দিলীপ ঘোষ। পিছনে কলকাতার লেনিনমূর্তি। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
ফের বেফাঁস মন্তব্য করে বিতর্কে জড়ালেন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ। রবিবার নিজের লোকসভা কেন্দ্র খড়্গপুরের ‘চা-চর্চা’ কর্মসূচি থেকে ‘গোলামির চিহ্ন’ মুছে ফেলার হুঁশিয়ারি দিলেন তিনি। দেশের নাম বদল নিয়ে বিতর্কের আবহে ‘ভারত’-এর পক্ষে সওয়াল করে জানালেন, বিজেপি রাজ্যে ক্ষমতায় এলে কলকাতার রাস্তা থেকে ‘গোলামির চিহ্ন উপড়ে ফেলা’ হবে। দিলীপের এই মন্তব্যের পাল্টা দিয়েছে তৃণমূলও। তাদের বক্তব্য, যাঁরা স্বাধীনতা সংগ্রামে ব্রিটিশদের ‘দালালি’ করেছেন, তাঁদের মুখে এ সব কথা শোভা পায় না। দিলীপ রাজনৈতিক প্রাসঙ্গিকতা টিকিয়ে রাখতেই এ সব করছেন বলে দাবি করেছে বাংলার শাসকদল।
গত কয়েক দিন ধরেই জাতীয় রাজনীতিতে দেশের নাম বদল নিয়ে বিতর্ক চলছে। জি২০ বৈঠকেও কেন্দ্রের তরফে ‘ইন্ডিয়া’র বদলে ‘ভারত’কেই তুলে ধরা হয়েছে। এমতাবস্থায় দিলীপ রবিবার বলেন, “ইন্ডিয়া নয়, দেশের নাম শুধুমাত্র ভারত রাখা হবে। যাঁর বা যাঁদের পছন্দ হবে না, তাঁরা বাইরে চলে যেতে পারেন।” যাঁরা ভারতকে পরাধীন করে রেখেছিল, তাঁদের কোনও স্মারক দেশে থাকবে না এ কথা জানিয়ে বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতির সংযোজন, “কলকাতার রাস্তায় বহু ব্রিটিশদের মূর্তি ছিল। এখন ক’টা আছে? একটা দু’টো এখনও রয়েছে। সব তুলে উপড়ে ফেলব, খালি বিজেপি ক্ষমতায় আসুক। বাকিগুলি ভিক্টোরিয়ার মেমোরিয়ালের মিউজিয়ামে রাখা হয়েছে। মিউজিয়ামে থাকার জিনিস, মিউজিয়ামে থাকবে। রাস্তায় গোলামির চিহ্ন থাকবে না। সকালে উঠে বিদেশিদের মুখ দেখবে আমাদের ছেলেমেয়েরা! চলবে না। ওখানে ভগীরথের চিহ্ন থাকবে, শঙ্করাচার্যের মূর্তি থাকবে।” পুরনো দৃষ্টান্ত তুলে ধরে দিলীপ জানান, মাদ্রাজের নামবদল হয়ে চেন্নাই হয়েছে, ঔরঙ্গাবাদ সম্ভাজিরাও হয়েছে। তা হলে দেশের নাম বদলে আপত্তি কিসের, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন খড়্গপুরের বিজেপি সাংসদ।
দিলীপের এই মন্তব্যে নিয়ে তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ শান্তনু সেন বলেন, “ব্রিটিশদের মুচলেকা দিয়েছিলেন সাভারকর। দিলীপবাবুরা তো সেই সাভারকরেরই পুজো করেন। তাই ওঁদের মুখে এ সব শোভা পায় না।” বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’কে ভয় পেয়েই দেশের নামবদলের তোড়জোড় চলছে বলে বিজেপিকে কটাক্ষ করেন তিনি। একই সঙ্গে দিলীপকে নিশানা করে শান্তনু বলেন, “দিলীপবাবু নিজের দলেই ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন। পদ হারিয়ে এখন প্রচারমাধ্যমে ভেসে থাকার জন্য এ সব বেফাঁস মন্তব্য করছেন।” কলকাতার রাস্তায় মূর্তি ভেঙে ফেলা প্রসঙ্গে শান্তনু বলেন, “দিলীপবাবুরা এ সব করার কোনও সুযোগই পাবেন না। কারণ, রাজ্যে তো বাদই দিন, ২০২৪ সালের পর দেশে বিজেপি আর ক্ষমতায় থাকবে না।”