দু’দিন, দুই মঞ্চ, দুই ছবি।
পূর্বস্থলীতে সিংহাসনে বসেছিলেন দিলীপ ঘোষ। পাশে চেয়ারে শুভেন্দু অধিকারী। তা নিয়ে রাজ্য বিজেপি-তে আলোচনাও হয়েছিল। সেই আলোচনা ঘিরে কোনও বিতর্ক প্রকাশ্যে না এলেও চাপা ক্ষোভ ছিল শুভেন্দু অনুগামীদের মধ্যে। রবিবার যেন সেই ক্ষোভ প্রশমনেরই উদ্যোগ দেখা গেল ঝাড়গ্রামের গোপীবল্লভপুরের বেলিবেড়িয়ায়। মঞ্চে দেখা গেল সিংহাসন আর চেয়ারের ভেদ নেই। পাশাপাশি একই রকম চেয়ারে বসলেন রাজ্য বিজেপির দুই মুখ। রাজ্য বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘‘পূর্বস্থলীতে আয়োজকদের ভুল ছিল। গোপীবল্লভপুরে তা সংশোধন করা হয়েছে।’’
১৯ ডিসেম্বর মেদিনীপুর শহরে অমিত শাহের উপস্থিতিতে শুভেন্দু অধিকারীর যোগদানের মঞ্চে হাজির ছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও। এর পরে দিলীপ ও শুভেন্দু এক সঙ্গে সভা করেন ২২ ডিসেম্বর পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলীতে। সেখানেই রাজ্য সভাপতির বসার জন্য সিংহাসনের ব্যবস্থায় করেছিল স্থানীয় নেতৃত্ব। সেই মতো দিলীপ সিংহাসনেই বসেন। পাশে বিজেপিতে যোগদানের চতুর্থ দিনে তাঁর জন্য নির্দিষ্ট চেয়ারে বসেন শুভেন্দু। অনেকের কাছেই এটা দৃষ্টিকটূ লেগেছিল। নবাগত হলেও শুভেন্দুকে যে বিজেপি বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছে সেটা প্রথম দিনই বুঝিয়ে দেন অমিত। মেদিনীপুর থেকে কলকাতায় ফেরার সময় নিজের চপারে শুভেন্দুকে তুলে নেওয়া ছাড়াও সেই রাতে রাজারহাটের হোটেলে দলের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকেও জায়গা পান রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী।
আরও পড়ুন: আব্বাসের নেতৃত্বেই বাংলায় লড়ব, ফুরফুরা শরিফ থেকে ঘোষণা ওয়াইসির
পূর্বস্থলীতে সিংহাসন-চেয়ার ফারাক নিয়ে শুভেন্দু কোথাও কিছু না বললেও তাঁর অনুগামীদের অনেকেই দলের ভিতরে ও বাইরে সরব হয়েছিলেন। যদিও দিলীপ তাঁর ঘনিষ্ঠদের বলেছিলেন যে এ নিয়ে তাঁর কিছু করার ছিল না। তিনি সিংহাসন নিয়ে যাননি। আয়োজকরাই ওই রকম ব্যবস্থা করেছিলেন। এই বক্তব্যরে প্রেক্ষিতে পাল্টা যুক্তিও উঠেছিল যে, মঞ্চে সিংহাসন রাখা থাকলেও দিলীপ তাতে বসার ক্ষেত্রে আপত্তি জানাতেই পারতেন। সিংহাসন সরিয়ে চেয়ারে বসতেই পারতেন। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, এই নিয়ে যাতে আর জলঘোলা না হয় এবং দলের ভিতরে আলোচনা হলেও তা বাইরে যাতে প্রকাশ না পায় তা নিয়ে সতর্ক ছিল দল। পাশাপাশি এমনটা যাতে আর না হয় সে দিকেও নজর রাখা হবে। সেই ‘নজর’-এরই ছবি কি রবিবার গোপীবল্লভপুরে দেখা গেল!
আরও পড়ুন: বঙ্গে কত আসন পেতে পারে পদ্ম? অভ্যন্তরীণ সমীক্ষা করেছে বিজেপি
রবিবারের সভায় শুভেন্দু এবং দিলীপ দু’জনেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে ছিলেন আক্রমণাত্মক। দু’জনের দাবিও ছিল এক— অখণ্ড মেদিনীপুরের ৩৫টি আসনেই জিতবে বিজেপি। বাংলায় ২০০-র বেশি আসন নিয়ে ক্ষমতায় আসবে বিজেপি। সেই সঙ্গে দিলীপ বলেন, ‘‘নতুন বছরে করোনার মতো তৃণমূলও চলে যাবে। তৃণমূল সংক্রামক ভাইরাস, অনেক ক্ষতি করেছে। মে মাসের পর তৃণমূল আর থাকবে না।’’
রবিবার সমাবেশের গোটা সময়টা অবশ্য মঞ্চে ছিলেন না শুভেন্দু। শুরুতেই বক্তব্য রাখেন তিনি। আর দিলীপ বলতে শুরু করার আগেই মঞ্চ ছেড়ে যান। পরে দিলীপ জানান, অন্য কর্মসূচির জন্য চলে যেতে হল শুভেন্দুকে। প্রসঙ্গত, রবিবার কাঁথিতেও শুভেন্দুর পদযাত্রা ও সভা রয়েছে।