স্বামী শরণানন্দের স্মরণ সভা ও ভান্ডারা অনুষ্ঠানে ভক্তদের ভিড় বেলুড়মঠে। ছবিঃ দীপঙ্কর মজুমদার।
কারও হাতে শ্বেতপদ্ম, কারও হাতে রজনীগন্ধার মালা। কয়েক হাজার ভক্তের দীর্ঘ লাইন বেলুড় মঠ চত্বরের চারিদিক ঘুরে গিয়ে পৌঁছেছে প্রেসিডেন্ট মহারাজের বাসভবনে। সেখানেই রবিবার সকাল থেকে রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের ষোড়শ অধ্যক্ষ স্বামী স্মরণানন্দকে প্রণাম জানিয়ে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করলেন ভক্তেরা। পরে কেউ গেলেন ভান্ডারায় যোগ দিতে, কেউ গিয়ে বসলেন স্বামী স্মরণানন্দের স্মরণসভা স্থলে।
গত ২৬ মার্চ রাতে প্রয়াত হন স্মরণানন্দ মহারাজ। ২৭ মার্চ রাতে তাঁর অন্তিম সংস্কার হয়। এর পরে এ দিন ভান্ডারা ও স্মরণসভার আয়োজন করা হয়েছিল। অন্য দিকে, বেলুড় মঠের মূল মন্দির তথা শ্রীরামকৃষ্ণদেবের মন্দিরেও ভোরে মঙ্গলারতি দিয়ে শুরু করে বিশেষ পুজো ও হোমের ব্যবস্থা করা হয়। মূল মন্দির সংলগ্ন প্রাঙ্গণের অস্থায়ী মণ্ডপে মঠের সন্ন্যাসী, ব্রহ্মচারীদের ভক্তিগীতি পরিবেশনের মধ্য দিয়ে স্মরণসভার সূচনা হয়। এর পরে শ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত পাঠ ও ব্যাখ্যা, পদাবলী কীর্তন, বাউল গান, ভজন এবং রামকৃষ্ণ মিশন সারদাপীঠের সন্ন্যাসী-ব্রহ্মচারীরা কালী কীর্তন পরিবেশন করেন। স্বামী স্মরণানন্দ যখন সারদাপীঠের সম্পাদক ছিলেন, তখন তিনি সন্ধ্যার সময় অন্য সন্ন্যাসীদের নিয়ে এই কালী কীর্তন গাইতেন। পরবর্তী সময়ে তাঁর হাত ধরেই ওই গান রেকর্ড করে ক্যাসেট বের হয়েছিল।
ওই সভামণ্ডপেই বিকেলে আয়োজিত হয় স্মরণসভার। যার সভাপতিত্ব করেন রামকৃষ্ণ সঙ্ঘের অন্তর্বর্তিকালীন অধ্যক্ষ স্বামী গৌতমানন্দ। বক্তব্য রাখেন স্বামী সুহিতানন্দ, স্বামী ভজনানন্দ, স্বামী সুবীরানন্দ, স্বামী আত্মপ্রিয়ানন্দ, স্বামী জ্ঞানব্রতানন্দ এবং চিকিৎসক গৌর দাস। এ দিন গঙ্গাতীরে যে জায়গায় স্মরণানন্দ মহারাজের অন্তিম সংস্কার করা হয়েছিল, সেই জায়গাটিও লাল গোলাপের পাপড়ির চাদরে ঢেকে তার উপরে সাদা ফুল দিয়ে ওঁ লেখা হয়েছিল। সেখানে গিয়েও প্রচুর ভক্তকে শ্রদ্ধা জানাতে দেখা যায়।
আচমকা কয়েক পশলা বৃষ্টি নামলেও, ভক্তেরা ছিলেন শৃঙ্খলাবদ্ধ। ছাতা মাথায় দিয়েই কেউ অপেক্ষা করেছেন গুরু-প্রণাম লাইনে, কেউ আবার ভান্ডারার লাইনে। যেমন বৃষ্টির মধ্যেও গুরু-প্রণাম লাইনে অপেক্ষারত গড়িয়ার অনন্যা সাহা, দমদমের নীলা নিয়োগীরা বললেন, “আমরা ওঁর কাছে দীক্ষিত। তাঁকে প্রণাম জানানোর লক্ষ্যের কাছে রোদ-বৃষ্টি কোনও কিছুই বাধা নয়।” এ দিন মঠের মা সারদা সেবাব্রত ভবন থেকে প্রায় ৭০ হাজার ভক্তের হাতে ভান্ডারার প্রসাদের বাক্স তুলে দেওয়া হয়।