পাহাড়ের ঢাল জাল দিয়ে আটকে তৈরি হচ্ছে স্বাস্থ্যকেন্দ্র। নিজস্ব চিত্র
কালিম্পং-এর প্রত্যন্ত পাহাড়ি গ্রাম চুইখিম। সামান্য জ্বর-জারি হলেও চিকিৎসার সুবিধা নেই। সেখানে পাহাড়ের কোল কেটে তৈরি হচ্ছে স্বাস্থ্যকেন্দ্র। সেই উদ্যোগের সঙ্গে ওতপ্রোত জড়িয়ে রয়েছেন কলকাতার নাট্যপরিচালক দেবেশ চট্টোপাধ্যায়।
বছর দুয়েক আগে ছবির শুটিং-এর লোকেশন দেখতে চুইখিম গিয়েছিলেন দেবেশ। পাহাড় জুড়ে ছোট ছোট ‘হোম স্টে’। যে বাড়িতে ছিলেন, তার বৃদ্ধ মালিক চন্দন খোওয়াস আচমকাই অসুস্থ হয়ে পড়েন। শিলিগুড়িতে গিয়ে চিকিৎসার খরচ অনেক। দেবেশ ওঁদের লক্ষাধিক টাকা দিয়েছিলেন। তার মাস চারেক পরে মৃত্যুপথযাত্রী চন্দন তাঁর ছেলেমেয়েকে দিয়ে প্রতিজ্ঞা করিয়ে নেন, দেবেশবাবুর টাকা ফিরিয়ে দিতে হবে। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে ভাইবোনের। দেবেশের কথায়, ‘‘দুই ভাইবোন এসে বলে, বাবা টাকা ফেরত দিতে বলে গিয়েছেন। টাকা তো নেই। কিন্তু জমি আছে। আমাকে সেই জমির কিছুটা নিতে হবে।’’ সেই জমিতেই তৈরি হচ্ছে স্বাস্থ্যকেন্দ্র। দেবেশ বলছেন, ‘‘শুধু চুইখিম নয়, লাগোয়া বরবট, নিমবং-সহ বেশ কয়েকটা গ্রামেই স্বাস্থ্য পরিষেবা নেই। পেটের অসুখ, জ্বরের মতো অসুখেও প্রয়োজনীয় ওষুধ পান না ওঁরা। কলকাতা ও শিলিগুড়িতে চিকিৎসক বন্ধুরা সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন।’’
আপাতত ঠিক হয়েছে, দোতলা বাড়ি তৈরি হবে। প্রয়োজনীয় ওষুধ মজুত থাকবে সেখানে। চন্দনের মেয়ে প্রজিতা এবং আরও কিছু শিক্ষিতা তরুণীকে শিখিয়ে দেওয়া হবে, কোন অসুখে কোন ওষুধ। সপ্তাহান্তে শিলিগুড়ি বা কলকাতা থেকে চিকিৎসকেরা যাবেন।
স্বাস্থ্য কেন্দ্র তৈরিতে সাহায্য করছেন স্থপতি রাজশ্রী চট্টোপাধ্যায়। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক বলেন, ‘‘জায়গাটা ধস এবং ভূমিকম্প প্রবণ। তাই জমির যে দিকে পাহাড়, সে দিকে জাল দিয়ে বেঁধে দেওয়াল বানানো হচ্ছে। ধস আটকাতে বাঁশ গাছও লাগানো হচ্ছে। মালপত্র সবই সমতল থেকে আনাতে খরচ বাড়ে। কিন্তু লোহার পাইপ দিয়ে যে পন্থায় বাড়ি তৈরির পরিকল্পনা আমরা করেছি, তাতে খরচ কমবে।’’ কলকাতার কার্ডিয়োলজিস্ট সুনীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘আমি নিশ্চয় যাব। এ সব এলাকায় ডায়াবেটিস, হৃদরোগ খুব দেখা যায়। কার কী ধরনের চিকিৎসার প্রয়োজন সেটা দেখে বিশেষজ্ঞরা সাহায্য করবেন।’’