কারখানার কর্তাদের ঘেরাও করেছেন আবাসনের মহিলারা।—নিজস্ব চিত্র।
আবাসন খালি করার বিজ্ঞপ্তিকে ঘিরে বেশ কিছু দিন ধরেই কোন্নগরের একটি রাবার কারখানার মালিক পক্ষের সঙ্গে চাপান-উতোর চলছিল শ্রমিকদের। বৃহস্পতিবার সেই আবাসনে এসে শ্রমিক পরিবারের মহিলাদের বিক্ষোভের মুখে পড়লেন কারখানার দুই কর্তা। চেলা কাঠ, লাঠি, ঝাঁটা নিয়ে তাঁদের প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখানো হয় বলে অভিযোগ। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
শ্রমিকদের অভিযোগ, অনৈতিক ভাবে তাঁদের আবাসন থেকে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। কারখানা কর্তৃপক্ষের দাবি, তাঁরা অনৈতিক কিছু করছেন না। চুক্তিতে কোথাও লেখা নেই যে আজীবন শ্রমিকরা আবাসনে থাকতে পারবেন। তাঁরা মনে করেন, শ্রমিকদের পরিবারের অন্যেরা যে হেতু কারখানার কর্মী নন, তাঁদের কথার কোনও গুরুত্ব নেই। এ দিনের বিক্ষোভের সময়ে প্রচণ্ড গরমে দুই কর্তা অসুস্থ হয়ে পড়েন। মোবাইলে যোগাযোগ করা হলেও কারখানার ম্যানেজিং ডিরেক্টর সুবীর সেন কোনও কথা বলতে চাননি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ফোনে কিছু বলব না।’’
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বেশ কয়েক বছর আগে কোন্নগরের ধর্মডাঙায় রেললাইনের ধারে বড় একটি রাসায়নিক কারখানা ছিল। বেশ কয়েকটি শ্রমিক আবাসন গড়ে ওঠে বছর দশেক আগে। এরপর অবশ্য কারখানাটি ভেঙে তিনটি পৃথক কারখানা গড়ে ওঠে। তার মধ্যে ওই রাবার কারখানাটি একটি। তাদের কেনা জমিতে কয়েকটি আবাসন পড়েছে। দু’টি আবাসনে পঁচিশটিরও বেশি শ্রমিক পরিবার থাকে। এই শ্রমিকেরা পুরনো কারখানাতেই কাজ করতেন। এখন তাঁদের কেউ কেউ রাবার তৈরির কারখানাটিতে কাজ করেন। কেউ আবার কাজ করেন পাশের রং কারখানায়। শ্রমিকদের অভিযোগ, মালিকপক্ষ ওই আবাসন খালি করার জন্য তাঁদের চাপ দিচ্ছেন। এই মর্মে একাধিকবার বিজ্ঞপ্তিও দেওয়া হয়। কয়েক মাস আগে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। ফলে, জল-আলো থেকে বঞ্চিত হন তাঁরা। পরে অবশ্য শ্রমিক সংগঠনগুলির চাপে সন্ধ্যা সাতটা থেকে পাঁচ ঘণ্টা জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু জলের ব্যবস্থা করা হয়নি। প্রায় এক কিলোমিটার দূর থেকে তাঁদের জল আনতে হয়। এ নিয়ে শ্রমিকরা ফুঁসছিলেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকাল ১০টা নাগাদ কারখানার দুই আধিকারিক আবাসনে যান। তখনই তাঁদের ঘিরে বিক্ষোভ শুরু হয়। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠান উত্তরপাড়া থানার আইসি অরিজি দাশগুপ্ত। বেলা পৌনে তিনটে নাগাদ বিক্ষোভ থামে।
কারখানার আইএনটিটিইউসি সংগঠনের সভাপতি অন্বয় চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করছেন। যেন-তেন প্রকারে আবাসন খালি করতে পারলেই ওখানে প্রোমোটিং শুরু হবে বলে আমাদের আশঙ্কা। এ ব্যাপারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ জরুরি।’’ সিপিআইয়ের শ্রমিক সংগঠনের নেতা পার্থসারথি রেজ বলেন, ‘‘কারখানা হাতবদল হওয়ার সময় শ্রমিকদের সঙ্গে চুক্তি হয়, যত দিন তাঁরা চাকরি করবেন, তত দিন যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা সহ তাঁরা আবাসনে থাকতে পারবেন। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ উল্টো পথে হাঁটছেন।” প্রায় একই বক্তব্য জেলা কংগ্রেস নেতা দিলীপ নাথেরও।
এ দিকে, বৃহস্পতিবারেও রিষড়ার জয়শ্রী ইনস্যুলেটর কারখানায় সমস্যা মেটেনি। শ্রমিক অসন্তোষের কারণ দেখিয়ে বুধবার থেকে কারখানায় ‘সাসপেনশন অব ওয়ার্ক’ ঘোষণা করেন কর্তৃপক্ষ। শ্রীরামপুরের ডেপুটি শ্রম কমিশনার অমল মজুমদার জানিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে ডেকে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করা হবে।