শোকস্তব্ধ: পরিবারের ছ’জনকে হারিয়েছেন ওদলাবাড়ির কামেশ্বর সিংহ ও সীতা সিংহ। জলপইগুড়ির সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের মর্গের সামনে। বুধবার। ছবি: সন্দীপ পাল
ধূপগুড়ি থেকে দিল্লি কত দূর? মঙ্গলবার গভীর রাতে জলপাইগুড়ি জেলার এই অঞ্চলে যে দুর্ঘটনাটি ঘটে, তার অভিঘাত গিয়ে সোজা ধাক্কা দিয়েছে দিল্লিতে। বুধবার সকালে প্রথমে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শোকবার্তা, তার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ক্ষতিপূরণের ঘোষণা। তার পরে একে একে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা টুইট করে শোক জানান। তার মধ্যে রাষ্ট্রপতি এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টুইট করেন বাংলায়। পিছিয়ে ছিল না রাজ্যও। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষতিপূরণের ঘোষণা করেন পুরুলিয়া থেকে। একই সঙ্গে শোকবার্তাও পাঠান তিনি।
স্থানীয় মানুষজন বলছেন, রাত থেকেই রাজনৈতিক নেতাদের যাতায়াতে সরগরম হয়ে উঠেছে ধূপগুড়ির ঝুমুর এলাকা এবং তার কয়েক কিলোমিটার দূরে চরচূড়াভাণ্ডার। এই চূড়াভাণ্ডারেই দু’বছর আগে লোকসভা ভোটের প্রাক্কালে সভা করেন প্রধানমন্ত্রী। এ দিন অবশ্য তাঁর শোকবার্তায় সেই সংক্রান্ত কোনও উল্লেখ ছিল না। তিনি সকালেই জানিয়ে দেন, তাঁর ত্রাণ তহবিল থেকে মৃতের পরিবারদের দু’লক্ষ টাকা করে এবং জখমদের ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। দিল্লির একটি সূত্রের দাবি, প্রধানমন্ত্রীর সম্মতিতেই এই তহবিল থেকে অর্থ বরাদ্দ করা হয়। প্রশ্ন উঠেছে, এই শোকবার্তার ঢল বা রাত থেকে রাজনৈতিক নেতাদের আনাগোনার পিছনে মূল ‘চালিকাশক্তি’ কি আসন্ন
বিধানসভা ভোট?
এর পরে পুরুলিয়া সফরের মাঝেই মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, মৃতের পরিবারদের আড়াই লক্ষ টাকা করে, গুরুতর জখমদের ৫০ হাজার টাকা করে এবং অল্পবিস্তর জখমদের ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। তৃণমূল সূত্রের খবর, রাতেই ধূপগুড়িতে চলে যান স্থানীয় বিধায়ক মিতালি রায় এবং আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক সৌরভ চক্রবর্তী। সকালে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এলাকায় যান উত্তরবঙ্গের দুই ‘ওজনদার’ নেতা তথা মন্ত্রী গৌতম দেব ও রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। পরে সেখানে যান রাজ্যের আর এক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। শিলিগুড়িতে ছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনিও ধূপগুড়িতে মৃতদের বাড়িতে যান।
এই ‘প্রতিযোগিতার’ মধ্যে অবশ্য একে অন্যকে কটাক্ষ করতেও ছাড়েননি যুযুধান দুই দলের নেতারা। গৌতম দেব বলেন, “এর আগে কোনও দিন দেখিনি, প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে রাজ্যের জন্য এমন সহায়তা করা হচ্ছে। আমপান বা বুলবুলের সময়ে এমন কিছু করলে ভাল হত।’’ ভোট যে বড় বালাই, সে কথা উল্লেখ করে গৌতম এর পরে বলেন, ‘‘বাংলার মানুষকে বঞ্চিত করে ৫৫ হাজার কোটি টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্র। সেই টাকাটাও দিয়ে দিলে ভাল হত।’’ তাঁর কথায়, ‘‘রাজ্যের থেকে আমরা সব সময়ে সাহায্য করি। এ বারেও তা করা হচ্ছে।” উল্টো দিকে, দিলীপ ঘোষ বলেন, “ভালই তো। প্রতিযোগিতা হচ্ছে। রাজ্য সরকার এ বার কেন্দ্রের আয়ুষ্মান প্রকল্পের টাকাও পরিবারগুলিকে দিক।”
চরচূড়াভাণ্ডারের লোকজন দিনভর রাজনৈতিক ভিড় দেখছেন। একসময়ে কেউ কেউ বলেই ফেললেন, ‘‘সব ভিড় ভোটের ঠেলায়। মরেও শান্তি নেই দেখছি!’’