বিমলেন্দু রায়চৌধুরীর দেহ দান করেন তাঁরই ভাই অমলেন্দু রায়চৌধুরী
দেহদানের প্রস্তাব দিলেও করোনা পরিস্থিতির জন্য সাড়া মেলেনি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালগুলির কাছ থেকে। শেষে স্বাস্থ্য দফতরের হস্তক্ষেপে ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মরনোত্তর দেহ দান করল হুগলির উত্তরপাড়ার একটি পরিবার। বুধবার দেহটি গ্রহণ করে মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, এই প্রথম কেউ দেহ দান করলেন এই হাসপাতালে। এতে কলেজের পড়ুয়াদের গবেষণার কাজে সুবিধা হবে।
বুধবার উত্তরপাড়ার শান্তিনগর এলাকার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত রেলকর্মী বিমলেন্দু রায়চৌধুরী (৮৭)-র দেহ দান ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দান করেন তাঁরই ভাই অমলেন্দু রায়চৌধুরী। পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, অকৃতদার বিমলেন্দু বহু বার আত্মীয় পরিজনের কাছে মরণোত্তর দেহদানের ইচ্ছাপ্রকাশ করেছিলেন। রেলের চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর শান্তিনগরের বাড়িতে একাই থাকতেন তিনি। এলাকার ছেলেমেয়েদের বিনা বেতনে টিউশন পড়াতেন তিনি। মৃত্যুর পর তাঁর ইচ্ছেকে সম্মান জানাতেই বিমলেন্দুর দেহ চিকিৎসা সংক্রান্ত গবেষণার জন্য দান করার সিদ্ধান্ত নেয় তাঁর পরিবার।
তবে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে বেশ সময় লাগে। গত ২০ ফেব্রুয়ারি মানিকতলার জে এন রায় হাসপাতালে মৃত্যু হয় বিমলেন্দুবাবুর। তাঁর মৃত্যুর পর কলকাতার বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজকে দেহ গ্রহণের কথা জানানো হয়। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে কোনও হাসপাতাল সেই প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি। এর পর দেহটি গ্রহণের জন্য রাজ্য স্বাস্থ্য দফতের কাছে আবেদন জানান বিমলেন্দুর ভাইয়ের জামাতা এনআরএস হাসপাতালের চিকিৎসক কৌস্তুভ ডাকুয়া। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতেই স্বাস্থ্য দফতর ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজকে প্রস্তাব দেয় দেহটি নেওয়ার ব্যাপারে। সঙ্গে সঙ্গেই রাজি হয়ে যান কর্তৃপক্ষ। বুধবার দেহদানের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়।
অবসরপ্রাপ্ত রেলকর্মী বিমলেন্দু রায়চৌধুরী
বিমলেন্দুবাবুর ভাই বলেন, ‘‘দাদা চাইতেন মৃত্যুর পর ওঁর দেহ দাহ না করে মেডিক্যাল কলেজের পড়ুয়াদের গবেষণার জন্য দান করা হোক। স্বাস্থ্য দফতরের সহযোগিতায় আমরা দাদার শেষ ইচ্ছে পূরণ করতে পেরেছি।’’ আপাতত দেহটি ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সংরক্ষণ করে রাখা হবে। বিশেষ প্রক্রিয়ায় পাঁচ বছর ওই দেহ সংরক্ষণ করে রাখা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। ডায়মন্ড হারবার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অধ্যক্ষ উৎপল দাঁ বলেন, ‘‘অনেক সময়ই দেহের অভাবে মেডিক্যালের পড়ুয়াদের গবেষণা ব্যাহত হয়। আমাদের কাছে আজকের দিনটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রথম আমাদের কলেজে মরনোত্তর দেহ দান করলেন কেউ। আগামী দিনে দেহ দানে উৎসাহিত করতে মেডিক্যাল কলেজের পক্ষ থেকে ধারাবাহিক প্রচার চালানো হবে।’’