নবান্ন। —ফাইল চিত্র।
রাজ্য জুড়ে বাতিল করা হল জেলাস্তরের ছাত্র-যুব উৎসব। শুধু বাতিলই নয়। নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ইতিমধ্যে বরাদ্দ হয়ে যাওয়া টাকা অবিলম্বে ফেরাতে হবে। প্রশাসনের প্রবীণ আধিকারিকদের একাংশ মানছেন, সাম্প্রতিক অতীতে এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। তবে রাজ্যস্তরে এই উৎসব হবে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
যুবকল্যাণ ও ক্রীড়া দফতর এর আগের নির্দেশিকায় জানায়, ১০-১২ জানুয়ারি জেলাস্তরে ছাত্র-যুব উৎসব করতে হবে। সম্প্রতি অনলাইনে একটি বার্তায় জানানো হয়, অনিবার্য কারণবশত উৎসব বাতিল করা হল। জেলা পিছু বরাদ্দ প্রত্যাহারের বিষয়টি জানিয়ে ওই নির্দেশিকায় এ-ও উল্লেখ করা হয়েছে, ‘এই নির্দেশকে অত্যন্ত জরুরিভিত্তিতে দেখতে বলা হচ্ছে’।
প্রশাসন সূত্রে খবর, কিছু জেলায় নির্দেশ পৌঁছেছে। হাতে গোনা কয়েকটি জেলায় তা এখনও পৌঁছয়নি বলে দাবি। যদিও অনলাইনে নির্দেশ পৌঁছেছে কি না, তা সবাই এখনও খতিয়ে দেখেননি। এর ফলে বিভ্রান্তিও তৈরি হয়েছে। কয়েকটি জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, প্রস্তুতি অনেকটাই এগিয়েছিল। ফলে কিছু খরচপাতিও হয়েছে। এখন উৎসব বাতিল হলে পুরো টাকা কী ভাবে ফেরানো হবে, সেটাই বড় মাথাব্যথা।
দক্ষিণবঙ্গের এক জেলার যুব কল্যাণ আধিকারিক এই কথা জানিয়ে বলেন, ‘‘প্রস্তুতি পর্বে কিছু টাকা খরচ হয়েছে। সমস্যা তো হবেই। সরকারি টাকা নেওয়া এবং ফেরত দেওয়ার পদ্ধতিটি আজও জটিল।’’ যুব কল্যাণ দফতর সূত্রের খবর, যে জেলা এক টাকাও খরচ করেছে, তাদের নিজস্ব তহবিল থেকেই সেই টাকা মেটাতে হবে।
কিন্তু কেন উৎসব বাতিল করে বরাদ্দ ফিরিয়ে দিতে বলা হল? এই বিষয়ে যুবকল্যাণ ও ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি।
তবে এই ঘটনার পর শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য তুষার মুখোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, ‘‘আর্থিক সঙ্কটে জর্জরিত রাজ্য। তাই হয়তো এ ভাবে হঠাৎ করে এই উৎসব বাতিল করা হয়েছে।’’ উৎসব বাতিল প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য না করে কেন্দ্রীয় বঞ্চনা নিয়ে বিজেপিকে বিঁধে তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক আশিস চক্রবর্তী বলেন, ‘‘কেন্দ্রের বিজেপি সরকার বাংলার মানুষের হকের টাকা আটকে রেখেছে। কাজ করার পরেও বাংলার মানুষের মজুরি আটকে রেখেছে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে।’’
করোনার সময় থেকে এই উৎসব টানা তিন বছর বন্ধ ছিল। তার আগে অবশ্য জেলায় জেলায় ব্লক থেকে রাজ্যস্তর পর্যন্ত ছাত্র-যুব উৎসব হয়েছে। এ বার শুধুমাত্র জেলাস্তরেই উৎসব হওয়ার কথা ছিল। উৎসবের দিন চূড়ান্তের পর ১৩ ডিসেম্বর অর্থ বরাদ্দ হয়। রাজ্যের স্পষ্ট বার্তা ছিল, সমাপ্তি অনুষ্ঠান অবশ্যই ১২ জানুয়ারি করতে হবে। ১২ জানুয়ারি স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনটিও যথাযথভাবে পালন করতে হবে।
বরাবর তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধীরা ‘খেলা-মেলায়’ টাকা ‘নষ্টের’ অভিযোগ করেছে। এ বারে কৃষি মেলা নিয়ে কোনও আলোচনা এখনও শোনা যায়নি। এখনও পর্যন্ত জঙ্গলমহল উৎসব নিয়েও বিজ্ঞপ্তি জারি হয়নি। এরই মধ্যে স্থগিত হল ছাত্র-যুব উৎসব।