আক্রান্ত কর্মী বলছেন, আমি তো মমতার ভক্ত

এ যেন সেমসাইড গোল! তিনি নিজেই তৃণমূলের সরকারি কর্মী সংগঠনের কোর কমিটির সদস্য। দু’বার ভূমি দফতরের তৃণমূল কর্মী সংগঠনের সম্পাদকও। ঘোষিত ভাবেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একনিষ্ঠ সমর্থক। মমতাপন্থী হওয়ার ‘অপরাধে’ বাম আমলে বারবার বিপাকে পড়তে হয়েছে বলেও তাঁর দাবি। ইনি সৌমেন আচার্য। হাওড়ার শিবপুরে সরকারি জায়গা থেকে ফেস্টুন, পতাকা খুলতে গিয়ে আক্রান্ত ভোট কর্মী।

Advertisement

দেবাশিস দাশ

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৪ ০২:৪৯
Share:

এখনও সরকারি সম্পত্তিতে লাগানো রয়েছে তৃণমূলের দলীয় পতাকা। এ রকম দলীয় পতাকা ও ফেস্টুন খুলতে গিয়েই আক্রান্ত হন ভোটকর্মী সৌমেন আচার্য। নিজস্ব চিত্র।

এ যেন সেমসাইড গোল!

Advertisement

তিনি নিজেই তৃণমূলের সরকারি কর্মী সংগঠনের কোর কমিটির সদস্য। দু’বার ভূমি দফতরের তৃণমূল কর্মী সংগঠনের সম্পাদকও। ঘোষিত ভাবেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একনিষ্ঠ সমর্থক। মমতাপন্থী হওয়ার ‘অপরাধে’ বাম আমলে বারবার বিপাকে পড়তে হয়েছে বলেও তাঁর দাবি।

ইনি সৌমেন আচার্য। হাওড়ার শিবপুরে সরকারি জায়গা থেকে ফেস্টুন, পতাকা খুলতে গিয়ে আক্রান্ত ভোট কর্মী। হতভম্ব গলায় বলছেন, “আমি এখনও বিশ্বাসই করতে পারছি না যে নিজের দলের কর্মীদের হাতেই এ ভাবে হেনস্থা হতে হবে।” তাঁর অভিযোগ, যে দলের জন্য এত দিন তিনি গলা ফাটিয়েছেন, তাদের নেতারাই এখন তাঁর গায়ে ‘সিপিএম কর্মী’-র তকমা এঁটে দিয়েছেন।

Advertisement

প্রকাশ্য রাস্তায় হেনস্থা হওয়ার ২৪ ঘণ্টা পরে, বুধবার সৌমেনবাবু বলেন, “সারা জীবন ধরে জাতীয়তাবাদী কর্মী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকার জন্য বামফ্রন্ট আমলে বারবার শোকজ, সাসপেন্ড হয়েছি। মেনে নিয়েছিলাম। মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচন দফতরের কর্মীদের হিংসুটে দৈত্য বলেছেন, তা-ও গায়ে মাখিনি। কিন্তু তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে এর কর্মচারী সংগঠন করার পর, মঙ্গলবারের ঘটনায় মনে হচ্ছে, সত্যিই এ বার সেমসাইডে গোল খেলাম।”

সৌমেনবাবু যে সিপিএম নন, বরং তৃণমূলেরই লোক, মেনে নিয়েছেন দলের নেতা-কর্মীদের একাংশও। ঘটনার পরে প্রকাশ্যে মুখ না খুললেও, বিষয়টি যে সেমসাইড হয়ে গিয়েছে তা স্বীকার করছেন দলের নেতাদের অনেকেই। তৃণমূল সরকারি কর্মচারী সংগঠনের নেতা এবং স্বাস্থ্য সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত সম্পাদক শুকদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সৌমেনবাবু দীর্ঘদিন তৃণমূল সরকারি কর্মচারী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। আমাদের সঙ্গে কয়েকদিন আগে নির্বাচন সংক্রান্ত কোর কমিটির বৈঠকেও যোগ দিয়েছিলেন।”

