দিলীপ ঘোষ
সবে বন্ধ উঠেছে। এখনও পাহাড়ের মানুষ বুঝতে পারছেন না, সাড়ে তিন মাস বন্ধের পরে হাতে রইল কী?
এই অবস্থায় রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ হঠাৎ কেন পাহাড়-সফরে আসছেন, তা নিয়ে আলোচনা সর্বত্র। পাহাড়ের দলগুলির মধ্যে প্রশ্ন, তা হলে কি রাজনৈতিক ভাবে জমি দখল করাই অন্যতম প্রধান লক্ষ্য দিলীপের? নাকি বিমল গুরুঙ্গের জন্য কোনও বার্তা আনছেন তিনি?
এর আগে পাহাড়ের বিজেপি নেতা মনোজ দেওয়ানকে সংগঠন বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন দলীয় নেতৃত্ব। পাহাড়ের দলগুলির ধারণা, এই কারণে পাহাড়ে আসছেন দিলীপ। পাহাড়ের নেতাদের বক্তব্য, দীর্ঘদিন গা ঢাকা দিয়ে রয়েছেন গুরুঙ্গ। তাঁর জায়গা দখল করতে মরিয়া বিনয় তামাঙ্গ-অনীত থাপারা। তৃণমূল যে তাঁদের পরোক্ষে সমর্থন করছে, তা সকলের কাছেই স্পষ্ট। গোর্খা লিগ, জিএনএলএফ, জন আন্দোলন পার্টি নিজেদের ভিত শক্ত করার চেষ্টা করছে। অর্থাৎ, গুরুঙ্গ গা ঢাকা দিয়ে থাকায় যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে, তা দখলে সকলেই উদগ্রীব।
বিজেপির সূত্রের খবর, এটা মাথায় রেখেই দিলীপ ঘোষ আজ, বুধবার দু’দিনের পাহাড় সফরে আসছেন। আজ কালিম্পং, কাল দার্জিলিং যাবেন তিনি। তার পর যাবেন সিকিমে। দলের দার্জিলিং জেলা সভাপতি (সমতল) প্রবীণ অগ্রবাল বলেন, ‘‘পাহাড়-সমতলের অনেকেই দলে যোগ দেওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন। রাজ্য সভাপতি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।’’ সেই তালিকায় মোর্চা, তৃণমূল, জন আন্দোলন পার্টি, জিএনএলএফ-সহ একাধিক দলের বেশ কয়েক জন নেতা ও তাঁদের অনুগামীরা রয়েছেন, দাবি স্থানীয় বিজেপির।
তাই দল-অনুগামীদের সামলে রাখতে মোর্চা, আলোচনাপন্থী মোর্চা, জাপ, জিএনএলএফ সকলেই যে যাঁর মতো আসরে নেমে পড়েছেন।
যেমন, বিনয়-অনীত গোষ্ঠী হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, বন্ধের সময়ে দিলীপবাবুরা পাহাড়ে পা দেননি। এখন পাহাড়ে ঢোকার মুখে তাঁকে কেউ বাধা দিলে বা কালো পতাকা দেখালে, তার দায় তাঁরা নেবেন না বলে জানান বিনয়রা। জাপ নেতা হরকাবাহাদুর ছেত্রীও বলেছেন, ‘‘দুর্দিনে দেখা মেলেনি। আলোচনা প্রক্রিয়া শুরুর পরে তাঁদের আসার দরকার নেই। এর ফলে গোলমাল বাড়তে পারে।’’
কিন্তু চিন্তা সব থেকে বেশি গুরুঙ্গেরই। কারণ, তাঁর দলের মধ্যেই নেতৃত্বের অভাব রয়েছে। ফলে মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির তিন নেতা কয়েকশো অনুগামীকে নিয়ে বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন বলে খবর পৌঁছেছে গুরুঙ্গের কাছেও। অথচ যত দিন না কেন্দ্র ত্রিপাক্ষিক বৈঠক করছে এবং তাঁকে সেখানে ডাকছে, তত দিন বিজেপিকে চটাতেও পারছেন না তিনি। পাহাড়ে ফিরে আসার ক্ষেত্রে সেটাই তাঁর শেষ খড়কুটো। তাই মঙ্গলবার অডিও-বার্তায় গুরুঙ্গ বলেছেন, ‘‘বিজেপি জোট শরিক। সে জন্য মোর্চার নেতা-কর্মীরা বিজেপির প্রতিনিধিদের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করবেন।’’ একই সঙ্গে তাঁর কটাক্ষ, ‘‘বিনয়-অনীত যে তৃণমূল হয়ে গিয়েছে, তা তো বোঝাই যাচ্ছে!’’
তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌতম দেব অবশ্য দিলীপের সফরের বিরোধিতা করে বলেন, ‘‘পাহাড় এখন ছন্দে ফিরেছে। সেখানে কেউ গিয়ে পরিস্থিতি খারাপ করার চেষ্টা করলে পাহাড়বাসী মেনে নেবেন না।’’ একই সুরে সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এখানে এসে সমস্যা বাড়িয়ে কী হবে! ত্রিপাক্ষিক বৈঠক কী ভাবে হবে, সেটা ওঁরা দেখুন।’’