প্রতীকী ছবি।
উত্তরাখণ্ডের দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বহু অভিযাত্রীর প্রাণ কেড়েছে। আবার সেই দুর্যোগই যেন বাঁচিয়ে দিল কলকাতারই এক দল অভিযাত্রীকে।
কলকাতার ওই দলটি পিণ্ডারি হিমবাহ ট্রেকিং করতে গিয়েছিল। ওই দলের সদস্য প্রসূন পাঁজা জানান, সোমবার খারকিয়া থেকে খাটি পৌঁছনোর পথেই তাঁরা দুর্যোগের মুখে পড়েন। তাতে দেড় ঘণ্টার পথ পেরোতে চার ঘণ্টা লেগেছিল। তার উপরে দৃশ্যমানতাও কমে গিয়েছিল। সেই কারণেই খারকিয়ায় থেকে যান তাঁরা। পরের দিন, মঙ্গলবার পিণ্ডারি বেস ক্যাম্প যেতে গিয়ে দেখেন, নদীর উপরে থাকা সেতুটি ভেসে গিয়েছে! তাই ওপারে যাওয়া হয়নি।
অনেকেই বলছেন, সোমবার দুর্যোগের কারণে পথে দেরি না-হলে এবং দৃশ্যমানতা না-কমলে সেতু পেরিয়ে যেত ওই দলটি। সে ক্ষেত্রে কী হত ভেবেই শিউরে উঠছেন অনেকে।
প্রসূনেরাও যে দুর্যোগের মুখে পড়েছিলেন তাও নেহাত কম নয়। তিনি বলেন, ‘‘পিণ্ডারি নদীর পাশের রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলাম। নদী যেন গিলে খেতে আসছিল! রাস্তার একের পর এক ধস নামছে, পাথর খসে পড়ছে। হাঁটতে গিয়ে কাদায় পা পিছলে যাচ্ছিল। ছোট, ছোট নালাগুলি যেন ঝর্ণা হয়ে গিয়েছিল। এমনই নালা পেরোতে গিয়ে আমাদের দলের সদস্য প্রবীর সেনের পা থেকে জুতো খুলে গিয়েছিল। চোখের পলকে জুতোর পাটি জলের তোড়ে ভেসে গেল। মনে হচ্ছিল, এই পথ আর ফুরোবে না!’’
বিপদ থেকে বাঁচলেও পরিবার অবশ্য উত্তরাখণ্ডে বিপর্যয়ের কথা শুনে এই অভিযাত্রীদের পরিবার উৎকণ্ঠায় ভুগছিলেন। তার উপরে ফোনেও সাড়া মিলছিল না। দলের সদস্য শৌভিক সামন্তের মা সুপ্রিয়া সামন্ত আমহার্স্ট স্ট্রিট থানাতেও যোগাযোগ করেছিলেন। ও দিকে, পিণ্ডারি নদীর সেতু ভেসে যাওয়ায় প্রসূনেরা পথ বদলে ফেলেন। বৃহস্পতিবার ঢাকরি নামে একটি জায়গায় পৌঁছন তাঁরা। সেখানেও মোবাইল নেটওয়ার্ক ছিল না। শুক্রবার ঢাকরি টপে উঠে মোবাইলের নেটওয়ার্ক পান। বাড়িতে নিজেদের খবর দেন তাঁরা। চিন্তামুক্ত হন পরিজনেরা। তবে কার্যত মৃত্যুফাঁদ থেকে ফিরে এলেও ট্রেকিংয়ের নেশা ছাড়তে নারাজ প্রসূন, শৌভিকেরা। ফের সুযোগ এলেই রওনা দিতে চান হিমালয়ের দুর্গম পথে।