দিল্লি সফর নিয়ে মমতাকে কটাক্ষ দিলীপের। পাল্টা তৃণমূলেরও। —ফাইল চিত্র।
বিজেপি-বিরোধী শক্তিকে একজোট হতে বার্তা দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফলাফল যাই হোক না কেন, সর্বশক্তি দিয়ে বিজেপি-র বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে আহ্বান জানিয়েছেন বিরোধীদের। কিন্তু তৃণমূল নেত্রী মুখে যাই বলুন না কেন, ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে তাঁর দল আদৌ লড়তে পারবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে বলে এ বার মন্তব্য করলেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। কিন্তু মমতার দিল্লি সফরকে যেখানে বিরোধী জোটের সলতে পাকানোর প্রথম পদক্ষেপ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল, সেখানে দিলীপ এই সফরকে ‘পলিটিক্যাল ট্যুরিজম’ বলে কটাক্ষ করেছেন।
জবাবে তৃণমূল মুখপাত্র তাপস রায় বলেন, ‘‘বিজেপি তাদের শোচনীয় পরাজয়ের কারণ বিশ্লেষণ করলে দেখবে, এই ব্যর্থতার জন্য অন্যতম দায়ী দিলীপ ঘোষ। এখন নিজের সভাপতিত্ব বাঁচাতে দিলীপ মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে যা নয় তাই বলে যাচ্ছেন।’’
সোমবারই দিল্লি সফরে রওনা দিচ্ছেন মমতা। সেখানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করার কথা রয়েছে তাঁর। এর পাশাপাশি বিজেপি-বিরোধী নেতৃত্বের সঙ্গেও বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে। সেই নিয়ে রবিবার মুখ খোলেন দিলীপ। কলকাতায় একটি সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, ‘‘বাংলায় আইনশৃঙ্খলার যা অবস্থা, যে ভাবে হিংসা চলছে, বেকারত্ব বাড়ছে, টিকা নিয়ে দুরবস্থা দেখা দিয়েছে, এই হাহাকার থেকে নজর ঘোরাতেই দিল্লি সফর। আমি বলি কী, আপনাকে দিল্লি দেখতে হবে না। আপনি বরং বাংলা দেখুন। মোদীজি দিল্লি দেখে নেবেন। ২০১৯-এও তো দিল্লি গিয়েছিলেন। সমস্ত নেতাদের ডেকে কলকাতায় সভা করে মাছ-ভাত খাইয়েছিলেন। তার পরেও কী রেজাল্ট হয়েছিল, তা সকলে জানেন।’’
দিলীপের দাবি, ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের ১২টি আসন কমে গিয়েছিল। আগামী নির্বাচনে তারা আদৌ লড়তে পারবে কি না, তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘২০১৯-এ ২৮২ থেকে মোদীজি ৩০৩-এ পৌঁছে গিয়েছেন। সেখানে আপনার ১২টি আসন কমে গিয়েছে। বাকি বিরোধীরা নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। অনেকের লোকসভায় কোনও প্রতিনিধিই নেই। দেশের মানুষ মোদীজিকে বিশ্বাস করেন। বিজেপি-কে বিশ্বাস করেন। আপনাদের মতো আঞ্চলিক দলগুলি সাময়িক ভাবে শুধু মানুষকে বিভ্রান্ত করেন। তবে আখেরে কোনও লাভ হয় না। তা ছাড়া ওঁর দলে যে ভাবে খুনোখুনি শুরু হয়েছে, ২০২৪-এ লড়তে পারবে কি না সন্দেহ আছে।’’
দল জিতলেও মমতা নিজে বিধানসভা নির্বাচনে হেরে গিয়েছেন, তাই এখন দিল্লি যাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন বলেও কটাক্ষ করেন দিলীপ। তাঁর কথায়, ‘‘মুখ তৈরি করাটা একটা বাতিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক সময় জ্যোতিবাবুকেও মুখ করে তোলার চেষ্টা হত। তিনি চলে গিয়েছেন। সিপিএম-ও শেষ হয়ে গিয়েছে। মানুষ ওঁর দলকে জেতালেও, মুখ্যমন্ত্রীকে হারিয়েছেন। তাই এখন পদোন্নতি চাইছেন উনি। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। কিন্তু আখেরে কোনও লাভ হবে না।’’
এর প্রেক্ষিতে তাপসের বক্তব্য, ‘‘দিলীপকে মনে রাখতে হবে বিজেপি-র সময় শেষ হয়ে এসেছে। তাই ওরা আমাদের নেত্রীকে ভয় পাচ্ছে। এক জন রাজ্যের তিন বারের মুখ্যমন্ত্রী। তিনি দিল্লিতে যাবেন না তো চার্টার্ড বিমানে করে নন্টেফন্টেরা দিল্লি যাবে?’’
দিল্লি সফরে বিরোধী জোট নিয়ে আলোচনা চান বলে একুশের মঞ্চ থেকেই শরদ পওয়ার, পি চিদম্বরমদের বার্তা দিয়েছিলেন মমতা। দিল্লিতে থাকাকালীন এ নিয়ে বৈঠক ডাকলে তিনি অবশ্যই উপস্থিত থাকবেন বলে জানিয়েছিলেন। সংসদের বাদল অধিবেশন উপলক্ষে বর্তমানে দিল্লিতেই রয়েছেন বিরোধী শিবিরের নেতারা। তাই মমতার সফরে বিরোধী জোট নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। শুধু তাই নয়, বিরোধী জোটে মমতাকেই চালকের আসনে বসানো হবে কি না, তা নিয়েও জল্পনা চলছে।