শুক্রবার সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের প্রস্তাবিত ধর্মঘট নিয়ে উত্তাপ ক্রমশ বাড়ছে। ফাইল চিত্র।
কোনও কোনও সংগঠন চাইছে, স্কুল, মিড-ডে মিল-সহ সব বন্ধ রেখে ধর্মঘট পালন করা হোক। কিছু সংগঠনের বক্তব্য, দাবিদাওয়া থাকতেই পারে। কিন্তু স্কুল বন্ধ রেখে পড়ুয়াদের ক্ষতি করে আন্দোলনে তারা নেই। কাল, শুক্রবার সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের প্রস্তাবিত ধর্মঘট নিয়ে উত্তাপ ক্রমশ বাড়ছে। কর্মক্ষেত্রে ডাকা ধর্মঘট রুখতে সরকার যে কঠোরতর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে, সেটা আঁচ করে পাল্টা প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে আন্দোলনকারী কর্মচারী সংগঠনগুলি। ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী সংগঠনগুলি ধর্মঘট পালনে একজোট হচ্ছে। সরকার কড়া পদক্ষেপ করলে আইনি পথে হাঁটার হুঁশিয়ারিও দিচ্ছে রাজ্য কর্মচারী পরিষদ।
বুধবার সন্ধ্যায় মধ্যশিক্ষা পর্ষদ বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়েছে, ১০, ১১, ১৩, ১৫, ১৯ মার্চ বিভিন্ন ক্যাম্প অফিস থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষার উত্তরপত্র বণ্টনের নির্ধারিত কর্মসূচি অপরিবর্তিত আছে। নির্ধারিত দিনেই প্রধান পরীক্ষকেরা ক্যাম্প অফিস থেকে খাতা পাবেন এবং তাঁদের কাছ থেকে পরীক্ষকেরা তা সংগ্রহ করবেন। মাধ্যমিকের খাতা দেখা সংক্রান্ত কাজকে ‘জরুরিকালীন কাজ’ বলে বিবেচনা করে ওই দিনগুলিতে উপস্থিত থাকতেই হবে।
এর আগে কর্মবিরতি ঠেকাতে লিখিত আদেশনামা প্রকাশ করেছিল নবান্ন। কর্মচারী সংগঠনগুলির মতে, এ বারেও ধর্মঘট ঠেকাতে তেমনই কোনও পদক্ষেপ করতে পারে রাজ্য। তাই তাঁরাও পাল্টা প্রস্তুত হচ্ছেন। ডিএ বা মহার্ঘ ভাতা-সহ বিভিন্ন দাবিতে সরকারি কর্মচারীদের সঙ্গে একজোট হচ্ছেন শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী এবং বিভিন্ন আদালতের কর্মীরাও।
সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের নেতা তথা শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারী বুধবার বলেন, ‘‘শুধু ডিএ-র দাবিতে নয়, আন্দোলন চলছে স্বচ্ছ ভাবে শিক্ষক নিয়োগের দাবিতেও। অভিভাবকেরাও এই আন্দোলন সমর্থন করছেন। তাই বৃহত্তর স্বার্থে এক দিন স্কুল বন্ধ থাকবে। পড়াশোনা বা মিড-ডে মিল বিতরণ— কোনও কাজ হবে না। আমরা ছুটিও নিচ্ছি না।’’
অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক চন্দন মাইতির কথায়, ‘‘রাজ্যের অধিকাংশ প্রধান শিক্ষক এই আন্দোলন সমর্থন করছেন। সে-দিন আমরা স্কুল খুলছি না। প্রধান শিক্ষকেরা স্কুলে যাচ্ছেনও না।’’ নিখিল বঙ্গ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুকুমার পাইন বলেন, ‘‘১০ তারিখ সরকারি কোনও ফতোয়া এলেও পরোয়া করছি না। শিক্ষকদের বলেছি, ধর্মঘটে স্কুলে না-এলেও সার্ভিস ব্রেক হওয়ার কোনও আশঙ্কা নেই।’’ সুকুমারের দাবি, ১০ মার্চ বিভিন্ন শিবিরে মাধ্যমিকের খাতা দেওয়ার কথা। সে-দিন কারা খাতা নিলেন না, তার তালিকা যেন তৈরি না-হয়।
পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির রাজ্য সভাপতি দিব্যেন্দু মুখোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, ‘‘ছাত্রছাত্রীদের ক্ষতি করে, স্কুল বন্ধ রেখে আন্দোলন করার পক্ষে নই আমরা। স্কুল খোলা থাকবে। ক্লাস নেবেন শিক্ষকেরা। দাবি থাকতেই পারে। কিন্তু স্কুল বন্ধ থাকবে কেন?’’
এই আন্দোলনের সঙ্গে রয়েছে রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটি, কর্মচারী পরিষদও। ওই পরিষদের সভাপতি দেবাশিস শীল বলেন, “ধর্মঘটের কারণে সরকার শো-কজ় করলে তার জবাবি বয়ান সমাজমাধ্যমে দেওয়া হবে। তার পরেও যদি রাজ্য সরকার কোনও শাস্তিমূলক পদক্ষেপ করে, তখন তার বিরুদ্ধে আমরা আইনের আশ্রয় নেব।” কনফেডারেশন অব স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ়ের সাধারণ সম্পাদক মলয় মুখোপাধ্যায় জানান, সুপ্রিম কোর্টে ডিএ মামলার রায় বেরোনোর আগে পর্যন্ত তাঁরা সরাসরি এমন কর্মসূচিতে থাকছেন না। তবে নৈতিক সমর্থন থাকবে তাঁদের।
তৃণমূলের অনুগামী রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের প্রবীণ নেতা মনোজ চক্রবর্তী বলেন, “রাজ্যে যখন অ্যাডিনোভাইরাস অসংখ্য শিশুর জীবন কেড়ে নিচ্ছে, তখন কর্মচারীদের উচিত, সরকারের পাশে থেকে তাদের সঙ্গে সহযোগিতা করা।”