দেবপ্রসাদ সেনী নিজস্ব চিত্র
এসএসসি দুর্নীতিতে গ্রেফতার হয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর নাম করে স্কুলে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে টাকা তোলার অভিযোগ সামনে এসেছে আগেই। কোলাঘাটের অতনু গুছাইতের মতো তেমনই আর এক জনের কথা জানা গেল পূর্ব মেদিনীপুরেরই মহিষাদলে।
দেবপ্রসাদ সেনী ওরফে লুড়কা নামে মাঝবয়সী ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে একাধিক বার পুলিশে অভিযোগ হয়েছে। পার্থ এবং প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের নাম করেই তিনি টাকা তুলতেন বলে অভিযোগ। তবে এত দিন তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ হয়নি। জানা যাচ্ছে, শুক্রবার পর্যন্তও বাড়িতেই ছিলেন দেবপ্রসাদ। শনিবার সকালে আর তাঁকে পাওয়া যায়নি। মোবাইলও বন্ধ। শুক্রবার ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিয়োয় (সত্যতা আনন্দবাজার যাচাই করেনি) অবশ্য দেবপ্রসাদের স্বীকারোক্তি, ‘‘প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন স্কুলে অনেককে চাকরি পাইয়ে দিয়েছি। বিভিন্ন জেলায় এ রকম ২০-২৫ জন শিক্ষকতা করছেন।’’
মহিষাদলের কাপাসবেড়িয়ায় দোতলা পাকা বাড়ি দেবপ্রসাদের। স্ত্রী, ছেলে, বৌমা এবং নাতিকে নিয়ে সংসার। লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে কাউকে তিনি শিক্ষকতার চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন, আবার কেউ কেউ টাকা গুনেও চাকরি পাননি বলে অভিযোগ। পার্থের গ্রেফতারের পরে এমন প্রতারিত কয়েক জন টাকা ফেরত চাইতে দেবপ্রসাদের কাছে যেতেই বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। স্থানীয় নীলোৎপল গিরির দাবি, ‘‘বুধবার টাকা ফেরত চেয়ে ফোন করি। উনি বলেন, পার্থ চট্টোপাধ্যায় জেল থেকে ছাড়া পেলে টাকা ফেরত দেবেন। তারপর শুক্রবার বাড়িতে গিয়ে চেপে ধরি। তখন বলেন, ৩০ জুলাই ১ লক্ষ ৭ হাজার টাকা দেবেন।’’ কিন্তু এ দিন থেকেই দেবপ্রসাদ বেপাত্তা। তাঁর প্রতিবেশী বিমল মাইতিও বলছেন, ‘‘আমার এক বন্ধু ৮ লক্ষ টাকা দিয়েছিল। চাকরি হয়নি। টাকাও ফেরত দেয়নি।’’
জানা যাচ্ছে, কারও থেকে নগদে, আবার কারও থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে চেকে লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়েছিলেন দেবপ্রসাদ। অভিযোগ, ২০১৭ সালে প্রাথমিকে নিয়োগের জন্য মহিষাদলেরই বাসিন্দা কালীশঙ্কর মাইতির থেকে ৪ লক্ষ টাকা নিয়েছিলেন দেবপ্রসাদ। চাকরি না পেয়ে ২০২০ সালে দেবপ্রসাদের বিরুদ্ধে মহিষাদল থানায় লিখিত অভিযোগ করেন প্রতারিত কালীশঙ্কর। যদিও হলদিয়ার এসডিপিও রাহুল পান্ডে বলছেন, ‘‘বিষয়টি অজানা। খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’
দেবপ্রসাদকে শাসকদলের স্থানীয় নেতারা কিন্তু চেনেন। মহিষাদলের তৃণমূল বিধায়ক তিলক চক্রবর্তী নিজেই বলছেন, ‘‘দীর্ঘদিন ধরে লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে স্কুলে চাকরি দেওয়ার কারবার চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। পরীক্ষা না দিয়ে অনেকে তাঁর থেকে বিএড এবং ডিএড কোর্সের শংসাপত্র নিয়েছেন। ওঁর একাধিক বাড়ি, সম্পত্তি রয়েছে বলেও শুনেছি।’’ কাপাসবেড়িয়ার তৃণমূল নেতা তরুণ মণ্ডলেরও বক্তব্য, ‘‘উনি একেবারে দুর্নীতিগ্রস্ত।’’
সব জেনেশুনে চুপ ছিলেন কেন? এ বার বিধায়কের জবাব, ‘‘আমাকে তো কেউ লিখিত অভিযোগ জানাননি। তাই আগ বাড়িয়ে এমন ঘটনার সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করিনি।’’