ছবি: সংগৃহীত
বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতা করে মুর্শিদাবাদ জেলায় সিপিএমের ঝুলিতে এসেছিল ৪টি আসন। কিন্তু লোকসভা ভোটের আগে হালের ‘চেনা পথ’ মেনে নবগ্রাম এবং জলঙ্গির সিপিএম বিধায়ক শাসকদলে নাম লেখান। লোকসভা নির্বাচনেও তাদের দখলে থাকা মুর্শিদাবাদ আসন হারাতে হয়েছে। দলের মেজ-সেজ নেতাদের তৃণমূল এমনকি বিজেপি’তে পা বাড়ানোর ঘটনাও আকছার।
এমন দিগভ্রান্ত অবস্থায় সিপিএমের সামনে এনআরসি, নয়া নাগরিকত্ব আইনের মতো ইস্যুর বিরোধীতা করেই যে তারা মুর্শিদাবাদের মন পেতে চাইবে বলাই বাহুল্য। শুধু তাই নয়, এ ব্যাপারে কংগ্রেসকে পাশে পেয়ে দলের নিচুতলার কর্মীদেরও যে মনোবল ফিরছে, জেলা নেতারা অনেকেই তা মনে করছেন। বিজেপি’র বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে বামেরা তাই ২৩, ২৬ কিংবা ৩০ জানুয়ারির মাহাত্ম্য আঁকড়েও এ বার পথে নামতে চাইছেন।
দু’দিন আগে দলের প্রয়াত জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্যের স্মরণসভায় এসে বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু ওই সর্বজনবিদিত তারিখগুলিতেও দলীয় কর্মসুচি রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২৩ জানুয়ারি দেশপ্রেম দিবস হিসেবে পালন করার নির্দেশ দিয়েছে দলের রাজ্য কমিটি। ২৬ জানুয়ারি জেলা জুড়ে সভা সমিতি করে সংবিধানের প্রস্তাবনা পাঠ করে মানুষকে বোঝানোর জন্য বেছে নিয়েছে সিপিএম। সংবিধানের কী অধিকার দেওয়া হয়েছে, বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার কীভাবে সাংবিধানিক অধিকার খর্ব করছে— তা তুলে ধরতে ওই দিনটাই যে যথার্থ, বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান নিজেই তা কর্মীদের বুঝিয়ে গিয়েছেন। ৩০ জানুয়ারি মহাত্মা গাঁধীর মৃত্যু দিবসকে বামেরা পালন করতে চায়— দেশের মানুষকে গাঁধীর হত্যাকারী হিসেবে আরএসএস-বিজেপিকে চিহ্নিত করার দিন হিসেবে।
সে দিন, জেলার বিভিন্ন জায়গায় পথসভা, আলোচনা সভায় এ কথাটাই মানুষের সামনে তুলে ধরে তারা বিজেপি বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য বেছে নিয়েছে বলে দলের অন্দরের খবর। গত কয়েক বছর ধরেই ৩০ জানুয়ারি সিপিএম গণসংগঠন দিবস হিসেবে পালন করে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে সেই চেনা কর্মসূচির তালিকায় যোগ করেছে গাঁধী হত্যার বিষয়টি।
সিপিএমের জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য তুষার দে বলছেন, ‘‘আরএসএস-বিজেপি যত হিংস্র হবে, আমাদের আন্দোলন তত জোরদার হবে। কেন্দ্রে বিজেপি যা করছে, রাজ্যে তৃণমূল তাই করছে। তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপির আঁতাঁতও রাজ্যের মানুষের কাছে ক্রমশ পরিষ্কার হচ্ছে। বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে মানুষকে সে কথাটাই বোঝানো হচ্ছে।’’
জেলা সিপিএমের এক নেতা বলছেন, ‘‘এক সময় রাজ্যে আমরা ৫০ শতাংশের আশপাশে ভোট পেতাম। গত লোকসভা নির্বাচনে তা প্রায় ৭ শতাংশে নেমে এসেছে। তবে ভোটের মাপকাঠিতে সংগঠন সবল বা দুর্বল তা নির্ভর করে না। মানুষ হয়ত ভুল বুঝে আমাদের থেকে মুখ ফিরিয়েছিলেন। তবে এখন সেই ভুলের মাসুল দিয়ে লোকজন আমাদের দিকে ফিরছেন।’’
যা শুনে জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র অশোক দাস বলেন, ‘‘বিজেপির বিরুদ্ধে আমরাও লড়াই করছি। মুখ্যমন্ত্রী বলে দিয়েছেন, বাংলায় এনআরসি হতে দেবেন না। তবে মানুষকে পাশে পেতে সিপিএম যে স্বপ্ন দেখাচ্ছে, তা কখনও পূরণ হবে না।’’