সন্দেশখালিতে বাইক-বাহিনীর টহল জারি, অভিযুক্ত তৃণমূল

বিজেপির প্রতিনিধি দল ঘুরে গিয়েছে শনিবার। ওই রাতেও তৃণমূলের বাইক বাহিনী সন্দেশখালির হালদারঘেড়ি পাড়া এলাকায় টহল দিয়ে বাড়ি বাড়ি হুমকি দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠল। নতুন করে গোলমাল না ছড়ালেও আতঙ্কের পরিবেশ এখনও কাটেনি এলাকায়। পুলিশ পিকেটও চোখে পড়েনি। পরিবারের পুরুষ সদস্যেরা বেশির ভাগই এলাকা ছাড়া।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৪ ০৩:১২
Share:

বিজেপির প্রতিনিধি দল ঘুরে গিয়েছে শনিবার। ওই রাতেও তৃণমূলের বাইক বাহিনী সন্দেশখালির হালদারঘেড়ি পাড়া এলাকায় টহল দিয়ে বাড়ি বাড়ি হুমকি দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠল। নতুন করে গোলমাল না ছড়ালেও আতঙ্কের পরিবেশ এখনও কাটেনি এলাকায়। পুলিশ পিকেটও চোখে পড়েনি। পরিবারের পুরুষ সদস্যেরা বেশির ভাগই এলাকা ছাড়া।

Advertisement

সাংবাদিকদের সঙ্গে সামনাসামনি কথা বলার সাহস দেখাননি কেউ। কানে উড়ে এল কাতর অনুরোধ, “দোহাই আপনাদের, ফিরে যান। নেতা-নেত্রীরা আসায় উত্তেজনা বাড়ছে। শুরু হয়েছে হুমকি। এরপরে কপালে কী রয়েছে, জানি না।” তৃণমূলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক অবশ্য বলেন, “হুমকির অভিযোগ মিথ্যা। ছোট একটি ঘটনাকে পরিকল্পনামাফিক রাজনীতির রঙ চড়িয়ে দেখাতে চাইছে বিজেপি।” তাঁর দাবি, বিজেপির মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে জবাব দিতে দিন কয়েকের মধ্যেই সন্দেশখালির বহু মানুষ তৃণমূলে যোগ দেবেন।

গত ২৭ মে সন্দেশখালির এই গ্রামে তৃণমূল-বিজেপির সংঘর্ষ বাধে। এক পুলিশ কর্মী-সহ জখম হন দু’পক্ষের ২৫ জন। গ্রামে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন আছে বলে দাবি পুলিশের। ঘটনার কথা জানিয়ে শনিবার মুখ্যসচিবের কাছে লিখিত বিবৃতিতে দেন বিজেপি নেতৃত্ব। তাঁদের দাবি, লোকসভা ভোটের পর থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে আক্রান্ত হচ্ছেন দলের কর্মী-সমর্থকেরা। নতুন করে আরও কিছু অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন জেলা থেকে।

Advertisement

রবিবার ভোরে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ফলতার ফতেপুর শিকদারপাড়ায় আক্রান্ত হন বিজেপি সমর্থকেরা। অভিযোগ, কয়েক জনকে চড়-থাপ্পড় মারা হয়েছে। বাদ পড়েননি অন্তঃসত্ত্বা এক মহিলাও। ৪টি বাড়িতে ভাঙচুর চলেছে। কেউই অবশ্য হাসপাতালে ভর্তি নন।

তৃণমূলের ডাকে সাড়া না দিয়ে বিজেপিতে যোগ দিতে চাওয়ায় শনিবার পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলা ব্লকের দুজিপুরে সিপিএমের লোকাল কমিটির এক নেতা-সহ তিন জনের বাড়িতে ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে শাসক দলের বিরুদ্ধে। রবিবার বিজেপির একটি প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থলে যান।

লোকসভা ভোটের পর থেকে জেলায় জেলায় বিজেপিতে যোগ দেওয়ার প্রবণতা দেখা অব্যাহত। ইদানীং রাজ্য রাজনীতিতে ক্রমশ কোণঠাসা বামেরা। বাম শরিকদল ছেড়ে যাওয়ার ঘটনাই ঘটছে বেশি। মূলত শাসক দলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে নিরাপত্তা খুঁজতেই বিজেপির আশ্রয় খুঁজে নিচ্ছেন তাঁরা। শনিবার দল ছেড়েছেন আরএসপি-র বর্ধমান জেলা সম্পাদক অঞ্জন মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “বিজেপিতে যোগ দেব বলেই দল ছেড়েছি। আমার অনুগামীরাও বিজেপিতে যোগ দেবেন।” বাঁকুড়াতেও সিপিএম, সিটু এবং কংগ্রেস থেকে প্রায় তিনশো জন যোগ দিয়েছেন বিজেপিতে। বীরভূমে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন রামপুরহাটের লালডাঙা গ্রামের শ’দুয়েক সিপিএম কর্মী-সমর্থক। দক্ষিণ ২৪ পরগনার চম্পাহাটিতে প্রায় আড়াইশো বাম কর্মী-সমর্থক বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন বলে দাবি বিজেপির। নদিয়ার কল্যাণী ও চাকদহে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে প্রায় ছ’শো কর্মী-সমর্থক বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। তৃণমূল ছেড়েও বিজেপিতে যাওয়ার কিছু ঘটনা ঘটেছে সম্প্রতি। গত ২৬ মে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন তৃণমূলের নয়াগ্রাম ব্লক সাধারণ সম্পাদক অর্ধেন্দু পাত্র। অভিযোগ, তারপর থেকেই তৃণমূলের লোকজন হামলা চালাচ্ছে। রবিবার নয়াগ্রামে আসে রাজ্য বিজেপির প্রতিনিধি দল।

লোকসভা ভোটে আশাতীত সাফল্যে উৎসাহিত বিজেপি শিবিরে। এ রাজ্যে ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটকে পাখির চোখ করে ঘর গোছাতে চাইছে তারা। তৃণমূলের বিরুদ্ধে হামলা, সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠলেই ঘটনাস্থলে ছুটে যাচ্ছেন দলের নেতা-নেত্রীরা। বিজেপির রাজ্য স্তরের একটি প্রতিনিধি দল রবিবার বর্ধমানের গলসি, বুদবুদ ও ফরিদপুর-লাউদোহা এলাকায় আসেন। তাদের অভিযোগ, গত কয়েক দিনে এই সব এলাকায় তাঁদের কর্মীদের মারধর ও বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে।

শনিবার হাওড়ার জগৎবল্লভপুরের পাতিহাল গ্রামে কয়েক জনের বাড়িতে ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। মহিলাদেরও মারধর করা হয়। পুলিশের একাংশের তাতে মদত ছিল বলে অভিযোগ বিজেপির। রবিবার সিপিএম ও বিজেপির দু’টি প্রতিনিধি দল গ্রামে আসে। দু’দলেরই দাবি, গ্রামে দখলদারি বজায় রাখতে পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে তৃণমূল হামলা চালিয়েছে। হামলার অভিযোগ মানেননি শাসক দলের নেতৃত্ব। অভিযোগ অস্বীকার করেছে জেলা পুলিশও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement