ওসি অভিজিৎ মণ্ডলের সার্ভে পার্কের বাড়িতে উপস্থিত হলেন পুলিশ আধিকারিকেরা। অভিজিতের পরিবারের পাশে রয়েছেন, এই বার্তা দিতেই তাঁর বাড়িতে গেলেন আধিকারিকেরা!
সোমবার দুপুরে অভিজিতের বাড়িতে পৌঁছন পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিকেরা। ছিলেন কলকাতা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (চতুর্থ) ভি সলোমন নিশা কুমার, ডেপুটি কমিশনার (এসএসডি) যাদবপুর বিদিশা কলিথা এবং ডেপুটি কমিশনার (ইস্ট ডিভিশন) আরিশ বিলাল।
শনিবার রাতে আরজি করে চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছেন টালা থানার প্রাক্তন ওসি অভিজিৎ। গ্রেফতার দেখানো হয়েছে আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপকেও। তাঁদের বিরুদ্ধে কর্তব্যে গাফিলতি, টালবাহানার অভিযোগ উঠেছে। এমনকি, তদন্তের অভিমুখও নাকি ঘুরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন তাঁরা! তবে গ্রেফতারির ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও রবিবার পর্যন্ত কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা কোনও বিবৃতি না দেওয়ায় ক্ষোভ জমছিল কলকাতা পুলিশের নিচু তলার কর্মীদের মনে। তাঁরা জানান, গোটা প্রক্রিয়ায় তাঁরা অসন্তুষ্ট। অভিজিৎকে অন্যায় ভাবে গ্রেফতার করেছে সিবিআই। এমনকি রবিবার যখন অভিজিৎকে আদালতে তোলা হয়, তখন সাত জন সাব-ইন্সপেক্টর পদের অফিসার আদালতে উপস্থিত ছিলেন, কিন্তু ছিলেন না কোনও উচ্চপদস্থ কর্মী। এ রকমই নানা অভিযোগ নিয়ে তাঁরা রবিবারই কলকাতা পুলিশের উচ্চ পদস্থ আধিকারিকদের দ্বারস্থ হন। উপর মহল থেকে জানানো হয়, তাঁরা বিষয়টি দেখছেন।
পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (চতুর্থ) ভি সলোমন নিশা কুমার সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘আমার ব্যক্তিগত ভাবে বিশ্বাস, অভিজিতের কোনও দোষ নেই। যত দ্রুত সম্ভব ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন উনি। খুবই স্পর্শকাতর একটি ঘটনা ঘটেছিল। সে ক্ষেত্রে স্বচ্ছ তদন্তের জন্য যা যা করা দরকার, সবই তিনি করেছেন।’’ নিশা কুমার এ-ও জানিয়ে দেন, কলকাতা পুলিশ অভিজিতের পাশে রয়েছে। তাহলে কি ফাঁসানো হচ্ছে অভিজিৎকে? এ বিষয়ে অবশ্য কোনও মন্তব্য করেননি পুলিশকর্তা।
প্রসঙ্গত, শনিবার রাতে চিকিৎসক খুনের ঘটনায় গ্রেফতার হন টালা থানার প্রাক্তন ওসি। আরজি কর-কাণ্ডে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রথম থেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন বিরোধীরা। ছিল তথ্যপ্রমাণ লোপাট, ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগও। এর পরেই রবিবার অভিজিৎকে হেফাজতে নেওয়ার জন্য শিয়ালদহ আদালতে আবেদন করেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা। বিচারকের সামনে গ্রেফতারির সপক্ষে সাত দফা কারণ ব্যাখ্যা করে সিবিআই। সিবিআইয়ের দাবি, মৃত্যুপরবর্তী ঘটনাপ্রবাহের নেপথ্যে বৃহত্তর ‘ষড়যন্ত্র’ থাকতে পারে। আর তাতে জড়িত থাকতে পারেন পুলিশ থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ— সকলেই। ঘটনার দিন অভিযোগ পাওয়ার অনেক পরে এফআইআর দায়ের করা হয়। অভিযোগ, পুলিশের তৎপরতায় তড়িঘড়ি দাহও করে ফেলা হয় দেহ। এমনই নানা প্রশ্নে পুলিশের গাফিলতির কথা তুলে ধরেছিলেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা। সেখানে তথ্যপ্রমাণ লোপাট, দেরিতে এফআইআর দায়ের, ঘটনাস্থল বিকৃত করা— এমন নানা অভিযোগ উঠেছিল অভিজিতের বিরুদ্ধে।