ফাইল চিত্র।
দল ছেড়ে কোনও বিধায়ক তৃণমূলে যাবেন না বলে দাবি করা তাঁর ভুল হয়েছিল বলে বুধবার স্বীকার নিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। বিধানসভা ভোটের ফল প্রকাশের পর দিলীপবাবু দাবি করেছিলেন, বিজেপি ছেড়ে কোনও বিধায়ক তৃণমূলে যাবেন না। কিন্তু গত জুন মাসে মুকুল রায় বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে ফিরেছেন। চলতি সপ্তাহে সোমবার এবং মঙ্গলবার বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে ফিরেছেন যথাক্রমে বিষ্ণুপুর এবং বাগদার বিধায়ক তন্ময় ঘোষ এবং বিশ্বজিৎ দাস। উত্তরবঙ্গের দলীয় বিধায়কদের নিয়ে এ দিন শিলিগুড়িতে বৈঠক ডেকেছিল বিজেপি। সেখানেও গরহাজির ছিলেন পাঁচ জন বিধায়ক। তাঁদের মধ্যে এক জন অবশ্য কলকাতায় দলের সাংবাদিক সম্মেলনে দিলীপবাবুর সঙ্গে ছিলেন।
এই প্রেক্ষিতে প্রশ্নের জবাবে দিলীপবাবু এ দিন বলেন, ‘‘মুকুলদার মতো নেতার উপরে আমরা ভরসা রেখেছিলাম। তাঁকে আমরা দলের সর্বভারতীয় পদ, প্রথম বার ভোটে জেতার স্বাদ দিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি চলে গেলেন। মুকুলদা’র মতো নেতা এমন করলে রাজনীতির পতন হয়েছে বলতে হয়। তাঁদের দিকে তাকিয়ে বলেছিলাম, আমাদের দল ছেড়ে কেউ যাবেন না। হয়তো আমি কোথাও ভুল প্রমাণিত হয়েছি!’’
সাংবাদিক সম্মেলনে দিলীপবাবুর এই স্বীকারোক্তি আসলে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের একাংশের ভুলের দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ বলে মনে করছেন দলেরই অনেকে। বস্তুত, বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূল-সহ অন্য দল থেকে নেতা এবং জনপ্রতিনিধিদের লাগাতার বিজেপিতে নেওয়া এবং তাঁদের অনেককে প্রার্থী করা নিয়ে আপত্তি ছিল দলের অনেকেরই। বিজেপি সূত্রের খবর, দিলীপবাবুরও ওই কৌশলে সায় ছিল না। যদিও প্রকাশ্যে তিনি তখন প্রতিবাদ না করে উল্টে তার পক্ষে যুক্তি দিতেন। বলতেন, এই ভাবেই দেশের অন্যান্য রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় গিয়েছে। সুতরাং, এটা পরীক্ষিত পথ। বিজেপি সূত্রের আরও খবর, রাজ্য দলের কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী-সহ চার জন ওই কৌশলের পক্ষে ছিলেন। দলের একাংশের ব্যাখ্যা, এ দিন দিলীপবাবু ভুল স্বীকার করে কৈলাসদের কৌশলকে ‘ভুল’ বলে দেগে দিলেন।
তাৎপর্যপূর্ণ হল, সোশ্যাল মিডিয়ায় তন্ময় এবং বিশ্বজিতের ছবি দিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, কারা কীসের বিনিময়ে তাঁদের টিকিট বিক্রি করেছিলেন? যে অ্যাকাউন্ট থেকে এই পোস্ট করা হয়েছে, তা দিলীপবাবুর আপ্ত সহায়ক দেবের বলে আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে। এ বিষয়ে দেবের মন্তব্য জানা যায়নি। তবে এই প্রশ্নের সূত্র ধরে বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথাগত রায় দলের বর্তমান নেতৃত্বকে খোঁচা দিয়ে ফেসবুকে উত্তর দিয়েছেন, ‘‘কামিনী-কাঞ্চন।’’
তবে বিজেপি-র বাকি বিধায়কেরা ঐক্যবদ্ধই আছেন বোঝাতে এ দিন বনগাঁ ও বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত এলাকার ১০ জন দলীয় বিধায়ককে সাংবাদিক সম্মেলনে হাজির করিয়েছিলেন দিলীপবাবু এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তবে তার মধ্যেও হরিণঘাটার বিধায়ক অসীম সরকারকে দেখা যায়নি। তন্ময় এবং বিশ্বজিৎ বিজেপিতে আছেন, নাকি তৃণমূলে গিয়েছেন, তা জানতে চেয়ে মঙ্গলবার তাঁদের চিঠি দিয়েছেন শুভেন্দু। তাঁদের উত্তর দিতে বলেছেন এক সপ্তাহের মধ্যে। শুভেন্দু বলেন, ‘‘গত ১০ বছরে ৫০-এর বেশি বিধায়ক দলবদল করেছেন। কিন্তু তৎকালীন বিরোধী দল তাঁদের বিরুদ্ধে দলত্যাগ-বিরোধী আইন প্রয়োগে সচেষ্ট হয়নি। আমরা কিন্তু সংবিধান এবং গণতন্ত্র রক্ষার্থে শেষ পর্যন্ত লড়ব। পদত্যাগ না করে দলবদল করা রুখতে এবং সে ব্যাপারে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে আমরা যা করার, করব।’’