দীপঙ্কর ভট্টাচার্য। — ফাইল চিত্র
মেয়েকে বহুজাতিক সংস্থায় চাকরি করতে দিতে আপত্তি নেই সিপিআইএমএল লিবারেশনের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্যের। শনিবার আনন্দবাজার অনলাইনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা জানিয়েছেন তিনি। দীপঙ্করের স্ত্রী কল্পনা উইলসন ভট্টাচার্য এবং কন্যা অনন্যা থাকেন লন্ডনে। সেখানে তাঁদের কর্মকাণ্ডের কথাও জানিয়েছেন ওই নকশাল নেতা।
শনিবারের সাক্ষাৎকারে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির পাশাপাশি উঠে আসে দীপঙ্করের পরিবারের প্রসঙ্গও। তিনি জানিয়ে দেন, তাঁর স্ত্রী কল্পনা উইলসন ভট্টাচার্য এবং মেয়ে অনন্যা বর্তমানে লন্ডন নিবাসী। তিনি বলেন, ‘‘মেয়ে রাজনীতি করে, এখনও বলব না। ওরা প্রবাসী ভারতীয়। স্ত্রী রাজনৈতিক ভাবে আমার সঙ্গে, এই মতাদর্শেই আছে। মেয়ে সম্পর্কে এখনও অতটা বলতে পারব না। তবে যে ভাবে এই প্রজন্ম নিজের মতো করে বামপন্থাকে পাচ্ছে, সে ভাবে ও নিজের মতো করে বামপন্থী হয়ে উঠছে। ও‘রেড পেপার’ নামে একটি পত্রিকার সম্পাদকমণ্ডলীর সম্ভবত কনিষ্ঠতম সদস্য। সম্প্রতি ও স্কটল্যান্ডে ড্রাম বাজিয়েছে সাত ঘণ্টা ধরে। সেই খবর পাই। আমি এখানকার মিটিং মিছিলের খবর দিতে থাকি। ওরাও দিতে থাকে। এর বাইরে ও সক্রিয় বামপন্থী রাজনীতি করবে, না অন্য কিছু করবে সেটা ও স্থির করবে।’’
এই প্রসঙ্গেই তিনি বলেন, ‘‘অনন্যা বহুজাতিক কোনও সংস্থায় যোগ দিলে আমার কষ্ট হবে না। কারণ আমি মনে করি যে, এটা চাকরি, যে কেউ করতে পারেন। আমি জানি, বহুজাাতিক সংস্থাতেও যাঁরা কাজ করেন তাঁরা অনেক সময় সেই কাজ করতে করতে ছেড়ে দেন। অনেক সময় সেখানে থেকে মানুষের অনেক কাজ করেন। আমি মনে করি না, যাঁরা বহুজাতিক সংস্থা, কর্পোরেট বা মূলধারার সংবাদমাধ্যমে কাজ করেন না তাঁরাই বিকল্প কিছু করবেন। কাজ করতে করতে অনেক সময় গতিপথ বদলে যেতে পারে। আসল বিষয় হচ্ছে, দৃষ্টিভঙ্গি, কী আদর্শ নিয়ে চলছি সেটা। মানুষের ভাল করছি কি করছি না সেটা। আমার এক বন্ধুর মেয়ে আইনজীবী। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিয়ে সে বিভিন্ন সংস্থায় কাজ করত। সে ছেড়ে দিয়ে গবেষণাার কাজে যোগ দিয়েছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘ছেড়ে দিলে কেন?’ সে বলল, ‘আমার বিরক্ত লাগছিল যে ওইখানে থেকে ডব্লিউটিও-তে বড় দেশগুলির হয়ে আফ্রিকার ছোট দেশগুলির বিরুদ্ধে মামলা করতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে লড়তে হবে।’ সে কোনও বামপন্থী চেতনার মানুষ নয়। আসলে এই মূল্যবোধটা মানবচেতনা।’’
মেয়ের রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়েও খোলাখুলি কথা বলেছেন দীপঙ্কর। তিনি বলেন, ‘‘আমার মেয়ে যদি এমন একটা মতাদর্শের হয়ে যেত, ভারতে যাদের আজকে আমরা 'ভক্ত' বলি, তার রাজনীতিতে যদি ভক্তি, অন্ধবিশ্বাস, বিভিন্ন সংকীর্ণতা চলে আসত তা হলে দুঃখ পেতাম। এটা হওয়ার কারণ নেই। আমি মেয়ের সঙ্গে থাকতে পারি না। আমাদের মধ্যে সাক্ষাৎ হয় হাতেগোনা। আমরা ইন্টারনেট পরিবার। তবে আমার স্ত্রী ছোটবেলা থেকে মেয়ের সঙ্গে বন্ধুর মতো মিশেছে। এ ক্ষেত্রে মায়ের ভূমিকাটা অনেক বেশি থাকে। ও সেখান থেকে এই চেতনাটা পেয়েছে। সে জন্য আমরা খুবই আনন্দিত। আমাদের ঘনিষ্ঠতার একটা বড় ভিত্তি একই আদর্শ, একই জীবনবোধ, একই মূল্যবোধ। সেই সুতোয় মালা গাঁথা হয়েছে।’’