ছবি এএফপি।
এমন যে হতে পারে তা আগেই আঁচ করেছিলেন স্বাস্থ্য ভবনের কর্তারা। পরিসংখ্যান বলছে, আশঙ্কা অমূলক নয়। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, মঙ্গলবার পর্যন্ত ঘরে ফেরা অন্তত সাড়ে চারশো পরিযায়ী শ্রমিকের দেহে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব মিলেছে। বুধবারের পরে তা পাঁচশোর কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে বলে খবর। আক্রান্ত পরিযায়ী শ্রমিকের নিরিখে শীর্ষে রয়েছে মালদহ। পরবর্তী চারটি জেলা হল, হাওড়া, উত্তর দিনাজপুর, মুর্শিদাবাদ এবং পূর্ব বর্ধমান।
এই তথ্য রাজ্য প্রশাসনের কাছে কতখানি উদ্বেগের তা নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্যেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘করোনা পুরো কন্ট্রোল করে দিয়েছিলাম। এখন যদি প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ লোক রাজ্যে ফেরেন, তাঁদের মধ্যে ২৫ শতাংশও পজ়িটিভ হয়, তাহলে তো তা রাজ্যের জন্য দুঃসংবাদ!’’
পরিযায়ী শ্রমিকদের মধ্যে মহারাষ্ট্র ফেরত এ রাজ্যের বাসিন্দাদের শারীরিক পরিস্থিতি সবচেয়ে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিসংখ্যানের দিকে নজর রাখলেই সেই উদ্বেগের কারণ স্পষ্ট হয়ে যাবে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, মালদহের ১২৪ জন আক্রান্তের মধ্যে কুড়িরও বেশি মুম্বই ও সংলগ্ন এলাকায় কর্মরত ছিলেন। বাকিরা রাজস্থান, গুজরাত এবং দিল্লি ফেরত।
স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর, হাওড়ায় ৮৩ জনের মধ্যে ৮২ জন মহারাষ্ট্র এবং এক জন দিল্লি থেকে রাজ্যে ফিরেছেন। উত্তর দিনাজপুরে মুম্বই ফেরত রয়েছেন পনেরোর বেশি। পূর্ব বর্ধমানে ২১ জনের মধ্যে অন্তত ১২ জনের মহারাষ্ট্র যোগ রয়েছে। মুর্শিদাবাদ, উত্তর ২৪ পরগনা, পশ্চিম মেদিনীপুর, পশ্চিম বর্ধমান-সহ বিভিন্ন জেলাতেও এই ছবির ব্যতিক্রম ঘটেনি। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, মোট আক্রান্তের মধ্যে মহারাষ্ট্র ফেরত করোনা পজ়িটিভেরই সংখ্যা প্রায় ২০০।
মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাত, দিল্লি এবং চেন্নাই থেকে আসা শ্রমিকদের ১৪ দিন কোয়রান্টিনে রাখার পরে তাঁদের নমুনা পরীক্ষা করা হবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এ দিন স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের একাংশ জানান, পরিযায়ী শ্রমিকদের মধ্যে যে হারে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে তাতে গ্রাম বাংলায় সংক্রমণ রোধে বিশেষ পদক্ষেপ করা উচিত। বাঁকুড়ায় এ দিন নতুন করে আক্রান্ত ১২ জনের মধ্যে সকলেই পরিযায়ী শ্রমিক। বীরভূমে সংখ্যাটা কুড়ির বেশি। রামপুরহাটের ক্ষেত্রে মুম্বই, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, দিল্লি মিলিয়ে অন্তত ১০ জন রয়েছেন এই তালিকায়।
স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘বিভিন্ন ল্যাবে এখনও প্রচুর পরিযায়ী শ্রমিকের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট আসা বাকি। সেই সব এলে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়বে।’’