ছিটমহলে যাতে আইনশৃঙ্খলা জনিত কোনও সমস্যা না হয়, সে জন্য আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন করল জেলা প্রশাসন।
রবিবার মেখলিগঞ্জ ও দিনহাটায় ২ কোম্পানি আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। দু’দিনের মধ্যে আরও ৩ কোম্পানি আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হবে। গত ৬ জুন ছিটমহল বিনিময় চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পরে উত্তেজনা ছড়ায় দিনহাটার মশালডাঙা ছিটমহলে। একটি বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। কিছুটা উত্তেজনা রয়েছে মেখলিগঞ্জেও। এই পরিস্থিতিতে আগামী জুলাই মাসে বাংলাদেশে থাকা ভারতীয় ছিটমহলের বাসিন্দারা এ পারে আসতে পারেন। সে ক্ষেত্রে যাতে কোনও রকম উত্তেজনা না ছড়ায় সে দিকে নজর রাখা হচ্ছে। কোচবিহার জেলা পুলিশ সুপার রাজেশ যাদব বলেন, “নিরাপত্তার কোনও খামতি রাখা হবে না। সে দিকে তাকিয়েই সরকার আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন করেছে। ২ কোম্পানি আধা সামরিক বাহিনী এসেছে। আরও আসবে।”
এ দিকে, নিরাপত্তার সঙ্গে উন্নয়নের পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, ৪০১ কোটি টাকায় তিস্তা নদীতে সেতু তৈরি করা হবে। ওই টাকা ইতিমধ্যেই বরাদ্দ হবে। হলদিবাড়ির সঙ্গে মেখলিগঞ্জের যোগাযোগ বাড়াতে দীর্ঘদিন ধরে ওই সেতুর দাবি উঠে এসেছে। কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ মহকুমার অংশ হলদিবাড়ি সেতু না থাকার জন্য পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন। জলপাইগুড়ি হয়ে প্রায় ৮৫ কিলোমিটার ঘুরে বর্তমানে হলদিবাড়িতে যাতায়াত করতে হয়। ওই সেতু প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরত্ব কমে যাবে। এ ছাড়াও বাংলাদেশে থাকা ভারতীয় ছিটমহলগুলি থেকে যে বাসিন্দারা আসবেন তাঁদের জন্য পরিকাঠামো তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ওই বাসিন্দাদের জন্য হলদিবাড়ি, মেখলিগঞ্জ, মাথাভাঙা, শীতলখুচি এবং দিনহাটায় পরিকাঠামো তৈরি করা হবে। বাংলাদেশের ছিটমহলগুলির জন্য রাস্তা, নিকাশি, সেতু-কালভার্ট, সেচ, স্কুল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হবে। ওই জন্য প্রায় ১৭৫ কোটি টাকা বরাদ্দ তৈরি হয়েছে।
পাশাপাশি বাংলাদেশি ছিটমহল থেকে আসা ভারতীয় ছিটমহললের বাসিন্দাদের জন্য প্রথম দুই বছরের জন্য অস্থায়ী পরিকাঠামো তৈরি করা হবে। এর মধ্যে স্থায়ী পরিকাঠামো তৈরি করা হবে। চার তলা বিল্ডিং করে সেখানে ১৬টি পরিবারকে এক সঙ্গে স্থায়ী ভাবে বসবাসের জায়গা করার জন্য পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ভারত সরকার যৌথ ভাবে একটি সমীক্ষা করবে। ওই সমীক্ষার পরে কত জন বাসিন্দা ভারতে আসতে পারেন, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হবে প্রশাসন। আপাতত ভারতীয় ছিটমহলে থাকা প্রায় ৩৭ হাজার বাসিন্দাকে ধরেই পরিকাঠামো তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ওই পরিবারগুলির জন্যও স্কুল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, রাস্তা-সহ এলাকা উন্নয়নের সমস্ত পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তা এবং উন্নয়নের পরিলকল্পনা নিয়ে এখন প্রতিদিন ছিটমহলে যাচ্ছেন পুলিশ-প্রশাসনের আধিকারিকেরা। কোচবিহারের জেলাশাসক পি ঊল্গানাথন বলেন, “ছিটমহলে উন্নয়নের ব্যাপারে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সে হিসেবেই এগোনো হচ্ছে। তিস্তায় সেতু তৈরির কাজ শীঘ্র শুরু করা হবে।”
এ দিকে, ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় কমিটির পক্ষ থেকে প্রশাসনের কাছে আধা সামরিক বাহিনীতে মহিলা জওয়ানদের রাখার জন্য আর্জি জানানো হয়েছে। এ ছাড়াও প্রথমিক চিকিৎসার জন্য একটি টিম ও দমকলকে তৈরি রাখার জন্যও আবেদন করবে তাঁরা। বিনিময় কমিটির নেতা দীপ্তিমান সেনগুপ্ত বলেন, “কিছু দুষ্কৃতী ছিটমহলে গোলমাল করতে সক্রিয় হয়েছে। ইতিমধ্যেই পুলিশ মশালডাঙায় ব্যবস্থা নিয়েছে। আমরা চাই গণ্ডগোল রুখতে সদা সক্রিয় থাকুক প্রশাসন।”