নিজস্ব চিত্র
স্ট্রোকের পর অথর্ব হয়ে গিয়েছেন স্বামী। চলাফেরা, নড়াচড়া সবই বন্ধ। তাই নিজেই উপার্জনের ময়দানে নামতে বাধ্য হয়েছেন দুই সন্তানের মা স্বদেশি বিশ্বাস। তাঁর টোটো চালানোর উপার্জনেই এখন হাঁড়ি চড়ে ধূপগুড়ির বিশ্বাস পরিবারে। দিনে যা টাকা রোজগার তাতে টেনেটুনে চলে যায় চার জনের সংসার।
ধূপগুড়ি খলাইগ্রাম এলাকার বাসিন্দা স্বদেশি। স্বামী কর্মক্ষমতা হারানোয় বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা থেকে ঋণ নিয়েছিলেন। সেই ঋণের টাকাতেই টোটো কিনেছেন। তার পর সেটা নিয়েই নেমে পড়েছেন রাস্তায়। পরিস্থিতির চাপেই ঋণ নিয়ে টোটো কিনে বেরিয়ে পড়তে হয়েছে বলে জানালেন তিনি। স্বদেশির কথায়, ‘‘এক দিন হঠাৎ স্বামী অসুস্থ হয়ে পড়লেন। কাজ করার আর ক্ষমতাই থাকল না। সংসারের দায়িত্ব তাই আমাকেই নিতে হল।’’
অন্য কোনও কাজ ছেড়ে একেবারে টোটোচালক? স্বদেশি বলছেন, ‘‘এক বার ১০০ দিনের কাজ পেয়েছিলাম। দ্বিতীয় বার আর পাইনি। বাধ্য হয়ে তখন টোটো চালানোর সিদ্ধান্ত। শুরুতে অনেকে অনেক কথা বলেছে। গায়ে মাখিনি। এখন আর কেউ কিছু বলে না। দু’পয়সা রোজগার করে স্বামী-সন্তানকে নিয়ে সংসার সামলাচ্ছি। আর কিছু চাই না।’’ একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘পুরুষদের সঙ্গে পাল্লা দিতে হয়। তবু নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে উপার্জন করছি। এটাই অনেক বড় ভরসা।’’
প্রতি দিন সকালে টোটো নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। যাত্রী জুটে যায়। কোনও দিন কম। কোনও দিন বেশি। বৃহস্পতিবার তাঁর টোটোয় সওয়ার হয়েছিলেন রিক্তা দাস। তিনি বলেন, ‘‘ধূপগুড়ি থেকে মোরঙ্গা যাব। ওঁকে দেখে গর্ব হচ্ছে। এখন মহিলারা আর পিছিয়ে নেই। আমরা সবাই পুরুষদের মতো সংসারের দায়িত্ব সমান ভাবে নিতে পারি।’’