রবিবার রাতের ঘটনা। সোমবার ধৃতদের সিউড়ির এসিজেএম আদালতে হাজির করানো হলে তাঁদের জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে প্রসেনজিৎবাবু-সহ সাত জনকে তিন দিনের জেল হাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। বাকি দুই স্থানীয় বাসিন্দাকে তিন দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে পেয়েছে পুলিশ।
ডেউচার ঘটনায় ধৃতেরা সিউড়ি আদালতে। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়
যত দিন যাচ্ছে, বীরভূমের ডেউচা-পাঁচামির প্রস্তাবিত কয়লা খনি ঘিরে পারদ ততই চড়ছে।
দু’দিন আগেই ওই খনির বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা ‘বিদ্বেষের রাজনীতি বিরোধী জনমঞ্চ’-এর প্রতিনিধিদের মারধর করে বোলপুরের রিসর্ট থেকে বার করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ বার ডেউচার দেওয়ানগঞ্জে তৃণমূলের এক আদিবাসী নেতা-সহ কয়েক জনকে আটকে রাখা, মারধর করা, খুনের চেষ্টা-সহ একাধিক অভিযোগে গ্রেফতার করা হল বাম নেতা প্রসেনজিৎ বসু, স্থানীয় দুই আদিবাসী-সহ ৯ জনকে।
রবিবার রাতের ঘটনা। সোমবার ধৃতদের সিউড়ির এসিজেএম আদালতে হাজির করানো হলে তাঁদের জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে প্রসেনজিৎবাবু-সহ সাত জনকে তিন দিনের জেল হাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। বাকি দুই স্থানীয় বাসিন্দাকে তিন দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে পেয়েছে পুলিশ। বীরভূমের পুলিশ সুপার নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠী জানান, এলাকায় অশান্তি পাকানো, কয়েক জনকে মারধর করা, তাঁদের আটকে রাখা, পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোড়ার ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগের ভিত্তিতেই মামলা রুজু করে গ্রেফতার করা হয়েছে ৯ জনকে। তবে, এই গ্রেফতারির ঘটনায় এলাকায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে। ঘটনার নিন্দা করে তাঁদের মুক্তির দাবি জানানো হয়েছে বিভিন্ন মহল থেকে।
প্রস্তাবিত কয়লাখনির জন্য সরকারি পুর্নবাসন ও ক্ষতিপূরণের প্যাকেজ ঘোষণা হওয়ার জন্য জমি দিতে ও চাকরির আবেদনে ইতিবাচক সাড়া পড়েছে—প্রশাসন এ কথা জানালেও এলাকায় খনি বিরোধী স্বর জিইয়ে আছে বলে দাবি বাম সহ বিভিন্ন গণসংঠনের। রবিবার একই ভাবে দেওয়ানগঞ্জে খনি বিরোধী একটি প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেছিল ‘বীরভূম জমি জীবন ও প্রকৃতি বাঁচাও মহাসভা’। সেখানেই উপস্থিত ছিলেন প্রসেনজিৎ বসু, মলয় তিওয়ারি, কুণাল দেব-সহ গণ সংগঠনের প্রতিনিধিরা। স্থানীয় আদিবাসী পুরুষ-মহিলাদের একাংশও ছিলেন সভায়।
অভিযোগ, সভার শেষে শাসকদলের আদিবাসী নেতা সুনীল সরেন, মহম্মদবাজার ব্লক যুব তৃণমূল সভাপতি কালীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়, নেতা বাবুলাল টুডুরা দেওয়ানগঞ্জে গেলে তাঁদের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন খনির বিপক্ষে থাকা লোকজন। তখনই সুনীল, বাবুলাল, কালীপ্রসাদ সহ বেশ কয়েক জনকে সভাস্থলে তুলে নিয়ে গিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। বাবুলালের মাথা ফাটে। পরে বিশাল পুলিশ বাহিনী গিয়ে রাত ১০টার পরে তাঁদের উদ্ধার করে। আক্রান্তদের প্রাথমিক চিকিৎসা করানো হয়েছে।
সূত্রের খবর, এর পরেই সুনীল মহম্মদবাজার থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশও স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করে। এর পরেই প্রসেনজিৎদের গ্রেফতার করা হয়। তবে এলাকা সূত্রে জানা গিয়েছে, সভা শেষে আয়োজকদের অতিথিদের গাড়ি আটকানোর চেষ্টা হয়েছিল। তাতেই সংঘাত বাধে। পরে পুলিশ এসে সভায় উপস্থিত লোকেদের বাড়িতে তল্লাশির নামে ‘হেনস্থা’ করেছে বলে স্থানীয় সূত্রে অভিযোগ করা হচ্ছে। যদিও পুলিশ এ কথা মানেনি।
প্রসেনজিৎদের আইনজাবী সোমনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওঁরা সভায় আমন্ত্রিত ছিলেন। যেটুকু তাঁরা আমায় বলেছেন, ঘটনার সময় তাঁরা এলাকাতেই ছিলেন না। যা ঘটেছে সেটা ওঁদের এলাকা থেকে বেরিয়ে আসার পরে।’’ তাঁর দাবি, প্রসেনজিতেরা তাঁকে জানিয়েছেন, রাস্তায় তাঁদের গাড়ি আটকে প্রথমে মহম্মদবাজার থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ব্যক্তিগত বন্ডে জামিন দেওয়া হয়। পরে আবার সিউড়ি থানায় নিয়ে গিয়ে ভোর রাতে গ্রেফতার করা হয়। যদিও এ বিষয়ে জেলা পুলিশের প্রতিক্রিয়া মেলেনি।