গত মঙ্গলবার দুপুরে শিবপুরের কাসুন্দিয়া শিবতলায় নির্বাচন দফতরের নির্দেশে সরকারি সম্পত্তি ও বিদ্যুতের খুঁটিতে লাগানো দলীয় পতাকা ও ফেস্টুন খুলতে গিয়ে তৃণমূলের হাতে আক্রান্ত হয়েছিলেন হাওড়ার নির্বাচন দফতরের কর্মী এই সৌমেনবাবু। অভিযোগ, সে দিন ভূমি রাজস্ব দফতরের ওই আপার ডিভিশন ক্লার্ককে গালিগালাজ করা হয়। ধাক্কা দিতে দিতে তাঁকে রাস্তায় ঘোরানো হয়। কেড়ে নেওয়া হয় নির্বাচন কমিশনের ভাড়া করা ভিডিওগ্রাফারের ক্যাসেটও। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে সৌমেনবাবুকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। সন্ধ্যায় তিনি লিখিত ভাবে জেলাশাসক ও পুলিশ কমিশনারের কাছে অভিযোগ করেন। বুধবার দু’জনকে আটক করে পুলিশ।

হাওড়ার নিউ কালেক্টরেট অফিসে সৌমেনবাবু এ দিন প্যান্ট-শার্টের বদলে হালকা আকাশি রঙের পাঞ্জাবি ও পাজামা পরে এসেছিলেন। তিনতলার মডেল কোড অফ কন্ডাক্ট (এমসিসি) সেলের বাইরে দাঁড়িয়ে বলেন, “কালই শুনে গিয়েছিলাম, আজ আর পোস্টার, ব্যানার খুলতে বেরোতে হবে না। তাই এই পোশাকে এসেছি।”

তিনি কি আর এ ধরনের কাজে বার হতে চান?

সৌমেনবাবু বলেন, “পুলিশ সঙ্গে থাকলে অসুবিধা কোথায়? আমরা তো নির্বাচন দফতরের গাইডলাইন মেনেই কাজ করছি। ঘটনার সময়ে পুলিশ ছিল না বলে সমস্যা হয়েছিল!”

পুলিশ ছিল না কেন?

সৌমেনবাবু জানান, ঘটনার সময়ে এমসিসি সেলের ১১ জন কর্মী দু’টি গাড়ি নিয়ে শিবতলায় পৌঁছন। এর পর তাঁরা একটি গাড়ি নিয়ে শিবপুর থানা থেকে পুলিশকর্মীদের আনতে গিয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ আসতেদেরি করায় এই সমস্যা হয়। নির্বাচন দফতরের ওই কর্মীর দাবি, “কাসুন্দিয়া শিবতলায় যে সব দলের পতাকা খোলা হয়েছিল তা নির্বাচন দফতরের নিয়ম মেনেই খোলা হয়েছে। পতাকা খোলার আগে সব ভিডিও করা হয়েছিল। কিন্তু ক্যাসেটটি ছিনতাই করা হয়েছে।”

কিন্তু তৃণমূল যে অভিযোগ তুলেছে, দলের পতাকার অপমান করা হয়েছে, পা দিয়ে মাড়ানো হয়েছে?

সৌমেনবাবু বলেন, “এমন কোনও ঘটনা ঘটেনি। আমার সামনে এ রকম হলে, আমি নিজেই আগে বাধা দিতাম। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা রটনা।” তাঁর বক্তব্য, বিদ্যুতের খুঁটি থেকে তৃণমূলের পতাকা খোলার সময়ই গোলমাল শুরু করেন এলাকার কয়েক জন যুবক। ভিড় জমে যায়। “সেই ভিড় থেকে কয়েক জন আমাদের মারধর করার ইন্ধন দেয়।”

এ দিন এমসিসি সেলের এক পদস্থ অফিসার জানান, মঙ্গলবারের ঘটনার প্রেক্ষিতে ওই দলে যে ১১ জন ছিলেন, তাঁদের দু’দিন অফিসের কাজ করতে বলা হয়েছে। সৌমেনবাবুকেও আপাতত বাইরে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। হাওড়ার জেলাশাসক শুভাঞ্জন দাশ এ কথা অস্বীকার করেছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement