দিলীপ ঘোষ এবং শুভেন্দু অধিকারী। নিজস্ব চিত্র।
একই রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় থেকেও তাঁরা ‘ভিন্নমুখী’। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এবং রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী মতের ফারাক রাজনীতির কারবারিদের কাছে অপরিচিত নয়। তবে ডব্লিউবিসিএসএর প্রশ্নপত্র বিতর্কে তাঁরা এক পথে মিললেন। রাজ্যের আমলা নিয়োগের প্রশ্নপত্রে রাজনৈতিক প্রশ্ন নিয়ে সোমবার তীব্র সমালোচনা করেছিলেন শুভেন্দু। মঙ্গলবার দিলীপও বললেন, ‘‘যারা গেরুয়াকরণের গল্প বলতেন তারা নিজেরাই এখন পুরোপুরি রাজনৈতিক ক্যাডার তৈরির চেষ্টা করছেন। যারা ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষা দিচ্ছেন তাঁরা যাতে এখন থেকেই পার্টির প্রতি দায়বদ্ধ হন, সে জন্য প্রশ্নপত্রে রাজনৈতিক প্রশ্ন ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’’
ডব্লুবিসিএস প্রসঙ্গে সোমবারই টুইটারে শুভেন্দু লেখেন, ‘ইউপিএসসি পরীক্ষায় পশ্চিমবঙ্গে ভোট পরবর্তী সন্ত্রাস নিয়ে প্রশ্ন থাকায় মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে গিয়েছিল। এখন দেখা যাক ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নিজস্ব প্রকল্পের বিজ্ঞাপন করা নিয়ে রাজ্যের ছদ্ম বিশিষ্টজনেরা কী বলেন।’ তার কয়েক ঘণ্টা পরই মঙ্গলবার দিলীপ বললেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি আগে লাল ছিল এখন সবুজ হয়েছে। যাঁরা এতদিন গেরুয়াকরণের অভিযোগ করতেন তাঁরা পুরোপুরি রাজনৈতিক ক্যাডার তৈরির চেষ্টা করছেন। স্কুলে তো বটেই এমনকি যারা ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষা দিচ্ছেন তাঁরাও যাতে এখন থেকেই পার্টির প্রতি দায়বদ্ধ হন, সে জন্য প্রশ্নপত্রে রাজনৈতিক প্রশ্ন ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’’
রাজ্য বিজেপির দুই বিপরীতপন্থী নেতার এভাবে এক সুরে বাজায় আশাবাদী রাজ্য বিজেপির একাংশ। এর আগে দুই নেতাকে পাশাপাশি বসে কথা বলতে দেখা গিয়েছিল গত ১৬ অগস্ট। রানি রাসমণি রোডে বিজেপির ‘পশ্চিমবঙ্গ বাঁচাও’ কর্মসূচিতে দিলীপ-শুভেন্দুকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। সেখানে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে পাশাপাশি বসে নিজেদের বক্তব্য জানিয়েছিলেন দিলীপ-শুভেন্দু। কিছুটা একই ভাবে তাঁদের মতে মিলতে দেখে গেল ডব্লিউবিসিএস ইস্যুতেও।
ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষার প্রশ্নপত্র নিয়ে গত দু’দিন ধরেই রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়েছে। রাজ্যের সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায়, যে প্রশ্নগুলি নিয়ে বিতর্ক তার মধ্যে একটি আরএসএসের বৈগ্রহিক নেতা বীর সাভারকরকে নিয়ে। প্রশ্নপত্রে জানতে চাওয়া হয়েছিল কোন বিপ্লবী নেতা জেল থেকে মার্সি পিটিশন (ক্ষমা প্রার্থনা) করেন? উত্তরের চারটি বিকল্পের প্রথমেই ছিল ভিডি সাভারকরের নাম। অন্য যে দু’টি প্রশ্নটি নিয়ে শুভেন্দু আপত্তি তোলেন, তার মধ্যে একটি ‘গত ১০ বছরে পশ্চিমবঙ্গে কতগুলি নতুন সরকারি মেডিক্যাল কলেজ চালু হয়েছে?’’ অন্যটিতে জানতে চাওয়া পশ্চিমবঙ্গে সরকারের সবুজসাথী প্রকল্পে কোন শ্রেণিতে পাঠরত ছাত্র-ছাত্রীদের সাইকেল বিতরণ করা হয়? শুভেন্দুর মতোই দিলীপও এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার পুলিশ, প্রশাসন সবই রাজনীতিকরণ করছে তাই এর থেকে বেশি কিছু আশা করাও উচিত হবে না তাদের থেকে।’’
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের প্রশ্ন, তবে কি ধীরে হলেও সুরে মিলছেন দিলীপ-শুভেন্দু? রাজ্য বিজেপি-তে কি শেষপর্যন্ত এই দুই হেভিওয়েটের ভারসম্য প্রতিষ্ঠা হবে?